ময়মনসিংহ-৮ (ঈশ্বরগঞ্জ) আসনের ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী প্রকৌশলী লুৎফুল্লাহেল মাজেদ বাবু বলেছেন, আয়নাঘর থেকে বেঁচে ফেরত আসতে পারব, তা সে সময়ে কল্পনা করতে পারিনি। কিন্তু এখন দল আমাকে মনোনয়ন দিয়ে নতুন চ্যালেঞ্জ ও দায়িত্ব দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বিগত ১৭ বছর পর বাংলাদেশ গণতন্ত্রের পথে ফিরেছে। পলাতক ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে দেশে ভোট ছিল না। কিন্তু ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসায় অধিকারবঞ্চিত মানুষের মধ্যে ভোট উৎসব শুরু হয়েছে। এই ভোট উৎসবে জনগণের রায়ে বিএনপি সরকার গঠন করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’
রোববার (৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে র্যালিপূর্ব এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সমাবেশে প্রকৌশলী লুৎফুল্লাহেল মাজেদ বাবু বলেন, ‘গত ১৭ বছর গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে অনেকেই হামলা-মামলায় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আপনাদের এই ত্যাগের বিনিময়ে আজ আমি ধানের শীষের প্রার্থী হয়েছি। আগামী দিনে এর চূড়ান্ত ফসল ঘরে তুলতে হলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করতে হবে।’
সমাবেশে আয়নাঘরে নির্যাতনের স্মৃতিচারণ করে প্রকৌশলী লুৎফুল্লাহেল মাজেদ বাবু বলেন, ‘গত বছরের ৩০ জুলাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি দল আমাকে গুলশানের বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। ফ্যাসিস্ট হাসিনার সরকারের পতনের পরদিন ৬ আগস্ট আমি মুক্তি পাই। সিটিটিসির (পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম) একটি দল আমাকে গুলশানের বাসা থেকে তুলে আয়নাঘরে নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে আটকে রেখে আমার ওপর অকথ্য নির্যাতন চালানো হয়।’
তিনি আরও বলেন, গুমসংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারিতে গুমের পর নির্মম নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে অভিযোগও দিয়েছেন তিনি।
লুৎফুল্লাহেল মাজেদ বলেন, ‘আমাকে চোখ বেঁধে বাসা থেকে আয়নাঘরে নিয়ে মাত্র ৩০ মিনিট সময় দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে আমাকে গুলি করে হত্যা করে আন্দোলনকারীদের গুলিতে আমার মৃত্যু হয়েছে বলে চালিয়ে দেওয়ার আলাপ চলছিল। এর ভেতরে বলতে হবে আন্দোলনের জন্য কাদেরকে টাকা দিয়েছি। সে সময় উত্তরা থানা পুড়িয়ে দেওয়ার খবরে তারা কিছুটা পিছপা হয়। এরপর আমাকে প্রচণ্ড নির্যাতন চালায়। নির্যাতন শেষে আমাকে একটি স্টেটমেন্টে স্বাক্ষর করানো হয়, যেখানে বলা হয়—আমার নেতৃত্বে উত্তরা পূর্ব থানা পোড়ানো হয়েছে। সাংবাদিকরা এলে যেন আমি বলি, আমি ফান্ডিং করেছি এবং আরও কয়েকজনের নাম বলতে বলা হয়।’
তিনি বলেন, ‘আয়নাঘর থেকে বেঁচে ফেরত আসতে পারব, তা সে সময়ে কল্পনা করতে পারিনি। কিন্তু এখন দল আমাকে মনোনয়ন দিয়ে নতুন চ্যালেঞ্জ ও দায়িত্ব দিয়েছে। গত ১৭ বছরে ঈশ্বরগঞ্জের সড়ক যোগাযোগে কোনো কাজ হয়নি। জনগণের ভোটে আমি এমপি হতে পারলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাবো। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতকেও অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করা হবে।’
মাজেদ আরও বলেন, ‘তরুণ ও শিক্ষিত বেকারদের জন্য এ অঞ্চলে কর্মসংস্থানের কোনো ব্যবস্থা নেই। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। দক্ষ জনশক্তি গড়তে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। পিছিয়ে থাকা একটি সম্ভাবনাময় জনপদকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হবে।’
সমাবেশে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আমিরুল ইসলাম ভূঁইয়া মনি, যুগ্ম আহ্বায়ক শাহজাহান কবীর সাজু, আব্দুল্লাহ আল মামুন খোকন, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক শরীফ আবেদীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পরে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে প্রকৌশলী লুৎফুল্লাহেল মাজেদ বাবুর নেতৃত্বে একটি বিশাল র্যালি পৌর এলাকার প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।




