ঢাকা শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫

গরম না ঠান্ডা, শীতকালে কোন পানিতে গোসল করা উচিত?

ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১২, ২০২৫, ০১:০৫ পিএম
শীতকালের গোসল। ছবি - সংগৃহীত

শীতকালে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় অধিকাংশ মানুষই গরম কাপড় পরিধান করেন এবং ঠান্ডা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করেন। এটি একেবারেই স্বাভাবিক, কারণ শীতে নানা ঠান্ডাজনিত রোগের ঝুঁকি বাড়ে। শীতকাল শুধু পোশাকের ব্যাপার নয়, গোসলও অনেকের জন্য এক ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। অধিকাংশ মানুষ গরম পানি ব্যবহার করে স্নান করতে পছন্দ করেন। এতে কিছুটা স্বস্তি থাকলেও, গরম পানি ব্যবহার করায় ত্বকের সমস্যা এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

ডা. কে. ভেঙ্কট চালাম, নর্থ অন্ধ্র অ্যাসোসিয়েশন অব ডার্মাটোলজিস্টের সভাপতি, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু-কে জানিয়েছেন, শীতে গরম পানি ব্যবহার করলে ত্বকের বাইরের স্তর, যা স্ট্র্যাটাম কর্নিয়াম নামে পরিচিত, ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এই স্তর সাধারণত ১০ থেকে ৩০ শতাংশ আর্দ্রতা বজায় রাখে, যা ত্বককে নরম, কোমল ও সুস্থ রাখে। গরম পানি ব্যবহারে এই আর্দ্রতা কমে যায় এবং ত্বকের কোষ অস্বাভাবিকভাবে ঝরে পড়তে পারে। ফলে ত্বক ফেটে যায়, চুলকানি এবং জ্বালা সৃষ্টি হয় এবং সংক্রমণের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে ত্বকের সেই অংশগুলো যেখানে তেল গ্রন্থি কম থাকে, যেমন পায়ের নিচের অংশ, হাত, বাহু, মুখ ও ঠোঁট, গরম পানি দিয়ে গোসলের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

শীতকালে সাধারণত যে কেউ শুষ্ক ত্বক অনুভব করতে পারে। তবে কিছু ব্যক্তির জন্য এই শুষ্কতা আরও ঝুঁকিপূর্ণ। যেমন বয়স্ক মানুষ, যারা বাইরে বেশি সময় কাটান, ডায়াবেটিস, কিডনি বা লিভারের রোগী, হাইপোথাইরয়েডিজমের রোগী, মূত্রবর্ধক ওষুধ সেবনকারী, রেটিনয়েড ব্যবহারকারী এবং ইচথিওথিসের মতো বংশগত ত্বক সমস্যা সম্পন্ন ব্যক্তিরা। এদের ক্ষেত্রে গরম পানি ব্যবহার করলে সমস্যা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। গরম পানি নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বকের প্রাকৃতিক তেলও নষ্ট হয়, যা একজিমা বা সোরিয়াসিসের মতো রোগকে তীব্র করতে পারে।

ডা. ভেঙ্কট পরামর্শ দেন, শীতকালে গরম পানি দিয়ে খুব দীর্ঘ সময় গোসল করা এড়ানো উচিত। হালকা গরম জল ব্যবহার করা সবচেয়ে নিরাপদ। পাশাপাশি, গরম পানি এবং সাবান একসাথে ব্যবহার কমিয়ে ত্বকের প্রতিরক্ষামূলক তেল রক্ষা করা যায়।

গরম জল বনাম ঠান্ডা জল

শীতকালে অধিকাংশ মানুষ গরম জল দিয়ে স্নান করতে পছন্দ করেন। গরম জল শরীরকে ঠান্ডা আবহাওয়া থেকে রক্ষা করে, পেশী শিথিল করতে সাহায্য করে এবং চাপ কমায়। এছাড়া, গরম জল রক্তনালীর প্রসারণ ঘটিয়ে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং শরীরে শক্তি ফিরিয়ে আনে। শীতকালে হালকা ব্যথা বা ক্লান্তি উপশম করতে গরম জলের স্নান কার্যকর। পাশাপাশি, গরম জলের বাষ্প নাকের পথ পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে, যা শ্বাসনালীর সমস্যাও কমাতে পারে।

