ভেনেজুয়েলা উপকূলে তেলবাহী একটি ট্যাঙ্কার জব্দের একদিন পর, যুক্তরাষ্ট্র কারাকাসের আরও ছয়টি জাহাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব জাহাজের বিরুদ্ধে ভেনেজুয়েলায় তেল বহনের অভিযোগ তোলা হয়েছে। পাশাপাশি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর কয়েকজন আত্মীয় এবং সংশ্লিষ্টদের কিছু ব্যবসার ওপরও ।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের জব্দ করা জাহাজটি স্কিপার নামে পরিচিত। যানটি ‘অবৈধভাবে তেল পরিবহন’ করছিল, সেটিকে একটি মার্কিন বন্দরে নিয়ে যাওয়া হবে।
এ ঘটনাকে ‘আন্তর্জাতিক জলদস্যুতা’ বলে বর্ণনা করেছে মাদুরো সরকার।
সংবাদমাধ্যম বিবিসি লিখেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সবশেষ পদক্ষেপ মাদুরোর ওপর মার্কিন চাপ বাড়ানোর একটি বড় ধাপ। ভেনেজুয়েলা থেকে মাদক বহনের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি নৌকায় হামলা চালিয়ে ৮০’র অধিক মানুষকে হত্যা করেছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ওই অঞ্চলে মার্কিন যুদ্ধজাহাজও মোতায়েন করা হয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসন ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে মাদক পাচারের অভিযোগ তুলেছে। অন্যদিকে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেলসমৃদ্ধ দেশ ভেনেজুয়েলা দাবি করে আসছে, ওয়াশিংটন তাদের সম্পদ লুট করতে চায়।
মাদুরো বুধবার বলেন, ভেনেজুয়েলাকে কখনোই ‘তেলের উপনিবেশ’ হতে দেওয়া হবে না।
কিন্তু হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বৃহস্পতিবার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ‘অবৈধ মাদকের প্রবাহ’ বন্ধ করা এবং নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে প্রতিশ্রুতিশীল।
ভেনেজুয়েলার তেল বহনকারী আরও জাহাজ জব্দ করার পরিকল্পনা আছে কিনা—এ প্রশ্নে তিনি কিছু বলেননি।
লেভিট বলেন, ‘আমরা নিষিদ্ধ জাহাজগুলোকে কালোবাজারি তেল নিয়ে সমুদ্রপথে চলতে দেব না—যার আয় বিশ্বজুড়ে অবাধ্য ও অবৈধ শাসনব্যবস্থার মাদক-সন্ত্রাসকে উসকে দেবে।’
তিনি জানান, প্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়া শেষে স্কিপার জাহাজে থাকা তেল যুক্তরাষ্ট্র বাজেয়াপ্ত করবে।
লেভিট বলেন, ‘ক্রমবর্ধমান বাইরের চাপে থাকা’ মাদুরোকে বৃহস্পতিবার ফোন করে মস্কোর সমর্থনের কথা জানান রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তবে এ খবরে ট্রাম্প ‘মোটেই উদ্বিগ্ন নন’।
পরে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, মাদুরোর স্ত্রীর তিন ভাইপোসহ কয়েকটি ব্যবসা ও জাহাজে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্টের ‘স্বৈরাচারী ও নির্মম নিয়ন্ত্রণকে’ মোকাবিলা করা যাবে।
এক পোস্টে তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন সেখানকার শাসকগোষ্ঠী এবং তাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও কোম্পানিগুলোকে তাদের চলমান অপরাধের জন্য জবাবদিহির মুখে দাঁড় করাচ্ছে।
হোয়াইট হাউস বুধবার অভিযানের নাটকীয় একটি ভিডিও প্রকাশ করে, যেখানে দেখা যায়, ক্যামোফ্লাজ পোশাকে মার্কিন সেনারা হেলিকপ্টার থেকে স্কিপারের ডেকে নেমে অস্ত্র হাতে টহল দিচ্ছে।
জাহাজ জব্দের তীব্র নিন্দা জানিয়ে ভেনেজুয়েলা সরকার বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র জাহাজের নাবিকদের ‘অপহরণ করেছে’ এবং জাহাজটি ‘চুরি করেছে’।
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘তারা একটি নতুন যুগের সূচনা করেছে—ক্যারিবীয় সাগরে অপরাধমূলক, নৌ-জলদস্যুতার যুগ।’
যুক্তরাষ্ট্রকে ‘খুনি, চোর, জলদস্যু’ অ্যাখ্যা দিয়ে ভেনেজুয়েলার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিয়েসদাদো কাবেলো বলেন, এভাবেই দেশটি ‘বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ শুরু করেছে’।
সিবিএস লিখেছে, হিজবুল্লাহ এবং ইসলামিক রেভুলেশানারি গার্ড কর্পস-কুদস ফোর্সকে আয় এনে দেয়, এমন চোরাচালানের অভিযোগে ২০২২ সালে স্কিপার জাহাজটির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ।
এবার যুক্তরাষ্ট্রের অভিযানের কয়েকদিন আগে ভেনেজুয়েলার উত্তরে ক্যারিবীয় সাগরে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি বাড়ানো হয়।
কয়েক হাজার সেনার পাশাপাশি বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ডকে মোতায়েন করা হয়েছে ভেনেজুয়েলার কাছে।



