বৃহস্পতিবার, ০২ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ২, ২০২৫, ০২:২৯ পিএম

মাথা গোঁজার ঠাঁই পেল সোনা খলিফা

ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ২, ২০২৫, ০২:২৯ পিএম

লৌহজং নদীর ব্রিজের নিচে সোনা খলিফার সংসার।  ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

লৌহজং নদীর ব্রিজের নিচে সোনা খলিফার সংসার। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

পল্লী কবি জসীম উদ্দীন যদি সোনা খলিফাকে কখনো দেখতেন তাহলে তিনি বলতেন, সোনা খলিফাকে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও, লৌহজং নদীর তীরে ব্রিজের নিচে যাও।

বলছিলাম, টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার অসুস্থ বয়োবৃদ্ধ এক ভূমিহীন সোনা খলিফার সংসারের কথা। আসমানীর তাও বাড়ি ছিল। কিন্তু সোনা খলিফার বাড়িও নেই। তিনি বাবা-মায়ের কাছে আদরের ‘সোনা’ হলেও বাস্তব জীবনে অবহেলিত, সহায়-সম্বলহীন, ঘর-বাড়িহীন ব্রিজের তলে বসবাস করা এক বাসিন্দা।

উপজেলার ও পৌর এলাকার বামনহাটা গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া লৌহজং নদীর ব্রিজের নিচে সংসার করছিলেন এক ভূমিহীন অহায় পরিবার। তার নাম সোনা খলিফা।

উপজেলার গাবসারা ইউনিয়নের জয়পুর চরের বাসিন্দা হারু খলিফার ছেলে ৭০ বছর বয়সি ‘সোনা বুড়া’ খ্যাত সোনা খলিফা যমুনার করাল গ্রাসে বাড়ি-ঘর হারিয়ে বামনহাটা গ্রামে আশ্রয় নেন প্রায় ২৫ বছর আগে। তখন একজন হিতৈষী তার পতিত ভিটায় সোনা খলিফাকে আশ্রয় দিয়েছিলেন। তার মৃত্যুর পরে সে জমিটি থেকে সোনার পরিবারকে উচ্ছেদ করা হলে অসহায় হয়ে পড়ে সোনার পরিবার। বর্ষাকালে সরকারি স্কুল অথবা সড়কের ওপর পলিথিন দিয়ে ছাউনি তুলে থাকতে হয় তাদের।

অসুস্থ বৃদ্ধ সোনা খলিফার সম্পদ বলতে একজন মানবসেবীর উপহার দেওয়া একটি ব্যাটারীচালিত ভ্যান। দিন শেষে যা আয় করেন, তাই দিয়ে সংসার চালায় সোনা খলিফা। শরীরে এবং বয়সে বৃদ্ধ হলেও পান না বয়স্ক ভাতাও। জাতীয় পরিচয় পত্রে ভুলক্রমে বয়স কম হওয়ায় বয়স্ক ভাতাও পাচ্ছেন না তিনি।

ভিটে থেকে উচ্ছেদের কারণে মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে সোনা খলিফা। সোনা খলিফার তিন মেয়ে এবং এক ছেলে নিয়ে পড়েন মহা বিপাকে। পর্যায়ক্রমে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেন । তারা শ্বশুরবাড়িতে চলে যায়। বাড়ি-ঘর আর থাকার জায়গা না থাকায় একমাত্র ছেলে চলে যায় শ্বশুরবাড়ি। এখন তিনি ঘর জামাই থাকেন।

শেষমেশ দিশেহারা হয়ে বামনহাটা বাজার থেকে রায়ের বাশালিয়া সড়কের লৌহজং নদীর ওপর নির্মিত ব্রিজের নিচে নদীতীর ঘেঁষে বসতি স্থাপন করে বসবাস করছে সোনার পরিবার।

অবশেষে বিধাতার যেন কৃপা হলো সোনা খলিফার প্রতি। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এবং পত্র-পত্রিকায় সোনা খলিফার জীবনযাত্রার চিত্র ফুটে উঠলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. রাজিব হোসেন ছুটে যান সোনা খলিফার কাছে। তাৎক্ষণিক খাবার সহায়তা করেন এবং তাদের আশ্বস্ত করেন, খুব দ্রুত সময়ে তাদের পূনর্বাসন করবেন। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল (১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় উপজেলার ধুবলিয়া এলাকায় গুচ্ছ গ্রামে একটি পাকা ঘরে তাকে পুনর্বাসন করা হয় এবং তার নিজ এলাকায় তার জন্য সরকারি জায়গা বরাদ্দ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

নতুন জায়গায় ঘর পেয়ে সোনা খলিফা বলেন, ‘আমার মাথা গোজার ঠাঁই ছিল না। বাধ্য হয়ে স্ত্রীকে নিয়ে ব্রিজের তলায় রাত কাটিয়েছি। কোনোদিন ভাবিনি, পাকা ঘর পাব। আজ থেকে আমি এখানেই থাকব, আমার ব্রিজ তলার দিন আজ থেকে অবসান হলো।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. রাজিব হোসেন বলেন, ‘আমরা তাদের আশ্বস্ত করেছিলাম, খুবই দ্রুত সময়ে তাদের পুনর্বাসন করব। আজ আমরা তাদের গুচ্ছ গ্রামে রেখে গেলাম। যতদিন ইচ্ছে থাকবে। এর মধ্যে তাদের জন্য একটু জায়গা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এরকম আরও কেউ থাকলে তাদের ব্যবস্থাও আমরা করব।’

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!