রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বৃহত্তর বানেশ্বর হাট এখন চরম অব্যবস্থাপনা ও নোংরা পরিবেশের কারণে ভোগান্তির আরেক নাম। সপ্তাহে দু’দিন- শনিবার ও মঙ্গলবার বসা এই হাটে ময়লার স্তূপ, দুর্গন্ধ, জলাবদ্ধতা এবং স্যাঁতসেঁতে কাদার কারণে স্বাভাবিক বেচাকেনা ব্যাহত হচ্ছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন হাটের ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাটজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে আবর্জনা। মাছ ও মাংস পট্টি সবচেয়ে বেশি নোংরা- পচা মাছ ও মাংসের বর্জ্যে পানি জমে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে চারদিকে। নেই কোনো পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা। রাস্তাঘাটে হাঁটুসমান কাদা, মাঝে মাঝে রক্ত-মিশ্রিত পানি গড়িয়ে পড়ছে।
মাংস বিক্রেতা মালেক আলী বলেন, ‘পাশেই ময়লার ভাগাড়। এমন দুর্গন্ধে টিকে থাকা যায় না। বছরের পর বছর আমরা এ অবস্থায় ব্যবসা করছি।’
মাছ ব্যবসায়ী ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘শুকনো মৌসুমে একটু কষ্ট করে বেচাকেনা হয়। কিন্তু বর্ষাকালে পুরো হাটেই দুর্বিষহ অবস্থা তৈরি হয়। দুর্গন্ধ আর পোকায় বাজারে দাঁড়ানোই দায়।’
ক্রেতা আসলাম জানান, ‘প্রতি বছর কোটি টাকায় হাট ইজারা দেওয়া হয়, অথচ উন্নয়নের কোনো ছাপ নেই। এমন নোংরা পরিবেশে মানুষ বাজারেই আসতে চায় না।’
বানেশ্বর বণিক সমিতির সভাপতি মতিউর রহমান মতি বলেন, ‘আম, খেজুরের গুড়, সবজি, গরু-ছাগল ও গৃহস্থালি পণ্যের জন্য বিখ্যাত এই হাট থেকে সরকার প্রতিবছর প্রায় ৫–৬ কোটি টাকার রাজস্ব আয় করে। অথচ এত বড় আয় থাকা সত্ত্বেও হাটের উন্নয়নে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই।’
স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে হাটের উন্নয়ন পরিকল্পনা শোনা গেলেও বাস্তবায়ন হয়নি। তারা দ্রুত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের দাবি জানান। অন্যথায় এই ঐতিহ্যবাহী হাট তার সুনাম হারাবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বারবার আশ্বাস দিলেও হাটের অবস্থা অপরিবর্তিত। মাছ-মাংস পট্টিতে টিনশেড, ড্রেন সংস্কার ও পরিচ্ছন্নতার কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ এখনো নেই।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) একেএম নুর হোসেন নির্ঝর বলেন, ‘হাটের নোংরা পরিবেশের অন্যতম কারণ ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা। আমরা ইতোমধ্যে ড্রেনেজ প্রকল্প হাতে নিয়েছি। টিনশেড নির্মাণ ও ড্রেন সংস্কারের কাজ শিগগিরই শুরু হবে।’