সীমান্তঘেঁষা গারো পাহাড়, শেরপুরের নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলায় পাহাড়ের টিলায় কাঠের বাক্স বানিয়ে পাহাড়ি ফুলের মধুর খোঁজে স্থানীয় এবং ভ্রাম্যমাণ মৌয়ালেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর এই দুই মাস গারো পাহাড়ের শাল-গজারী বাগানজুড়ে রংবেরঙের ফুলের সমাহার থাকে। এ সময়ে মৌয়ালাদের দম ফেলার সময় থাকে না। বিভিন্ন জেলা থেকে দুই থেকে তিন শতাধিক মৌয়ালরা মধু সংগ্রহের জন্য এখানে আসেন।
সারি সারি কাঠের বাক্স বানিয়ে সুবিধাজনক স্থানে মধু সংগ্রহের কাজ করেন তারা। রাত্রি যাপনের জন্য বাঁশ দিয়ে টংঘর বানানো হয়, আবার কেউ কেউ তাঁবু টানিয়ে রাত কাটান।
সরেজমিনে দেখা যায়, নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতীর গারো পাহাড়ে শাল, সেগুন, মহুয়া, গজারি, আকাশমনি, ইউকেলিপটাস, মিলেজিয়ামসহ নানা প্রজাতির গাছে ঘেরা উঁচু-নিচু পাহাড়ে ৪-৫ শ কাঠের বাক্সে সিরাজগঞ্জ জেলার শহিদুল ইসলাম মিক্স মধু চাষ করছেন।
তিনি বলেন, ‘এ সময়টা মিক্স মধু সংগ্রহের সময়। মিক্স মধু শীতে জমে না। মধুর চাহিদা বেশি হওয়ায় বিভিন্ন কোম্পানি আমাদের কাছ থেকে কিনে নিয়ে নিজেদের ব্র্যান্ডে বিক্রি করছে। মধু সংগ্রহ করতে ৪০-৫০ দিন সময় লাগে। প্রতি কেজি মধু ৪০০-৪৫০ টাকায় বিক্রি হয়। খরচ বাদ দিয়ে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত লাভ হয়।’
কুষ্টিয়া থেকে আসা নাজমুল আলম বলেন, ‘আমরা ক্ষুদ্র খামারি। অতিরিক্ত অর্থের অভাবে মধু কম দামে বিক্রি করতে হয়। প্রতি কেজি মধু ২০০-৩০০ টাকায় বড় কোম্পানি আমাদের কাছ থেকে কিনে নিয়ে নিজেদের ব্র্যান্ডে ১,০০০-১,২০০ টাকায় বিক্রি করে। সরকার যদি আমাদের মধু চাষে সহায়তা দিত তাহলে হয়তো আমরা আরও সফল হই।’
স্থানীয় কৃষক সোহরাব আলী বলেন, ‘বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মৌয়ালদের দেখে আমরাও মধু চাষে অনুপ্রাণিত হয়েছি। গারো পাহাড় মধু চাষের জন্য খুব উপযুক্ত জায়গা।’
নালিতাবাড়ী বনবিভাগের মধুটিলা রেঞ্জ কর্মকর্তা দেওয়ান আলী বলেন, পাহাড়ের বিভিন্ন প্রকার গাছের ফুল থেকে মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে। তাই গারো পাহাড় বন মধু চাষের উপযুক্ত স্থান। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মৌয়ালরা বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে এখানে মধু চাষ করতে পারে।’
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘কৃষি বিভাগের মাঠকর্মীরা মৌ চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছে। গারো পাহাড়ে মৌ চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।’


