নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার একটি গ্রামে টিউবওয়েল থেকে গ্যাস নির্গমন শুরু হওয়ার পর কোনো ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই সেটি ভেঙে ফেলার ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ রয়েছে, রংছাতি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান টিউবওয়েলের পাইপ তুলে ফেলে সেখানে মাটি চাপা দেন। এ কাজটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাইযুল ওয়াসীমা নাহাতের নির্দেশে করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
তবে টিউবওয়েল ভেঙে ফেলার পরও গ্যাস নির্গমন বন্ধ হয়নি। সাম্প্রতিক বৃষ্টিপাতের পর ওই স্থান থেকে গ্যাস বুদ্বুদ করে উঠতে দেখা গেছে। এতে আতঙ্কে রয়েছেন বাড়ির মালিকসহ এলাকাবাসী। তারা বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর পদক্ষেপ আশা করছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার রংছাতি ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আবুল কাশেমের বাড়ির টিউবওয়েল থেকে কয়েকদিন আগে বুদ্বুদ শব্দে গ্যাস নির্গমন শুরু হয়। খবরটি ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়দের মধ্যে কৌতূহল সৃষ্টি হয়।
পরে সেখানে কেউ আগুন ধরিয়ে দিলে গ্যাসের তেজস্ক্রিয় শিখা জ্বলে উঠে। ওই আগুনে দুই দিন রান্নাও করা হয়। বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে ইউএনও ফাইযুল ওয়াসীমা নাহাত ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তাদের ঘটনাস্থলে পাঠানোর জন্য অবগত করেন।
বাড়ির মালিক আবুল কাশেম মুঠোফোনে জানান, ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে এসে পর্যবেক্ষণ ও বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন। এরপর ইউএনওর নির্দেশে রংছাতি ইউপি চেয়ারম্যান বাবুল পাঠান লোকজন নিয়ে টিউবওয়েলের পাইপ তুলে ফেলেন এবং মাটি চাপা দেন।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘পাইপ তুলে ফেলল, কিন্তু সমস্যার সমাধান তো হলো না। বরং এখন বৃষ্টির পর আরও বেশি বুদ্বুদ উঠছে। আমরা আতঙ্কে আছি। কোনো দুর্ঘটনা হলে এর দায় কে নেবে?’
এদিকে কলমাকান্দা ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ আশরাফুল ইসলাম বিষয়টি ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। কিছুটা গ্যাস আছে, চাইলে রান্না করা সম্ভব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা পরামর্শ দিয়েছি, যদি গ্যাস ব্যবহার না করা হয়, তাহলে আরও সাত ফুট লম্বা পাইপ লাগানো যেতে পারে। তবে পাইপ তুলে মাটি চাপা দেওয়ার কথা আমরা কাউকে বলিনি।’
রংছাতি ইউপি চেয়ারম্যান বাবুল পাঠান বলেন, ‘ইউএনও মহোদয়ের নির্দেশেই টিউবওয়েলের পাইপ তুলে মাটি চাপা দিয়েছি। আগুন লেগে দুর্ঘটনার আশঙ্কা ছিল।’
অন্যদিকে কলমাকান্দার ইউএনও ফাইযুল ওয়াসীমা নাহাত সাংবাদিকদের বলেন, ‘পাইপ তুলে মাটি চাপা দেওয়ার কথা আমি বলিনি। শুধু বলেছিলাম, যেন কেউ আগুন না ধরায়। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে পরীক্ষার জন্য।’
তবে চেয়ারম্যান সরাসরি ইউএনওর নির্দেশনার কথা স্বীকার করায় তাদের বক্তব্যে স্পষ্ট সাংঘর্ষিকতা দেখা গেছে। এতে প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয়হীনতা এবং গাফিলতির প্রশ্ন উঠেছে।