ঢাকা শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫

১২ ডিসেম্বর আদমদীঘি হানাদার মুক্ত দিবস

আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১২, ২০২৫, ০৯:৪৪ এএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

আজ ১২ ডিসেম্বর। বিজয়ের মাসের এই দিনে বগুড়ার আদমদীঘি থানা পাক হানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে দীর্ঘ নয় মাস বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণের কারণে পাক হানাদার বাহিনী পালিয়ে গেলে ১৯৭১ সালের এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিজয়ের পতাকা উত্তোলন করে আদমদীঘি থানা সদরকে হানাদার মুক্ত ঘোষণা করেন।

তবে, ১২ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত দিবসটি স্থানীয়ভাবে যথাযথভাবে পালন করা হয়নি।

জানা গেছে, আদমদীঘি থানার এলাকায় পাক হানাদার বাহিনী, দেশীয় দোসর রাজাকারদের পাশাপাশি বিহারীদের (অবাঙালি) অত্যাচার ছিল অবর্ণনীয়। ১৯৭১ সালের এপ্রিলের শুরু থেকেই বিভিন্ন গ্রামে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, মানুষ হত্যাসহ ধর্ষণের ঘটনাও ঘটিয়েছিল বিহারী ও পাক হানাদাররা।

সান্তাহার রেলওয়ে জংশন শহরে নয় মাস পর্যন্ত কোনো বাঙালীকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। বাঙালীদের দেখা মাত্রই চালানো হতো নির্মম নির্যাতন। প্রত্যেক বিহারীই ছিল অস্ত্রধারী।

মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার মরহুম এল.কে. আবুল হোসেন, ফজলুল হক, আজিজার রহমান নান্টু, মেজর আব্দুল হাকিম, মুনছুর রহমান, নাজির হোসেন, আব্বাস আলীসহ অন্যান্য কমান্ডারদের নেতৃত্বে বীর মুক্তিযোদ্ধারা আদমদীঘি উপজেলার কুসুম্বী গ্রাম, রেল স্টেশন, নশরতপুর, মথুরাপুর, গাদোঘাট রেলওয়ে ব্রিজ, সান্তাহার রেলওয়ে জংশন শহর ও রানীনগনের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে গেরিলা ও সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন।

এতে বেশ কিছু পাকসেনা ও রাজাকার নিহত হয়। শুরু থেকেই রক্তদহ বিল, বোদলা, পালসা, বিহিগ্রাম, বিষ্ণুপুর, গণিপুর, কদমা, বেজার, থলবড়বরিয়া গ্রাম ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের নিরাপদ এলাকা।

মুক্তিযোদ্ধাদের চারিদিকের আক্রমণে পাক হানাদার বাহিনী পরাজিত হয়ে ১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর সকাল থেকেই আদমদীঘি থানা সদর থেকে সান্তাহার রেলওয়ে জংশন শহরে পালিয়ে যায়। অবশেষে ওইদিন দুপুরে আদমদীঘি থানা সদরে বিজয়ের পতাকা উত্তোলন করে বীর মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার মুক্তি ঘোষণা করেন।

এর দুই দিন পর, ১৪ ডিসেম্বর, সান্তাহারে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র আক্রমণের কারণে সান্তাহার রেলওয়ে জংশন শহরে পাক-হানাদার বাহিনী টিকতে না পেরে নওগাঁ অভিমুখে পালিয়ে যায়।

মহান স্বাধীনতার পূর্ব মুহূর্তে আদমদীঘি উপজেলার শ্বশানঘাটিতে চারজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে শারীরিকভাবে নির্যাতনের পর প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধে এই উপজেলায় সেনা সদস্যসহ মোট ২৫ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।

বর্তমানে নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও সঠিক ইতিহাস জানাতে ১২ ডিসেম্বর আদমদীঘি হানাদার মুক্ত দিবস যথাযথভাবে পালন করার দাবি জানিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা।