গত আগস্ট মাসে দেশের বেসরকারি খাতের অন্যতম দি প্রিমিয়ার ব্যাংক পিএলসির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। গঠন করা হয় নতুন পরিচালনা পর্ষদ। পর্ষদের কার্যক্রম শুরুর পর থেকে নতুন আঙ্গিকে ‘থ্রি সি’ মডেলে কাজ করছে প্রিমিয়ার ব্যাংক। কনজ্যুমার, করপোরেট ও কনজারভেটিভ এই তিন কার্যক্রমে দেশের সেরা ব্যাংক হওয়ার প্রত্যাশা করছে ব্যাংকটি।
সাম্প্রতিক সময়ে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা জোরদার, আমানত ও ঋণ খাতে টেকসই প্রবৃদ্ধি এবং ডিজিটাল ব্যাংকিং খাতের সম্প্রসারণের ফলে ব্যাংকের আর্থিক অবস্থান আরও সুদৃঢ় হয়েছে। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক মানের অনলাইন সেবা, মোবাইল অ্যাপ ও ই-পেমেন্ট সিস্টেম চালুর ফলে গ্রাহকসেবার মান বহুগুণে বেড়েছে।
জানা গেছে, গত ১৯ আগস্ট বেসরকারি খাতের প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পর্ষদ গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রিমিয়ার ব্যাংকের নতুন পর্ষদে পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাকালীন ভাইস চেয়ারম্যান ও উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডার আরিফুর রহমান, যিনি তিন দশকের বেশি মধ্যপ্রাচ্যে চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত ছিলেন।
আর পাঁচ স্বতন্ত্র পরিচালক হলেন-বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মো. ফোরকান হোসেন, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ ফরিদুল ইসলাম, ব্যাংক এশিয়ার সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাজ্জাদ হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) অধ্যাপক শেখ মোর্শেদ জাহান এবং চার্টার্ড সেক্রেটারি এম নুরুল আলম। নুরুল আলমকে প্রাইম ইনস্যুরেন্সের স্বতন্ত্র পরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগের শর্তে প্রিমিয়ার ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।
এরপর গত ২১ আগস্ট ব্যাংকের ৩১৪তম পরিচালনা পর্ষদের সভায় প্রিমিয়ার ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান ও উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডার ডা. আরিফুর রহমানকে সর্বসম্মতিক্রমে ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়। প্রখ্যাত চিকিৎসক ও উদ্যোক্তা ডা. রহমানের রয়েছে জনস্বাস্থ্য, সামরিক চিকিৎসাসেবা, ব্যাংকিং ও ব্যবসায়িক নেতৃত্বে চার দশকেরও বেশি অভিজ্ঞতা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে স্নাতক হওয়ার পর তিনি সৌদি আরবে দীর্ঘ ও সাফল্যমণ্ডিত ক্যারিয়ার গড়ে তোলেন এবং সেখানকার একজন বিশ্বস্ত চিকিৎসক ও উপদেষ্টা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। বাংলাদেশি মানবসম্পদ বিদেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে ডা. রহমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এবং লাখ লাখ কর্মীর কর্মসংস্থান নিশ্চিত করেন। এ বিষয়ে তার অবদান ২০০৪ সালের ইউএনডিপি প্রতিবেদনে উল্লেখিত হয়েছে।
জানা গেছে, পরিচালনা পর্ষদের কার্যক্রম শুরুর পর থেকে নতুন আঙ্গিকে থ্রি সি মডেলে কাজ করছে প্রিমিয়ার ব্যাংক। কনজ্যুমার, করপোরেট ও কনজারভেটিভ এই তিন কার্যক্রমে দেশের সেরা ব্যাংক হওয়ার প্রত্যাশা করছে ব্যাংকটি। কনজ্যুমার ব্যাংকিং বলতে এখানে ব্যাংকের মূল ফোকাস থাকে সাধারণ গ্রাহকের ওপর। যেমন- সেভিংস ও কারেন্ট অ্যাকাউন্ট, ডিপোজিট স্কিম, পার্সোনাল লোন, হোম লোন, ক্রেডিট কার্ড। এই পদ্ধতিতে ব্যাংককে স্থায়ী আমানত ও ব্যাপক গ্রাহকভিত্তি এনে দেয়।
এ ছাড়া করপোরেট ব্যাংকিং মূলত ব্যাংক বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কোম্পানি, ইন্ডাস্ট্রি, করপোরেট ক্লায়েন্ট ইত্যাদিকে সেবা দেয়। যেমন: করপোরেট লোন, ট্রেড ফাইন্যান্স, ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল লোন, প্রকল্প অর্থায়ন, করপোরেট অ্যাডভাইজরি সার্ভিস। এই পদ্ধতিতে ব্যাংককে বড় অঙ্কের লেনদেন ও মুনাফা এনে দেয়। কনজারভেটিভ ব্যাংকিং মূলত সতর্ক বা ঝুঁকি নিরপেক্ষ ব্যাংকিং কৌশল। এ ধরনের ব্যাংক ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে খুব বেশি ঝুঁকি নেয় না। তারা নিরাপদ বিনিয়োগ, সরকারি বন্ড, উচ্চ ক্রেডিট রেটেড গ্রাহক এবং নিশ্চিত প্রজেক্টে অর্থায়ন করে। মূল লক্ষ্য থাকে লাভের চেয়ে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রিমিয়ার ব্যাংকের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় “থ্রি সি”কে মাথায় রাখতে চাই। থ্রি সি হচ্ছে কনজিউমার, করপোরেট ও কনজারভেটিভ। আগ্রাসী ব্যাংকিং আর নয়। দুই যুগের বেশি সময়ে এই ব্যাংকে অনেক কিছু হয়েছে। চাই নতুন আঙ্গিকে ব্যাংকটিকে দাঁড় করাতে। আমাদের দর্শন হচ্ছে নির্লোভ আমানতদারি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে সঙ্গে থাকায় এই ব্যাংক, ব্যাংকের আমানতকারী ও শেয়ারহোল্ডারদের প্রতি একটা দায়িত্ব অনুভব করি। ব্যাংকটার একটা সুন্দর অবস্থান তৈরি করাই হবে আমাদের মূল কাজ।’
ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সময়োপযোগী প্রযুক্তি সংযোজন, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও দক্ষতা এবং গ্রাহকদের আস্থা অর্জনই এই পরিবর্তনের মূল চালিকা শক্তি। বিশেষ করে ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা সম্প্রসারণ, মোবাইল অ্যাপ ও অনলাইন ট্রানজেকশনের নিরাপত্তা জোরদার করায় গ্রাহক সন্তুষ্টি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। একই সঙ্গে আমানত ও ঋণ খাতে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি প্রিমিয়ার ব্যাংকের আর্থিক অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন