ঢাকা সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

মারধরে কৃষক দলনেতার মৃত্যু খুনির রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে বিভ্রান্তি

বরিশাল ব্যুরো
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৫, ১২:১৫ এএম

বরিশালের বানারীপাড়ায় প্রতিপক্ষের মারধরে সৈয়দকাঠী ইউনিয়ন কৃষক দলনেতা আব্দুল লতিফ (৫০) নিহত হয়েছেন। গত শনিবার সন্ধ্যা রাতে উপজেলার সৈয়দকাঠী ইউনিয়নের করফাকর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে সহযোগীদের নিয়ে তাকে মারধর করেন দেলোয়ার হোসেন ঘরামী। এতে ওই ইউনিয়ন কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফের মৃত্যু হয়। হামলাকারী দেলোয়ার আত্মগোপনে চলে গেলেও তার রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে স্থানীয় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের বাগযুদ্ধ শুরু হয়। উভয় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা দেলোয়ারকে আওয়ামী লীগ কর্মী আখ্যা দিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন। এ নিয়ে এক ধরনের বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।  

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার সন্ধ্যার আগমুহূর্তে করফাকর স্কুলের সামনে সৈয়দকাঠী ইউনিয়ন কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফের সঙ্গে রাজনৈতিক আলোচনায় দ্বন্দ্বে জড়ান স্থানীয় বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন। তিনি আগে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। একপর্যায়ে কথা কাটাকাটির জেরে দেলোয়ার হোসেন ঘরামী এবং তার জামাতা তুহিনসহ ৭-৮ জন লতিফকে মারধর করেন। এতে তিনি আহত হলে স্বজনরা তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর আগেই তার মৃত্যু হয়। পুলিশ অভিযুক্ত দেলেয়ারসহ হামলাকারী খুনিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।

হামলাকারী আওয়ামী লীগ কর্মী দেলোয়ারকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার পাল্টাপাল্টি অভিযোগে উপজেলা বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্ব বাগযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছেন। এ নিয়ে বানারীপাড়া উপজেলাজুড়ে উত্তাপ বইছে।  

বানারীপাড়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ মৃধা রূপালী বাংলাদেশের কাছে অভিযোগ করেন, কৃষক দলনেতার খুনি দেলোয়ার ঘরামী আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ৫ আগস্টের পরে তিনি জামায়াতে যোগ দিয়েছেন। তবে দেলোয়ার খুনের ঘটনায় জড়িয়ে পড়ায় জামায়াতের নেতাকর্মীরা তার দায় নিতে চাইছেন না। বরং এখন বিএনপির বিরুদ্ধে দেলোয়ারকে আশ্রয় দেওয়ার মিথ্যে অভিযোগ আনা হচ্ছে।  

তবে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্বের এমন অভিযোগ অস্বীকার করে তার প্রতিবাদ জানিয়েছেন উপজেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক খলিলুর রহমান শাহাদাৎ এবং সেক্রেটারি মাওলানা মোকাম্মেল হোসেন মোজাম্মেল। 

কৃষক দলনেতার খুনি দেলোয়ারের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে বিভ্রান্তি থাকলেও উভয় দলের নেতাকর্মীরা তাকে গ্রেপ্তার করাসহ শাস্তির মুখোমুখি করার দাবি জানিয়েছেন। জানা গেছে, অভিযুক্ত দেলোয়ারকে ধরতে বানারীপাড়া থানা পুলিশও ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। 

স্থানীয় একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, কৃষক দলনেতা আব্দুল লতিফ খুনে জড়িত দেলোয়ার আওয়ামী লীগের কর্মী হলেও ৫ আগস্টের পরে বিভিন্ন সময়ে বিএনপি এবং জামায়াত নেতাকর্মীদের কাছাকাছি দেখা যায়। উভয় দলটির ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতারা চাইছিলেন, তাকে দলে টানতে। কিন্তু আকস্মিক তিনি কৃষক দলনেতা হত্যাকা-ে জড়িয়ে পড়ায় এখন আর কেউ তাকে কর্মী স্বীকার করছেন না। বরং দুটি দলের উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষনেতৃত্ব এ নিয়ে একে অপরকে ঘায়েল করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন, কষছেন কৌশল। 

গতকাল রোববার বিকেলে বানারীপাড়া থানা পুলিশের  ওসি মো. মোস্তফা রূপালী বাংলাদেশকে জানান, শনিবার রাতেই অভিযুক্ত দেলোয়ারসহ ৯ জনকে আসামি করে একটি মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। তাকেসহ সব অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। দেলোয়ারের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে তা খোদ থানা পুলিশের ওসিও স্বীকার করেছেন।