বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হলো বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস। ‘জলাতঙ্ক নির্মূলে, কাজ করি সবাই মিলে’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাজশাহীতে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করা হয়।
দিনব্যাপী এ কর্মসূচির আয়োজন করে জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর। কর্মসূচির মধ্যে ছিল বর্ণাঢ্য র্যালি, আলোচনা সভা এবং বিনামূল্যে কুকুর ও বিড়ালকে জলাতঙ্কের টিকা প্রদান।
সকাল ১০টায় নগরীর মেট্রো প্রাণিসম্পদ দপ্তর প্রাঙ্গণ থেকে র্যালিটি শুরু হয়ে শহরের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে। র্যালিতে অংশ নেন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, খামারি, পশুপ্রেমী, প্রাণী চিকিৎসক ও সাধারণ মানুষ। হাতে ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে অংশগ্রহণকারীরা জলাতঙ্ক প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বান জানান।
র্যালি শেষে প্রাণিসম্পদ দপ্তরের মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহী জেলার সিভিল সার্জন ডা. এসআইএম রাজিউল করিম। বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এফএম আঞ্জুমান আরা বেগম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্স বিভাগের প্রফেসর ড. এসএম কামরুজ্জামান। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আতোয়ার রহমান সভার সভাপতিত্ব করেন।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, জলাতঙ্ক একটি ভয়াবহ ভাইরাসজনিত রোগ, যা আক্রান্ত প্রাণীর কামড়ে বা আঁচড়ে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর প্রায় ৫৯ হাজার মানুষ এই রোগে মারা যায়। বাংলাদেশেও বছরে প্রায় দুই হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়ে। তবে সচেতনতা বৃদ্ধি, দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ ও নিয়মিত টিকা প্রয়োগের মাধ্যমে জলাতঙ্ক সম্পূর্ণ প্রতিরোধযোগ্য।
প্রধান অতিথি ডা. এসআইএম রাজিউল করিম বলেন, ‘জলাতঙ্ক প্রতিরোধে শুধুমাত্র সরকারের উদ্যোগ যথেষ্ট নয়, জনগণকেও সচেতন হতে হবে। সবাই যদি তাদের পোষা প্রাণীকে নিয়মিত টিকা প্রদান করেন, তাহলে খুব সহজেই এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।’
বিশেষ অতিথি ডা. এফএম আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নগরীতে কুকুরের টিকাদান কার্যক্রম অব্যাহত আছে। এই কর্মসূচি সফল করতে নাগরিকদের সহযোগিতা প্রয়োজন। সবাইকে জলাতঙ্ক প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে।’
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে প্রফেসর ড. এসএম কামরুজ্জামান বলেন, ‘জলাতঙ্কের কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে বর্তমানে কার্যকর ভ্যাকসিন সহজলভ্য। সংক্রমণের আশঙ্কা থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং টিকা গ্রহণ অত্যাবশ্যক।’
আলোচনা সভায় আরও জানানো হয়, বাংলাদেশ সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে দেশটিকে জলাতঙ্কমুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করছে। এর অংশ হিসেবে সারা দেশে বিনামূল্যে কুকুর ও বিড়ালকে টিকা প্রদানের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
আলোচনা সভার শেষে প্রাণিসম্পদ দপ্তরের উদ্যোগে এলাকার শতাধিক কুকুর ও বিড়ালকে বিনামূল্যে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকা দেওয়া হয়। পোষা প্রাণীর মালিকেরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন।
বক্তারা আশা প্রকাশ করেন, এই ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকলে অচিরেই বাংলাদেশ থেকে জলাতঙ্ক নির্মূল করা সম্ভব হবে।