মধ্যপ্রাচ্যে এখন অনেকটাই একা ইরান। আগে যারা ইরানের ঘনিষ্ঠ ছিল, তাদের অনেকেই এখন আর পাশে নেই। লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেন- সব জায়গাতেই ইরানের প্রভাব অনেক কমে গেছে। ইরাকেও ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক শুধু প্রয়োজনের সময় সীমিত।
এমন অবস্থায় ইরান এখন নতুন বন্ধু খুঁজছে। আর সেই লক্ষ্যেই আফ্রিকার দিকে হাত বাড়িয়েছে তারা।
গত ২৬ এপ্রিল ইরানের বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনার এক দিন পরই রাজধানী তেহরানে শুরু হয় ইরান-আফ্রিকা অর্থনৈতিক সম্মেলন। চার দিনব্যাপী এই সম্মেলনে আফ্রিকার ৩৮টি দেশ থেকে সাত শতাধিক ব্যবসায়ী অংশ নেন।
ছিলেন ৫০ জনের বেশি সরকারি কর্মকর্তাও।
ইরানের সরকারি সংবাদমাধ্যম জানায়, এই সম্মেলনের মূল লক্ষ্য আফ্রিকার সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানো। আলোচনা হয় খনিজ, কৃষি, ওষুধ ও শিল্পপণ্য নিয়ে।
সম্মেলনের একটি অংশ হয় ঐতিহাসিক শহর ইস্পাহানে। আফ্রিকার অতিথিরা তাদের পছন্দ অনুযায়ী খনি, শিক্ষা বা ব্যবসায়িক স্থান পরিদর্শন করেন। অনেকে চুক্তিও করেন।
ইরানের এক মন্ত্রী জানান, আফ্রিকার সঙ্গে এখন ইরানের রপ্তানি মাত্র ৩ শতাংশ এবং আমদানি ১ শতাংশ। ইরান চায় এই পরিমাণ ১০ গুণ বাড়াতে। এজন্য তারা আকাশ ও জলপথে যোগাযোগ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে।
সম্মেলনের আয়োজকরা বলেন, এই উদ্যোগ শুধু আনুষ্ঠানিক নয়, এর বাস্তব দিকও আছে। ইরানের বিভিন্ন পণ্য আফ্রিকায় রপ্তানি করা যাবে, আবার আফ্রিকার খনিজসম্পদ ও কৃষিপণ্য ইরানে আসবে।
ইরানের এক কূটনীতিক বলেন, আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের সম্পর্কের ভিত্তি হলো সম্মান। পশ্চিমা দেশগুলো আফ্রিকাকে আগে শোষণ করেছে, তাই তাদের সঙ্গে আফ্রিকার সম্পর্ক তিক্ত। কিন্তু ইরানের সঙ্গে তেমন শত্রুতা নেই।
কেন আফ্রিকায় আগ্রহ?
আফ্রিকা এখন অনেক বড় বাজার। চীন ও ভারত ইতোমধ্যে সেখানে নিজেদের ব্যবসা ও প্রভাব বাড়াতে প্রতিযোগিতা করছে। অন্যদিকে, রাশিয়াও আফ্রিকার দিকে ঝুঁকছে, কারণ ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় তারা চাপে আছে।
ঠিক এই সময়েই ইরান চাইছে আফ্রিকাকে পাশে পেতে। কারণ, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত ও মধ্যপ্রাচ্যে বন্ধুহীন ইরানের এখন নতুন সম্পর্ক দরকার।
এখন দেখার বিষয়, ইরান এই নতুন মহাদেশে কতটা সফল হতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :