ঢাকা শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫

বিলুপ্তির পথে নবীনগরের বিপিন মাঝির পুতুল নাচ

নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১২, ২০২৫, ১১:৩৬ এএম
পুতুল নাচ। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের শিক্ষার্থীদের পুতুল নাচ সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে বাংলাদেশের সংস্কৃতি প্রেমীদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। শিক্ষার্থীরা প্রশিক্ষক মহেক জিয়ার তত্ত্বাবধানে গানের তালে মানব পুতুল নাচের ভূমিকায় অভিনয় করেন।

উপমহাদেশে হাতে তৈরি সুঁই-সুতা, কাপড় ও স্প্রিং-কাঠের পুতুল নাচের জনক হিসেবে পরিচিত বিপিন দাস বা বিপিন মাঝির জন্ম ১৮৭৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর বর্তমান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে।

ছোটবেলা থেকেই তিনি পুতুলকে মানুষের মতো হাঁটাচলা, কথা বলা এবং আবেগ প্রকাশের সক্ষমতা দিতে চেয়েছিলেন। এ চেষ্টার ফলেই জন্ম নেয় তার দল, “পৌরাণিক কাহিনী পুতুল শো”, যা ভারতের পাশাপাশি পৃথিবীর ২৭টি দেশে প্রদর্শিত হয়েছে।

বিপিন মাঝি বাদ্যযন্ত্রেও পারদর্শী ছিলেন। সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ ও ওস্তাদ আফতাব উদ্দিন খাঁর সান্নিধ্য এবং স্থানীয় জমিদার গোবিন্দ রায়ের আঙিনায় শখের বাদ্যযন্ত্র বাজানোর অভিজ্ঞতা তার শিল্পগুণকে সমৃদ্ধ করেছে।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার পুতুল নাচের প্রশংসা করেছেন, সাহিত্যিক মানিক বন্দোপাধ্যায় তার বই লেখার আগে দীর্ঘদিন বিপিন মাঝির সঙ্গে ছিলেন।

বিপিন মাঝি শুধুমাত্র বিনোদন নয়, ধর্ম, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ইতিহাস ও সচেতনতামূলক বার্তাও পুতুল নাচের মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। তার চার পুত্র ও দুই কন্যা, বিশেষ করে ওস্তাদ গোবিন্দ দাস ও ওস্তাদ কবি বাদল দাস, পুতুল নাচের মাধ্যমে সুনাম অর্জন করেছেন।

বর্তমানে বাংলাদেশ টেলিভিশনের শিশুতোষ সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানে “সিসিমপুর” পুতুল শোর মূল আকর্ষণ হয়ে উঠেছে।

তবে বিপিন মাঝির পুতুল নাচ নবীনগরে এখন হারানোর পথে। রাশিয়ার কাঠি টানা পুতুল, চীনের ছায়া পুতুল শো, আমেরিকার রেড ইন্ডিয়ান পুতুল শো এবং ইটালির পাপেট শো আন্তর্জাতিকভাবে সুনামের সাথে এগিয়ে চললেও নবীনগরের ঐতিহ্যটি ধীরে ধীরে বিলুপ্তির দিকে যাচ্ছে।

সংস্কৃতি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের মাধ্যমে নবীনগরের হারানো পুতুল নাচকে পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব। এটি শুধু বিনোদন নয়, দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে।