পাঁচ বছর আগে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা ঈশ্বরদী মৎসবীজ উৎপাদন খামার এখনও রয়েছে সংস্কারবিহীন। মাছের পোনা উৎপাদনের পাশাপাশি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালানোর কথা থাকলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে তা সম্ভব হচ্ছে না। খামারটিতে মেরামতের অভাবে কার্যক্রম সীমিত এবং অনিয়মিতভাবে চলছে।
১৯৬৩ সালে পৌরসভার উমিরপুরে ৮.৮৫ একর জমির ওপর নির্মিত এই খামারটিতে হ্যাচারি কমপ্লেক্স, পাম্প হাউস, অফিস ভবন ও নিরাপত্তা প্রাচীর থাকলেও দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে ২০২০ সালে এটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। সরকারি খামার থেকে পোনা না পাওয়ায় স্থানীয় চাষিরা আশপাশের জেলা থেকে মাছের পোনা সংগ্রহ করছেন, যা মাছ চাষে খরচ বাড়াচ্ছে।
দাশুড়িয়া ইউনিয়নের মৎস চাষি মো. ওমর ফারুক ১৫ বিঘা পুকুরে মাছ চাষ করছেন।
ফারুক বলেন, সরকারি মৎস হ্যাচারি থেকে আমি কোনো সাহায্য পাইনি। পোনা আনতে অনেক দূর থেকে সংগ্রহ করতে হয়। এতে খরচ অনেক বেড়ে যায়।
পদ্মবিল গ্রামের মৎস চাষি মো. মতিউর রহমান জানান, ঈশ্বরদীতে সরকারি একটি খামার থাকলেও কার্যক্রম যথেষ্ঠ নয়। তাই নাটোর, রাজশাহী, টেবুনিয়া ও কাচিকাটা থেকে পোনা সংগ্রহ করতে হচ্ছে আমাদের।
খামার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বর্তমান অবকাঠামোগত দুর্বলতার কারণে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
তবে খামার ব্যবস্থাপক মো. রেজাউল ইসলাম জানান, সরকার এই অঞ্চলে একটি আধুনিক মৎসবীজ উৎপাদন খামার করার পরিকল্পনা নিয়েছে, যাতে দেশি ও বিদেশি রুই, কার্প, মনোসেক্স তেলাপিয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা উৎপাদন ও সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়।
তিনি বলেন, আমরা চাই চাষিরা আধুনিক ও নিরাপদ ব্যবস্থায় মাছ চাষ শিখুক। বর্তমানে কিছু খামারী মাছ চাষে মুরগির বিষ্ঠা ব্যবহার করছেন, যা অসাস্থ্যকর এবং নানা দূরারোগ্য রোগের কারণ হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, সরকারি পরিকল্পনা অনুযায়ী মোট ৩১টি মৎস্য খামার আধুনিকায়ন হবে, যার মধ্যে ঈশ্বরদী অন্যতম। এখানে একটি আধুনিক পোনা উৎপাদন হ্যাচারি, অফিস ও ট্রেনিং সেন্টার, প্রশিক্ষণার্থীদের থাকার ডরমিটরি, মডেল পুকুরসহ ১১টি পুকুর পুনঃখনন, ২০ কিলোওয়াট সোলার সিস্টেম (অতিরিক্ত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যাবে), পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশনের জন্য পাইপলাইন স্থাপন করা হবে।
এছাড়া এলাকাবাসী ও খামারীরা দাবি জানিয়েছেন-এখানে একটি পূর্ণাঙ্গ গবেষণা কেন্দ্রও স্থাপন করার।
ঈশ্বরদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার মো. শহিদুল ইসলাম শিশির বলেন, মাছ চাষে মুরগীর বিষ্ঠা ব্যবহার এবং সরবরাহে ফরমালিনের প্রয়োগ স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে খাদ্যনালীর ইনফেকশান, পেটের অসুখ, লিভার সমস্যা, ত্বকের রোগ ও শ্বাসনালী সংক্রান্ত সমস্যাসহ দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক প্রভাবের মধ্যে সম্ভাব্য ক্যান্সারের মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে।
মো. রেজাউল ইসলাম আরও জানান, আধুনিকায়ন ও পর্যাপ্ত দক্ষ জনবল নিয়োগের মাধ্যমে মাছের পোনা উৎপাদন বাড়ানো গেলে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে এবং চাষিরা উপকৃত হবেন, সমৃদ্ধ হবে অত্র অঞ্চলের মৎসখাত।