হরমুজ প্রণালি বন্ধের অনুমোদন দিয়েছে ইরানের পার্লামেন্ট। এরপর থেকেই বাংলাদেশে শুরু হয়েছে আলোচনা। বিশ্লেষকরা বলছেন, হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এর ব্যাপক প্রভাব পড়বে।
যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও অধ্যাপক এড হির্স জানিয়েছেন, ইরানের হরমুজ প্রণালি বন্ধের ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। এই প্রণালি দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১৮ থেকে ২০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল পরিবাহিত হয়। অর্থাৎ বিশ্বের মোট তেলের প্রায় ২০ শতাংশ হরমুজ প্রণালি দিয়ে যায়। এই অঞ্চলের জন্য কোনো সহজ বিকল্প রুট নেই— বিশেষ করে সৌদি আরব, কুয়েত ও অন্যান্য উপসাগরীয় দেশগুলোর জন্য।’
হির্স ব্যাখ্যা করেন, যদি হরমুজ প্রণালি দিয়ে তেল পরিবহন অর্ধেকে নেমে আসে, তাহলে বিশ্ববাজারে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১২০ মার্কিন ডলার বা তারও বেশি হতে পারে। আর দাম বৃদ্ধির এই প্রভাব বিশ্বজুড়ে সব দেশের ওপরই দ্রুত পড়বে।
তিনি বলেন, ‘তেল সরবরাহ বন্ধ করে দিলে তা হবে সরাসরি বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর আক্রমণ, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ওপরও। এমন পরিস্থিতি হলে যুক্তরাষ্ট্র হয়তো ইরানের বিরুদ্ধে সরাসরি সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, হরমুজ প্রণালি বন্ধের প্রভাবে পড়বে বাংলাদেশে তেলের দামে, বৈদেশিক বাণিজ্যে, শিল্প উৎপাদনে এমনকি রপ্তানির প্রতিযোগিতায়ও। বৈদেশিক মুদ্রার বাজার চাপে পড়বে, আমদানি খরচ বাড়বে, ফলে বেড়ে যাবে পণ্যের দাম। এর ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় নেমে আসতে পারে এক নতুন দুর্দশা।
বিশ্লেষকরা আরও বলেন, ইরান শুধু বিশ্বের অন্যতম প্রধান তেল উৎপাদনকারী দেশই নয়, বরং হরমুজ প্রণালির কার্যত নিয়ন্ত্রকও। এখন এই পথ বন্ধ হওয়ায় জাহাজগুলোকে বিকল্প ও দীর্ঘ পথে ঘুরে আসতে হবে, যা আমদানি ও রপ্তানির খরচ বহু গুণ বাড়িয়ে দেবে। আর এই খরচ বৃদ্ধির ধাক্কা সরাসরি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলবে।
এর আগে, ইরানের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা সংস্থা সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের অনুমোদন সাপেক্ষে রোববার (২২ জুন) হরমুজ প্রণালি বন্ধের অনুমোদন দিয়েছে দেশটির পার্লামেন্ট। ওমান ও ইরানের মধ্যবর্তী এই গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক পথ দিয়ে বিশ্বে পরিবেশিত তেলের একটি বড় অংশ স্থানান্তরিত হয়। হরমুজ প্রণালি বন্ধের সম্ভাবনার খবর প্রকাশের পরপরই বৈশ্বিক বাজারে তেলের দামে ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা গেছে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চরম উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে।
হরমুজ প্রণালি বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং কৌশলগতভাবে সংবেদনশীল একটি সমুদ্রপথ। এটি পারস্য উপসাগরকে ওমান উপসাগরের সঙ্গে যুক্ত করেছে এবং ইরান ও ওমানের মাঝখানে অবস্থিত। প্রণালিটির প্রস্থ খুব বেশি নয়—সবচেয়ে সংকীর্ণ জায়গায় মাত্র ৩৯ কিলোমিটার, যার মধ্যে কেবল দুটি সংকীর্ণ চ্যানেল দিয়ে বড় জাহাজ চলাচল করতে পারে।
হরমুজ প্রণালি দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। ইরান প্রায়ই এই প্রণালিকে একটি কৌশলগত চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা বা সামরিক হুমকির জবাবে ইরান একাধিকবার হুমকি দিয়েছিলো যে, তারা হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দিতে পারে। যা গোটা বিশ্বের জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থায় চরম বিপর্যয় ডেকে আনবে।