ঢাকা শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫

শিশু সাজিদের মৃত্যু, গর্ত খননকারীর বিচার চান বাবা

রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১২, ২০২৫, ১১:০৭ এএম
সাজিদের বাবা রাকিবুল ইসলাম। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

টানা ৩৫ ঘণ্টা শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান শেষে উদ্ধার করা সাজিদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কম ছিল। গভীর গর্তে পড়ে উপর থেকে মাটি ও খড় পড়ে যাওয়ায় শিশুটিকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সাজিদকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ছেলের মৃত্যুর ঘটনায় বিচার চেয়ে শিশুর বাবা রাকিবুল ইসলাম বলেছেন, “আমি ফুটফুটে একটা সন্তান হারিয়েছি। আমার কলিজা হারিয়েছে। গোটা পৃথিবী থাকলেও আমি আর এটা পাব না।”

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহীর তানোর উপজেলার কোয়েলহাট পূর্বপাড়া গ্রামের বাড়ির সামনেই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

রাকিবুল ইসলাম অভিযোগ করেন, “ছেলের মৃত্যুর জন্য গর্ত খনন করা ব্যক্তির অবহেলা দায়ী। যারা হাউজিং করেছে, তারা যদি ঠিকভাবে নিদান দিত, তাহলে এমন ঘটনা ঘটত না। তারা কিছুই দেয়নি। আমি বিচার চাই। প্রশাসন যেটা সঠিক ব্যবস্থা করবে, আমি তাতেই সন্তুষ্ট।”

তিনি আরও বলেন, “এখন আমার কিছু করার নেই। শুধু দোয়া করা ছাড়া। আল্লাহ যা দিয়েছেন, তা আল্লাহই নিয়ে নিয়েছেন। তবে এই দুর্ঘটনার জন্য একমাত্র দায়ী অবহেলা।”

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী জানান, “সরু গর্তে পড়ে শিশু যত নড়াচড়া করেছে, ততই সে আরও নিচে নেমে গেছে। স্থানীয়রা আবেগতাড়িত হয়ে উদ্ধার চেষ্টা করলে মাটি ও খড় পড়ার কারণে শিশুটির জীবিত থাকার সম্ভাবনা কমেছে। আমরা সাজিদকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করি।

নিথর দেহটি হাতে পাওয়ার পর আমরা নিজেও আবেগপ্রবণ হয়ে গিয়েছিলাম, তবে দ্রুত হাসপাতালে পাঠানোর চেষ্টা করেছি। পরে জানতে পারি, তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা তার বাবা-মায়ের প্রতি গভীর সমব্যথী।”

তিনি আরও বলেন, “গর্তে পড়ে যাওয়ার পর শিশুটি যত নড়াচড়া করেছে, ততই আরও নিচে নেমে গেছে। উপরে সামান্য চাপও সেখানে ভয়াবহ হয়ে যায়। এমন গভীরে অক্সিজেন কম থাকে, সামান্য নড়াচড়াতেও শিশুটি আরও তলিয়ে যায়—এটাই বাস্তবতা।”

উদ্ধার অভিযানে একাধিক সীমাবদ্ধতা ছিল, তবে সকলেই সম্মিলিতভাবে কাজ করেছেন। তিনি ইউএনও ও ইউএস বাংলার সহযোগিতার কথাও উল্লেখ করেছেন।

ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা আরও জানান, “শুরুতেই কিছু ভুল হয়ে গেছে, যা পরে উদ্ধারকাজকে আরও কঠিন করেছে। আমাদের আসার আগে গর্তে মাটি ও খড় পড়ে যায়। সার্চ ক্যামেরা ব্যবহার করলেও শুধু মাটি দেখা যায়। এ ধরনের ছোট অব্যবস্থাপনা বড় দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।”

তিনি জনগণকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “যে সব স্থানে এ ধরনের অব্যবস্থাপনা রয়েছে, সরকার ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো তা দেখবে। তবে কমিউনিটি পর্যায়ে সচেতনতা বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।”

গত বুধবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে রাজশাহীর তানোরের পাচন্দর ইউনিয়নের কোয়েলহাট পূর্বপাড়ায় সাজিদ গভীর নলকূপের পরিত্যক্ত গর্তে পড়ে নিখোঁজ হয়। প্রায় ৩৫ ঘণ্টার অভিযান শেষে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ৫০ ফুট মাটি খনন করে শিশুটিকে উদ্ধার করেন।

মারা যাওয়া সাজিদ কোয়েলহাট পূর্বপাড়ার রাকিবুল ইসলামের ছেলে। সাজিদকে হারিয়ে পরিবার শোকে কাতর, আর স্থানীয় মানুষ ও কমিউনিটি তার মৃত্যুতে সমানভাবে ব্যাথিত।