ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫

খানাখন্দ-যানজটে বাইপাইল-আশুলিয়ার সড়ক যেন মৃত্যুফাঁদ

সাভার প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ১, ২০২৫, ০৪:৩৮ পিএম
ড্রেন বন্ধ, রাস্তা ডুবে, শ্রমিকদের দুর্ভোগ অবিরাম। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

শিল্পাঞ্চল সাভারের বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার যানবাহনে লক্ষাধিক মানুষ চলাচল করে। অথচ বছরের বেশিরভাগ সময়ই গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি থাকে নাজুক অবস্থায়।

ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাবে অল্প বৃষ্টিতেই সড়কটির কয়েক কিলোমিটার অংশ পানিতে তলিয়ে যায়, যা প্রায় ছয় মাস স্থায়ী থাকে। এতে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে, প্রাণ হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ চলমান থাকায় দুর্ভোগ যেন এই পথের যাত্রীদের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে আগামী বর্ষার আগেই পরিস্থিতির উন্নয়ন হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) শফিকুল ইসলাম।

শুক্রবার (১ আগস্ট) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর মহাসড়কের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। ইপিজেড থেকে বাইপাইল বাসস্ট্যান্ড হয়ে জিরাবো পর্যন্ত পুরো সড়ক কাদা ও খানাখন্দে ভরা। খন্দকার মসজিদ থেকে শিমুলতলা এবং জামগড়া চৌরাস্তা থেকে ছয়তলা পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার এলাকায় জমে আছে পানি। কোথাও কোথাও কোমরসমান পানিও দেখা গেছে। গভীর গর্তে যানবাহন আটকে যাওয়ার ঘটনা নিয়মিত।

গত ১৬ এপ্রিল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে জামগড়া ফ্যান্টাসি কিংডমের লিয়া রেস্টুরেন্টের সামনে ড্রেনের গর্তে পড়ে যাত্রীবাহী একটি লেগুনার দুই পোশাক শ্রমিক নিহত হন। আহত হন আরও কয়েকজন।

স্থানীয় ‘জামগড়া পানি নিষ্কাশন ও ড্রেন-রাস্তা সংস্কার কমিটি’র উদ্যোগে চৌরাস্তা থেকে বাগবাড়ি পর্যন্ত ড্রেন ও রাস্তা সংস্কারের কাজ চলছে। এই উদ্যোগ এলাকার স্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ইঞ্জিনিয়ার মোর্শেদ আলম ভূঁইয়া বলেন, ‘সরকারি নয়নজুলি খালটি প্রভাবশালীরা দখল করে রাখায় সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তায় হাঁটু পানি জমে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় আমরা স্থানীয়রা নিজ উদ্যোগে ড্রেন পরিষ্কারের কাজ করছি।’

জামগড়া চৌরাস্তার এক দোকানদার জাকির বলেন, ‘অল্প বৃষ্টিতেই দোকানে পানি ঢুকে মালামাল নষ্ট হয়। ব্যবসায় ক্ষতি হয়। বছরের পর বছর সড়কটিতে পানি জমে থাকে, কিন্তু কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই।’

সড়কের পাশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য পোশাক কারখানা। ফলে লাখো শ্রমিকের চলাচলের একমাত্র ভরসা এই মহাসড়ক।

শ্রমিকরা জানান, ‘বৃষ্টির দিনে রাস্তা পানিতে তলিয়ে যায়, ভিজেই কারখানায় যেতে হয়। দুর্ঘটনায় অনেকেই আহত হন। যানজট তো নিত্যদিনের সঙ্গী। আর শুকনো মৌসুমে ধুলাবালিতে শ্বাসকষ্ট হয়।’

আশুলিয়া স্মার্ট পরিবহনের এক চালক বলেন, ‘এই সড়কে ১২ মাসই কষ্ট করে গাড়ি চালাতে হয়। বৃষ্টিতে পানি জমে গেলে যানজট ভয়াবহ রূপ নেয়। আধা ঘণ্টার রাস্তা যেতে দুই ঘণ্টা লেগে যায়।’

ট্রাফিক পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, ‘বৃষ্টির কারণে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা এই সড়কে যানজট লেগে থাকে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পাইলিংয়ের কাজের কারণে রাস্তা আরও সরু হয়ে গেছে।’

ঢাকা জেলা উত্তরের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (অ্যাডমিন) গোলাম সারোয়ার বলেন, ‘সড়কটি একদম নাজেহাল। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিকবার কথা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, একটি বাজেট পাশ হয়েছে এবং সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যে রাস্তার কার্পেটিং সম্পন্ন হবে।’

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আগামী বর্ষায় যাতে জনদুর্ভোগ না থাকে সেই লক্ষ্যেই রাস্তা ও ড্রেনেজ সংস্কারের কাজ চলছে। বৃষ্টির কারণে কাজ কিছুটা ব্যাহত হলেও বর্ষা শেষে পুরো সড়ককে চলাচলের উপযোগী করে তোলা হবে।’