সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর একদিকে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য। অন্যদিকে দিনকে দিন পর্যটনের নামে বিতর্কের উৎসস্থল হয়ে উঠছে। সম্প্রতি একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর হাওরজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও জনমনে ক্ষোভ। ওই ভিডিওটিতে দেখা যায়, এক নারী ডিঙি নৌকায় বসে প্রকাশ্যে মদের বোতল হাতে নিয়ে নাচছেন, ভিডিও ধারণ করছেন এবং পানিতে নেমে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই সমালোচনার ঝড় বইছে।
স্থানীয়রা বলছেন, এমন কর্মকাণ্ড টাঙ্গুয়ার হাওরের পরিবেশ, সংস্কৃতি এবং সামাজিক মূল্যবোধের সঙ্গে সম্পূর্ণ বেমানান। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এ ধরনের কর্মকাণ্ড বাড়তে থাকলে হাওরের প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও কৃষি ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়বে।
পরিবেশবাদী ও সামাজিক সংগঠনগুলোর নেতারাও এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সুনামগঞ্জ পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ফজলুল করিম সাইদ বলেন, ‘আমরা বহুদিন ধরে হাওরের পরিবেশ রক্ষায় আন্দোলন করছি, কিন্তু প্রশাসন কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। হাওরের জীববৈচিত্র্য, সংস্কৃতি ও কৃষিভিত্তিক জীবনব্যবস্থা চরম হুমকির মুখে।’
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, হাউসবোটে মদপানের আসর এখন নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা জানান, পানি শুকিয়ে গেলে হাওরের তলদেশ প্লাস্টিক ও মদের বোতলে ছেয়ে যায়, যা কৃষিজমির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তাদের দাবি, হাউসবোটে পর্যটকদের তালিকা সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হোক, যাতে অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা যায়।
হাউসবোট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আরাফাত হোসেন জানান, ‘ভিডিওতে থাকা নারীর পরিচয় এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি এবং তিনি কোন হাউসবোটে ছিলেন, তাও জানা যায়নি। তবে ঘটনাটি একটি নৌকা থেকেই ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’
তাহিরপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল হাসেম বলেন, ‘ঘটনার বিষয়ে জানার পর হাউসবোট মালিকদের সতর্ক করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’