কাশ্মীরের পাহেলগামে পর্যটকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় প্রশ্ন উঠে এসেছে। তবে এ ঘটনার পর ভারত ও পাকিস্তানের নেওয়া প্রতিক্রিয়াগুলো- যেমন সেনাবাহিনীর ফ্রিহ্যান্ড, সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিতকরণ, কূটনৈতিক সম্পর্ক সংকোচন, আকাশসীমা বন্ধ করা- সবই এক একটি স্পষ্ট ও কঠিন বার্তা।
তবু প্রশ্ন উঠছে, কী হবে পরবর্তী পদক্ষেপ? যুদ্ধ কি অনিবার্য?
সম্প্রতি ২২ এপ্রিল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হন। নয়াদিল্লি এ ঘটনায় পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তুললেও ইসলামাবাদ তা স্পষ্টভাবে অস্বীকার করেছে। পাকিস্তান বলছে, এ অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
এ ঘটনার পর দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি কূটনৈতিক ও সামরিক তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সীমান্তে সেনা মোতায়েন বাড়ানো, নজরদারি ড্রোনের ব্যবহার ও গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদানে কড়াকড়ি প্রমাণ করছে- উভয় দেশই এখন অত্যন্ত সতর্ক।
বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরেই সীমান্ত পার হয়ে সন্ত্রাসবাদকে মদদ দিয়ে চলেছে। ১৯৮৫ সালের পর থেকে এর ধারাবাহিকতা স্পষ্ট। আইএসআই, পাকিস্তানের সেনা ও বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের মধ্যে যে ত্রিভুজ তৈরি হয়েছে, তা ভারতের সার্বভৌমত্ব ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠেছে।
তবে এ ধরনের ঘটনার জবাব সামরিক না কূটনৈতিক উপায়ে দেওয়া হবে, তা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে।
কাশ্মীরে আর্টিকেল ৩৭০ বাতিলের পর রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়েছে। ভোটের হার বেড়েছে, পরিকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে, সংরক্ষণ নীতির সম্প্রসারণ হয়েছে, এমনকি পর্যটকের সংখ্যা বহুগুণে বেড়েছে।
কিন্তু সেই উন্নয়নের মাঝে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় একটি শিথিলতা দেখা গেছে, যা পাহেলগাম হামলার ক্ষেত্রে চিহ্নিত করা হচ্ছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসই এই গাফিলতির মূল কারণ।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ভারত-পাক সম্পর্ক কোনদিকে যাচ্ছে? সীমান্ত উত্তেজনা বাড়ছে, কূটনৈতিক চাপ তৈরি হচ্ছে, কিন্তু এক পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ কি সম্ভব?
বিশ্বরাজনীতি এই সম্ভাবনায় মোটেও উৎসাহী নয়। ভারতের অর্থনীতি বর্তমানে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম। এই অবস্থায় ভারত যদি যুদ্ধের দিকে এগোয়, তার প্রভাব শুধু উপমহাদেশে সীমাবদ্ধ থাকবে না। তা ছড়িয়ে পড়বে বিশ্ববাজার, জ্বালানি মূল্য এবং বহুজাতিক বাণিজ্যে।
এ ছাড়া, আমেরিকা, রাশিয়া, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন- কেউই এমন যুদ্ধের ঝুঁকি নিতে চাইবে না। যুদ্ধ মানে শুধু সেনা ও অস্ত্র নয়- তার মানে বিশ্বজুড়ে অস্থিরতা, বিনিয়োগে অনিশ্চয়তা এবং মানবিক বিপর্যয়।
এ ছাড়া, যুদ্ধের পরিণতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে; কারণ দুই দেশই পারমাণবিক শক্তিধর। যদিও সামরিক শক্তিতে ভারত অনেক এগিয়ে- সেনা সংখ্যা, ট্যাঙ্ক, যুদ্ধবিমান ও সামগ্রিক প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে- তবুও যুদ্ধ মানেই দুই পক্ষের ক্ষয়ক্ষতি।
ইতিহাস দেখিয়েছে, ভারত বারবার পাকিস্তানের ওপর কৌশলগতভাবে জয়লাভ করেছে, কিন্তু বর্তমান সময়ে এই বিজয় যে বিশ্ব রাজনীতিতে শুধু ভারতের পক্ষে যাবে, এমনটা ভাবা ভুল হবে।