তবে গরম জলের স্নানের কিছু অসুবিধা আছে। দীর্ঘ সময় গরম জলে স্নান করলে ত্বকের প্রাকৃতিক তেল নষ্ট হয়ে যায়, যা শুষ্কতা, চুলকানি এবং জ্বালা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে একজিমা বা সোরিয়াসিসের মতো ত্বকের সমস্যা থাকা ব্যক্তিদের জন্য গরম জল ব্যবহার অবনতি ঘটাতে পারে।

অন্যদিকে, ঠান্ডা জলে স্নান স্বাস্থ্যকর হলেও অনেকের কাছে আরামদায়ক নাও হতে পারে। নিয়মিত ঠান্ডা জলে স্নান করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, শরীরে শক্তি যোগ হয় এবং মনোযোগ বৃদ্ধি পায়। এছাড়া, ঠান্ডা জল প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে, যা ব্যথা ও ফোলা জয়েন্ট উপশম করতে কার্যকর। তবে হঠাৎ ঠান্ডা জলে গোসল করলে হাঁপানি বা ব্রঙ্কাইটিসের মতো শ্বাসকষ্টের ঝুঁকি থাকে। দীর্ঘ সময় ঠান্ডা জলে থাকা শরীরকে শীতার্ত করতে পারে এবং আরামহীনতা তৈরি করে।

সুষম পদ্ধতি

শীতকালে সঠিক স্নানের জন্য ‘মধ্যম পথ’ বেছে নেওয়াই সবচেয়ে কার্যকর। হালকা গরম জল আরামদায়ক এবং ত্বকের জন্যও কম ক্ষতিকর। দিনের তাপমাত্রা অনুযায়ী ঝরনার জল পরিবর্তন করাও ভালো। উদাহরণস্বরূপ, দিনের তাপমাত্রা বেশি হলে কিছুটা ঠান্ডা জল এবং রাতে হালকা গরম জল ব্যবহার করা যায়।

আয়ুর্বেদ অনুসারে, মাথার জন্য ঠান্ডা জল এবং শরীরের জন্য গরম জল সবচেয়ে উপকারী। বয়স, শরীরের গঠন, অভ্যাস এবং রোগ অনুযায়ী স্নানের জল বেছে নেওয়া উচিত। শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য গরম জল বেশি সুবিধাজনক, আর কিশোর এবং প্রায় ৪৫–৫০ বছর বয়সী মানুষ ঠান্ডা জল দিয়ে স্নান করতে পারেন। শরীরের দোষ অনুযায়ীও স্নানের জল বেছে নেওয়া যায়। বাত বা কফ দোষের জন্য গরম জল এবং পিত্ত দোষের জন্য ঠান্ডা জল বেশি উপকারী। সাধারণত সকালবেলায় ঠান্ডা জল এবং সন্ধ্যায় গরম জল বেছে নেওয়াই শ্রেয়। এছাড়া ব্যায়ামের পর গরম জল ব্যবহার করা উত্তম।

শুধু মনে রাখতে হবে, খুব গরম বা খুব ঠান্ডা জল এড়ানো উচিত। গরম জল ত্বকের পিএইচ ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, আর ঠান্ডা জল শরীরকে শীতার্ত করতে পারে। প্রয়োজনে একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া সবসময় নিরাপদ।

শীতকালে সঠিক স্নান কেবল স্বস্তি দেয় না, শরীর ও মনের সুরক্ষাও নিশ্চিত করে। তাই অতিরিক্ত চিন্তা না করে, মধ্যম পথ বেছে নিয়ে আরামদায়ক স্নান করুন এবং শীতের প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করুন।