ঢাকা মঙ্গলবার, ০৫ আগস্ট, ২০২৫

খোলা হয়েছে ১৬ গেট, কাপ্তাই হ্রদে জরুরি সতর্কতা

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ৫, ২০২৫, ১০:১৭ এএম
রাঙামাটির কাপ্তাই বাঁধ। ছবি- সংগৃহীত

রাঙামাটির কাপ্তাই বাঁধের ১৬টি গেট (জলকপাট) সোমবার রাত ১২টার দিকে খুলে দেওয়া হয়েছে। টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কাপ্তাই হ্রদের পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘১৬টি গেটে ৬ ইঞ্চি করে পানি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, যার ফলে প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি কাপ্তাই হ্রদ থেকে কর্ণফুলী নদীতে নিষ্কাশন করা হচ্ছে।’

কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎকেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, পানি চাপ বৃদ্ধির কারণে মঙ্গলবার সকাল ৯টায় বাঁধের সব গেট খুলে দেওয়ার কথা থাকলেও দ্রুত পানি বেড়ে যাওয়ায় রাতেই গেট খুলে দেওয়া হয়। পানি ছাড়ার আগে কাপ্তাই হ্রদে পানি ছিল ১০৮.৫ ফুট, যেখানে ১০৮ ফুটকে বিপৎসীমা হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। হ্রদের সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা ১০৯ ফুট।

অন্যদিকে, কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের ৫টি ইউনিট সচল থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে আরও প্রায় ৩২ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলী নদীতে নিষ্কাশিত হচ্ছে। ফলে মোট মিলিয়ে ৪১ হাজার কিউসেক পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম জলাধার কাপ্তাই হ্রদের পানির চাপ কমাতে মঙ্গলবার রাত ১২টা ১০ মিনিটে বাঁধের সব স্পিলওয়ে খুলে দেওয়া হয়। কর্ণফুলী নদীতে তীব্র স্রোত সৃষ্টি হওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জরুরি সতর্কতা জারি করেছে। তারা সব ধরনের জাহাজ ও নৌযানকে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছেন।

বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, ভাটার সময় স্রোতজনিত কারণে নোঙররত জাহাজ ও জলযান নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়তে পারে। তাই জাহাজগুলোর ইঞ্জিন দ্রুত চালু রাখার, পর্যাপ্ত সংখ্যক নাবিক দায়িত্ব পালনের, মুরিং রশি দ্বিগুণ বাঁধার এবং শৃঙ্খলিত নোঙর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে ভিএইচএফ রেডিওযোগে বন্দরে তাৎক্ষণিক অবহিত করতে হবে।

কর্ণফুলী নদীতে অবস্থানরত লাইটারেজ জাহাজের মাস্টাররা জানায়, ‘নদীতে প্রচণ্ড স্রোত রয়েছে এবং উজান থেকে প্রচুর পানি নেমে আসছে। জাহাজগুলো ড্র্যাগিং করছে, তাই ইঞ্জিন সার্বক্ষণিক চালু রাখতে হচ্ছে।’

একজন ফিশিং ভ্যাসেলের নাবিক বলেন, ‘এই পরিস্থিতি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। প্রচুর স্রোত এবং পানি নামছে, যা বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হয়। নতুন করে জলকপাট খুলে দিলে পানি নিষ্কাশনের পরিমাণ প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক বৃদ্ধি পাবে, যা পরিস্থিতিকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে।’

রাঙামাটির স্থানীয় সংগঠক সৈকত রঞ্জন চৌধুরী বলেন, ‘প্রতি বছরই কাপ্তাই হ্রদের পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি গেলে বা ছুঁইছুঁই অবস্থায় থাকলে কাপ্তাই বাঁধের স্পিলওয়েগুলো খুলে পানি নিষ্কাশন করা হয় কর্ণফুলী নদীতে। পানির চাপ অনুযায়ী ধাপে ধাপে নিষ্কাশনের পরিমাণ বাড়ানো হয়। বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে পানির নিষ্কাশন স্পিলওয়ের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি।’

বর্তমানে ৬ ইঞ্চি জলকপাট খুলে প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি নিষ্কাশন হচ্ছে, আর বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে আরও ৩২ হাজার কিউসেক পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে, যা কর্ণফুলী নদীর মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে যায়।