শনিবার, ০৯ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


পূর্বাচল (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: আগস্ট ৯, ২০২৫, ০১:০৫ পিএম

রূপগঞ্জে ভয়াবহ জলাবদ্ধতায় পানিবন্দি ৪০ গ্রামের মানুষ

পূর্বাচল (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: আগস্ট ৯, ২০২৫, ০১:০৫ পিএম

নেই বিশুদ্ধ পানি, নেই সহায়তা—রূপগঞ্জ যেন এক ডুবন্ত জনপদ। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

নেই বিশুদ্ধ পানি, নেই সহায়তা—রূপগঞ্জ যেন এক ডুবন্ত জনপদ। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

টানা কয়েক দিনের ভারি বর্ষণে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা, যা স্থানীয়দের কাছে এখন ‘কৃত্রিম বন্যা’ নামে পরিচিত। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন খাল ও ক্যানেলগুলো দীর্ঘদিন ধরে দখল ও দূষণে ভরাট হয়ে থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে উপজেলার কাঞ্চন ও তারাব পৌরসভা, গোলাকান্দাইল, মুড়াপাড়া, ভুলতা ইউনিয়নসহ প্রায় ৪০ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

রাস্তাঘাট, ফসলি জমি, বাজার, স্কুল-মাদ্রাসা, মসজিদ ও ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে পানিতে। অনেক পরিবার ঘর ছেড়ে আত্মীয়স্বজনের বাড়ি বা উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কোমর সমান- এমনকি কোনো কোনো বাড়ির ভেতরে ২-৩ ফুট পানি জমে আছে।

জলাবদ্ধতার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান। অনেকে কর্মস্থলে যেতে পারছেন না। ফলে পরিবারগুলো আর্থিক সংকটে পড়েছে। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে, পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে। শিল্পকারখানার বর্জ্যে পানি কালচে হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, ফলে বসবাসই দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।

গোলাকান্দাইলের ব্যবসায়ী মুজিবুর রহমান বলেন, ‘ঘরে পানি ঢুকে গেছে, দোকান বন্ধ। দুর্গন্ধে থাকা যায় না, আবার সরে যাওয়ারও জায়গা নেই।’

কর্ণগোপ গ্রামের গৃহবধূ শামীমা বেগম জানান, ‘রান্না করতে পারছি না, চুলায় আগুন ধরানোই কষ্টকর। অনেক পরিবার গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে।’

তেঁতলাব এলাকার সুমন রানা বলেন, ‘বর্ষা এলেই আমাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। কোমরপানি পার হয়ে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে হয়। এই পানি থেকে রোগ ছড়াচ্ছে, কিন্তু কেউ নজর দিচ্ছে না।’

এলাকাজুড়ে ডায়রিয়া, চর্মরোগ, অ্যালার্জি, চুলকানি ও পানিবাহিত নানা রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। টিউবওয়েল তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

বাঘমোরচা গ্রামের আরিফ বলেন, ‘একটু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা হয়, বিশুদ্ধ পানির অভাব হয়, পানিতে হাঁটলে রোগ হয়। কিন্তু কোনো প্রশাসন বা দলীয় নেতাকর্মী আমাদের খোঁজ নেয়নি।’

৫ নম্বর ক্যানেলের শিক্ষার্থী ফাহিম বলেন, ‘জলাবদ্ধতার কারণে কয়েক দিন ধরে মাদ্রাসায় যেতে পারছি না। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, খেলাধুলাও করা যাচ্ছে না।’

দক্ষিণবাগের বাসিন্দা আবদুল মান্নান জানান, ‘মসজিদ পানির তলে, নামাজ পড়তে পারছি না। স্কুল-মাদ্রাসা বন্ধ। প্রতিটি ঘরে ডায়রিয়া, আমাশয় ও চুলকানি রোগ দেখা দিয়েছে।’

সমাজকর্মী মহসিন আলী বলেন, ‘গরু-ছাগলের জন্য ঘাস কাটার জায়গা নেই। রান্না করা অসম্ভব- চুলা পানির নিচে, শুকনো লাকড়ি নেই। বেশির ভাগ সাবমারসিবল পাম্প পানির নিচে। ময়লা পানি থেকে ডেঙ্গুর মশা জন্মাচ্ছে। শিশুদের খেলার মাঠ, মসজিদ, স্কুল- সব ডুবে গেছে। স্থানীয় সরকার ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা এগিয়ে এলে এই দুর্দশা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।’

১৯৮৪ সালে ৯০ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী অগ্রণী সেচ প্রকল্প-১’ এর কাজ শুরু হয়। পরে ১৯৯৩ সালে আরও ১০১ কোটি টাকা ব্যয়ে শীতলক্ষ্যার পূর্বপাড়ে প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমি ঘিরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল ফসলি জমি সেচ ও বন্যা থেকে রক্ষা করা। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যেই প্রকল্প এলাকার অধিকাংশ খাল প্রভাবশালী ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের দখলে চলে যায়। কোথাও বালি ভরাট, কোথাও ভবন বা কারখানা নির্মাণে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে পড়ে।

ফলে গত এক যুগ ধরে বর্ষা এলেই রূপগঞ্জে জলাবদ্ধতার ভয়াবহতা বাড়ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, নদীর পানি বেড়ে নয়- খাল ভরাট ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার অব্যবস্থাপনার কারণেই গ্রাম ডুবে যাচ্ছে।

রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘অতীতে খাল বন্ধ করে শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘর নির্মাণ হয়েছে। শিল্পকারখানার বর্জ্য ফেলার কারণে পানি সরতে পারছে না। তারাব এলাকায় তিনটি সেচ পাম্প বসানো হয়েছে। স্থায়ী সমাধানের জন্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি।’

তিনি আরও জানান, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের এখানে স্থায়ী অফিস নেই, ঢাকার কর্মকর্তারা এসে টেন্ডার করেন কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনকে জানান না। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে।’

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, নারায়ণগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী শুভ আহমেদ বলেন, ‘৯টি খালের কিছু অংশ সংস্কার হয়েছে। বাজেট সংকটে কাজ দ্রুত সম্ভব হচ্ছে না। মাঠপর্যায়ের তথ্য নিয়ে কত কিলোমিটার খাল সংস্কার দরকার তা জানানো হবে। বাজেট এলে কাজ করা হবে। অবৈধ দখলদারদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে, শিগগির উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।’

Shera Lather
Link copied!