রংপুরের মিঠাপুকুরে ধানখেতে কাঁদছিল ফুটফুটে এক শিশু। খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকা নবজাতক ছেলে শিশুটির কান্নার শব্দ শুনে উদ্ধার করেন স্থানীয়রা। হৃদয়বিদারক ঘটনাটি মুহূর্তেই এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোড়নের সৃষ্টি হয়। শিশুটিকে পরম মমতায় আগলে রাখেন স্থানীয় এক নারী। তিনি উদ্ধার হওয়া নবজাতককে সেবা দেন। কিন্তু শিশুটির অবস্থা আশঙ্কাজনক মনে হলে স্থানীয় কয়েকজন যুবকের সহায়তায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় নবজাতক শিশুটির মৃত্যু হয়।
মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) সকালে মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের জারুল্লাপুর গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটে।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জন ডাক্তার খালিদ বিন কাশিম চিকিৎসাধীন অবস্থায় নবজাতকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকালে কৃষিকাজে বাড়ি থেকে বের হন আব্দুল করিম নামের এক কৃষক।
ধানের খেতের পাশ দিয়ে হাঁটার সময় হঠাৎ কান্নার ক্ষীণ শব্দ কানে আসে। প্রথমে বিষয়টি বুঝতে না পেরে তিনি চারপাশে খোঁজ নিতে থাকেন। এক পর্যায়ে ধানের গাছ সরিয়ে দেখেন মাঝখানে একটি নবজাতক ছেলে শিশু পড়ে আছে। শিশুটি তখনো চিৎকার করে কাঁদছিল। এ দৃশ্য দেখে হতভম্ব হয়ে যান তিনি। কিছুক্ষণ পরই তার ডাক শুনে আশপাশের মানুষ ছুটে আসে। ধারণা করা হচ্ছে, রাতের কোনো এক সময়ে শিশুটিকে কে বা কারা ধানখেতে রেখে গেছে।
শিশুটিকে প্রথমে হাতে তুলে নিয়ে নিজের গামছায় জড়িয়ে রাখেন কৃষক আব্দুল করিম। তিনি বলেন, ‘এত ছোট একটা বাচ্চাকে এভাবে ফেলে রাখা—ভাবতেই চোখে পানি আসে। আমি দ্রুত গ্রামবাসীকে খবর দেই। পরে সবাই মিলে শিশুটিকে যত্ন নিতে থাকি। কিন্তু শিশুটির শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক মনে হলে গ্রামের এক নারী ও কয়েকজন যুবকের সহায়তায় শিশুটির চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে দেই।’
এলাকাবাসী জানায়, শিশুটিকে উদ্ধার করে প্রাথমিক সেবা দেওয়া হয়। শিশুটির শরীরে ও মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। পরে তাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাীন অবস্থায় তার রক্তের শূন্যতাসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। এরপর চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল ৫টার দিকে শিশুটির মৃত্যু হয়।
একজন স্থানীয় নারী বাসিন্দা বলেন, ‘আমরা শিশুটিকে দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। কে এমন নির্মম মানুষ হতে পারে! শিশুটিকে আমরা বাঁচাতে পারলাম না।’
এদিকে ঘটনাটি সংবাদমাধ্যমসহ সোস্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে নবজাতকটির নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে বিভিন্ন ব্যক্তি ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু দিনভর জীবনযুদ্ধে লড়াই করে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যুর খবরে সোস্যাল মিডিয়াসহ জনমনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

