পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর চালিতাবুনিয়া ইউনিয়ন নদীভাঙন ও জলোচ্ছ্বাসে চরমভাবে বিপর্যস্ত। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম এলেই প্লাবনে ভেসে যায় ঘরবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমনকি কবরস্থান পর্যন্ত। দীর্ঘদিনের এ দুর্দশার বিরুদ্ধে এবার রাজধানী ঢাকায় মানববন্ধনে সরব হয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
শুক্রবার (৪ জুলাই) সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে চালিতাবুনিয়াসহ রাঙ্গাবালীর বিভিন্ন ইউনিয়নের শতাধিক বাসিন্দা অংশ নেন। উপস্থিত ছিলেন শিক্ষার্থী, লেখক, সাংবাদিক, সামাজিক সংগঠকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
বক্তারা বলেন, ‘প্রতিবার ভোট আসে, প্রতিশ্রুতি আসে—কিন্তু বাস্তব রক্ষা আসে না। টেকসই কোনো বাঁধ হয়নি। লোক দেখানো কিছু প্রকল্প হলেও তা স্থায়ী নয়। বর্ষা এলেই আবার সব ভেসে যায়।’
তারা আরও জানান, প্রতিবছর যে বাঁধ মেরামত করা হয়, তা প্রথম ঢলেই ভেঙে পড়ে। তাই স্থায়ী ও কার্যকর সমাধান হিসেবে ব্লক দিয়ে টেকসই নদী রক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান তারা।
মানববন্ধনে তিন দফা দাবি উত্থাপন করে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল লতিফ মাসুম বলেন, ‘চালিতাবুনিয়ায় ব্লক দিয়ে টেকসই বাঁধ নির্মাণ, ভাঙনে গৃহহারা মানুষদের পুনর্বাসন এবং ভূমিহীনদের জন্য খাস জমি বরাদ্দের দাবি জানাচ্ছি। শুধু প্রতিশ্রুতি নয়, এবার চাই বাস্তব পদক্ষেপ। নদীভাঙনের কারণে অনেক পরিবার একাধিকবার ভিটেমাটি হারিয়েছে। তাই এই তিনটি দাবি শুধু চাওয়া নয়—এখন এটি তাদের মৌলিক অধিকার।’
মানবকল্যাণমূলক সংগঠন ‘বোধ’-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বাচসাস’র সাধারণ সম্পাদক রাহাত সাইফুল বলেন, ‘চালিতাবুনিয়ার মানুষ শুধু ঘর হারায়নি, তারা হারিয়েছে নিরাপত্তা, মৌলিক অধিকার এবং ভবিষ্যতের স্বপ্ন। এই নদীভাঙন কোনো নতুন সংকট নয়—বছরের পর বছর ধরে এটা চলছে। অথচ প্রতিবছরই প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি শোনা গেলেও বাস্তব উদ্যোগের ঘাটতি থেকেই গেছে। আজকের মানববন্ধন কেবল একটি কর্মসূচি নয়—এটি চালিতাবুনিয়ার অস্তিত্ব রক্ষার চিৎকার।’
‘আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ জানাই—এই এলাকাটিকে ‘দুর্যোগপ্রবণ ও ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল’ হিসেবে চিহ্নিত করে জরুরি ভিত্তিতে টেকসই বাঁধ নির্মাণ, গৃহহারা মানুষের পুনর্বাসন এবং ভূমিহীনদের জন্য খাস জমি বরাদ্দ—এই তিনটি দাবির বাস্তবায়ন নিশ্চিত করুন।’
এই মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন—ঢাকাস্থ চালিতাবুনিয়া সমিতির সহ-সভাপতি রাজিব জুবায়ের, বাহাউদ্দীন হাওলাদার, দেলোয়ার হোসেন, বিশিষ্ট শিল্পপতি রাকিবুল হাসান আলমাস, বাদল ফরাজী, রুবেল মুফতী, নিয়াজ খান, রায়হান মুফতীসহ চালিতাবুনিয়ার সাধারণ জনগণ।
আপনার মতামত লিখুন :