রবিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: মে ২১, ২০২৫, ০৯:২৩ পিএম

ঠাকুরগাঁও দলিল লেখক সমিতির বিরুদ্ধে কোটি টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: মে ২১, ২০২৫, ০৯:২৩ পিএম

ছবি-রূপালী বাংলাদেশ

ছবি-রূপালী বাংলাদেশ

ঠাকুরগাঁও সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের দলিল লেখক সমিতির বিরুদ্ধে বছরে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগ রয়েছে, তাদের এই চাঁদাবাজির দৌরাত্ম্য  ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের হয়রানি বন্ধ করতে সাব-রেজিস্ট্রার অফিস থেকে কয়েকবার লিখিত পদক্ষেপ নিলেও প্রতিকার হয়নি।

জানা  গেছে, একটি খোষ কবলা, হেবাবিল এওয়াজ, পাওয়ার দলিল সম্পাদন করতে দলিল লেখকদের মাধ্যমে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দাখিল করতে হয়। রেজিস্ট্রির পূর্বে মৌজাভিত্তিক নির্ধারিত দর অনুযায়ী পে-অর্ডার বা স্ট্যাম্প ঠিক থাকলে সাব-রেজিস্ট্রার দলিল সম্পাদন করেন।

একটি দলিল সম্পাদন করতে দলিল লেখকরা মৌজার নির্ধারিত হারে পে-অর্ডারের মাধ্যমে টাকার পাশাপাশি দলিল প্রতি জেনারেল ফি আড়াই হাজার টাকা, খারিজ না থাকলে এক হাজার টাকা, সমিতির চাঁদা বাবদ আরও আড়াই হাজার টাকা আদায় করে থাকেন দলিল লেখকরা। ওই টাকা সমিতিতে জমা না করলে বা জেনারেল ফি কেরানির কাছে জমা না করলে দলিল আটকে দেওয়া হয়।

বিশেষ করে এই অফিসে সমিতির নামে দৌরাত্ম্যের সঙ্গে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করা হয়। অবশ্য ৫ আগস্টের আগে টেবিল-চেয়ার নিয়ে মাঠে বসে সমিতির চাঁদা আদায় করা হলেও এখন অনেকটা চুপিসারে আদায় করা হচ্ছে।

এদিকে, বাংলাদেশ নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক শহিদুল আলম ঝিনুক স্বাক্ষরিত পত্রে বলা হয়, ‘দেশের কোনো সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে যেন দলিল লেখক সমিতির ব্যানারে দলিল লেখকরা অবৈধভাবে দলিল প্রতি নির্দিষ্ট হারে চাঁদা আদায় করা না হয়। এ ব্যাপারে সতর্ক ও নজরদারি রাখার জন্য সব সাব-রেজিস্ট্রার ও জেলার রেজিস্ট্রারদের নির্দেশ দেওয়া হলো।’

অভিযোগ রয়েছে, সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের দলিল লেখক সমিতির সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ সরকার নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ সরকারের ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সাবেক পানিসম্পদ মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেনের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে বেপরোয়াভাবে সমিতির নামে চাঁদাবাজি শুরু করেন। তার কাছে জিম্মি সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। একটি রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় কয়েক বছর ধরে সমিতির সভাপতির চেয়ারটি দখল করে রয়েছেন তিনি।

একাধিকা ব্যক্তির অভিযোগ, ‘জমি রেজিস্ট্রির ক্ষেত্রে নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে দলিল লেখক সমিতির বেপরোয়া চাঁদাবাজি ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার পরিবর্তন হলেও দলিল লেখক সমিতির চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি। তাদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। দলিল রেজিস্ট্রেশন করতে গেলে সমিতির নামে একটি নির্ধারিত হারে চাঁদা আদায় করা হয়। টাকা না দিলে কাজ হয় না। সে কারণে বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করাতে হয়।’

সমিতির সদস্য কছির উদ্দিন ‘অভিযোগ স্বীকার’ করে বলেন, ‘প্রতিদিন ৬০/৭০টি দলিল লেখা হয়। এর বিপরীতে সমিতির নামে দলিল প্রতি ৩০০ টাকা আদায় করা হয়। এ টাকা জমা হয় সংগঠনে। আর টাকা না পেলে দলিলের ফাইল ছাড়া হয় না। তবে এ টাকা সমিতির ফান্ডে জমা করা হয়। নিয়ম হলো- ৩০০ টাকা করে দিতে হবে। টাকা না দিলে কাজ কীভাবে হবে? নিজের পকেট থেকে তো দেওয়া সম্ভব না।’

জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে সনদপ্রাপ্ত দলিল লেখক রয়েছেন ৮১ জন। নিয়ম অনুযায়ী, দলিল লেখকরা দলিল লেখার বিনিময়ে প্রতি পৃষ্ঠা বাবদ ও সরকারি ফি’র হার নির্ধারণ করে, সে অনুযায়ী সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের সামনে একটি তালিকা করে টানিয়ে রাখার নির্দেশনা রয়েছে। 

এ ছাড়া লাইসেন্সধারী কোনো দলিল লেখক আইন লঙ্ঘন করলে সাব-রেজিস্ট্রার তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবেন। কিন্তু সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে এসব নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করছে না দলিল লেখক সমিতি।

দলিল করতে আসা আরিফুল ইসলাম, সমসের আলী ও আব্দুর রহিমসহ ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, ‘দুই শতক জমি রেজিস্ট্রি বাবদ সাড়ে তিন হাজার টাকা দিতে হয়েছে। দলিল লেখক সমিতি নিয়েছে ২ হাজার টাকা। এ ছাড়াও অফিস খরচ বাবদ দেড় হাজার।’

তারা বলেন, ‘শুনেছি ওই টাকা নাকি সমিতির সবাই ভাগ করে নেয়। টাকা না দিলে তো আর জমি রেজিস্ট্রি হয় না। তাই সবাই বাধ্য হয়ে টাকা দিচ্ছে। আবার কোনো কোনো ব্যক্তির কাছে নেওয়া হচ্ছে চার থেকে আট হাজার টাকা পর্যন্ত।’ 

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ভুক্তভোগী হুমায়ুন কবির রেজা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা যদি কোনো দলিল রেজিস্ট্রি করতে আসি, তখন দেখি দলিল লেখক সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বা তাদের মাধ্যমে যারা দলিল লিখে দেয়, এরা বিভিন্নভাবে প্রতি দলিলে মানুষকে চরমভাবে হয়রানি করে।’

‘যখন প্রশ্ন করি আপনাদের লেখার ফি কত? তখন তারা বলে তাদের নির্ধারিত কোনো ফি নেই। তারা তাদের মতো করে মানুষের পকেট কাটছে। সমিতির নামে এরা চাঁদাবাজি শুরু করেছে।’

তারা আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল ওয়াদুদ সরকার আর কত বছর সভাপতি থাকবেন। তিনি মানুষকে জিম্মি করে সমিতির নামে চাঁদাবাজি করছেন। তার সঙ্গে কথা বলতে গেলে টাকা ছাড়া কথা বলে না। সমিতির এমন বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে আমরা অতিষ্ঠ। এর প্রতিকার চাই।’

অভিযোগের বিষয়ে দলিল লেখক সমিতির সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি পরিচয় পেয়ে কথা না বলে ব্যস্ততা দেখিয়ে এড়িয়ে যান।

তবে নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘সমিতির নামে চাঁদাবাজি নয়, আমরা আমাদের পারিশ্রমিক নিয়ে থাকি। আর সেবা-প্রত্যাশীদের কাছে যে অর্থ নেওয়া হয়, তা সমিতির ফান্ডে জমা করা হয়। ঈদে বা সমিতির কোনো সদস্য অসুস্থ হলে তাদের সাহায্য করা হয়।’ 

একটি দলিল লেখাতে কত টাকা নেওয়া হয়- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দলিল লেখার নিদিষ্ট কোনো ফি নেই। অনেকেই খুশি হয়ে ৫-১০ হাজার টাকাও দেয়, আবার কেউ ২ হাজারও দেয়।’

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদরের সাব-রেজিস্ট্রার রেজাউল করিম বলেন, ‘সমিতির নামে জিম্মি করে দাতা বা গ্রহীতার কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় গ্রহণযোগ্য নয়। অফিসিয়ালি বলা হয়েছে, কাউকে জিম্মি করে সমিতির নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা যাবে না। মানুষ যেন সরকারি ফিতে সেবা পায় সে বিষয়ে নজর রাখা হচ্ছে। তারপরও অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হলে ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতনদের লিখিতভাবে জানানো হবে।’ 

‘এ ছাড়াও মাঝে মাঝে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলি। অভিযোগ থাকলে সমাধান করে দেই। তার পরেও যদি আমার অগচরে অনিয়ম বা হয়রানির অভিযোগ উঠে এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।- বলেন তিনি।

দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত ঠাকুরগাঁও জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আজমির শরিফ মারজী বলেন, ‘আমাদের জানামতে, সমিতির নামে চাঁদা বা অতিরিক্ত অর্থ নেওয়া যাবে না। তবে যদি নিয়ে থাকে আর আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেন, তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Shera Lather
Link copied!