গাজীপুর মহানগর পুবাইল এলাকার শাকিল বাহিনীর বিরুদ্ধে একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, শাকিলের রয়েছে একাধিক সন্ত্রাসী বাহিনী। সাংবাদিক পেশার আড়ালে সে একেক সময় একেক ব্যবসায়ীকে টার্গেট করে তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে মোটা অংকের টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে শুরু হয় তাদের মিথ্যা ও বানোয়াট সংবাদ প্রকাশ।
তাদের এহেন কর্মকাণ্ডে সাংবাদিক সমাজের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে বলে জানিয়েছেন টঙ্গী গাজীপুর এলাকার সিনিয়র সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।
তারা বলছেন, চাঁদাবাজি ও নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগে আনন্দ টিভির সাবেক ডিএনই প্রশান্ত কুমার দাস চাকরিচ্যুত হলেও নারী সাংবাদিক ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া ও অগণিত চাঁদাবাজির অভিযোগ থাকার সত্ত্বেও কোন খুটির জোরে শাকিল এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে। কেনই বা তার বিরুদ্ধে আনন্দ টিভির কর্তৃপক্ষ কোন ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
সচেতন মহলে প্রশ্ন উঠেছে সাংবাদিকতার প্রভাব খাটিয়ে টঙ্গী গাজীপুর এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা শাকিল বাহিনীর বিরুদ্ধে আনন্দ টিভি কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসন কবে ব্যবস্থা নিবে।
তারা আরও বলেন, গত কয়েক মাস আগেও আনন্দ টিভির উত্তরা তুরাগ থানা প্রতিনিধির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির ঘটনায় তুরাগ থানায় মামলা হওয়ার পরই তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। শাকিল সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে টঙ্গীর একাধিক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে চাঁদা দাবির বিষয়ে কল রেকর্ড থাকার পরও প্রশাসনের চোখে ফাঁকি দিয়ে এখনো তার চাঁদাবাজির রাম রাজত্ব চলছে। শাকিল নিজেকে সাংবাদিক দাবি করলেও মূলত সে একজন নিম্নমানের চাঁদাবাজ। টাকার জন্য শাকিল, সুজন, নোমান মারুফ সিন্ডিকেট করে ব্যবসায়ীদের হয়রানি করছে।
অভিযোগ রয়েছে, তারা টঙ্গীর জাবান হোটেলের বর্তমান পরিচালকের কাছে দিনে রাতে মোবাইল ফোন ছাড়াও স্ব-শরীরে গিয়ে চাঁদা দাবি করছে। গভীর রাতে এই চক্রটি টঙ্গীর ৩ তারকা জাবান হোটেলে আশা দেশি-বিদেশি মেহমানদের হয়রানি করছে। সুযোগ বুঝে তারা মেহমানদের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
জাবান হোটেলের কর্তৃপক্ষ আরও জানান, শাকিল বাহিনী মোবাইল ফোনে তার নিকট ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দেওয়ায় তাদের হোটেলের নামে মিথ্যা ও বানোয়াট সংবাদ প্রকাশ করে। সংবাদে তারা ৫ আগস্টের আগের ফুটেজ ব্যবহার করে, যা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রনোদিত ও অপেশাদার আচরণ।
কর্তৃপক্ষ আরও বলেন, সাংবাদিকতা একটা মহান পেশা, এই মহান পেশাকে নামধারী বিপদগামী কিছু লোক টাকা কামানোর মেশিন হিসেবে ব্যবহার করছে। এই সংঘবদ্ধ চক্রটির হাত থেকে ব্যবসায়ীদের বাঁচাতে তারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশ বাহিনী সহযোগিতা কামনা করছেন।
গাজীপুর মহানগর ৫১ নং ওয়ার্ডের মো. মিজানুর রহমানের ছেলে শাকিলের টিমে রয়েছে সুজন, নোমান ও মারুফসহ আরো কয়েকজন। শাকিল নিজেকে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল (আনন্দ টিভি) প্রতিবেদক পরিচয় দিয়ে তিনি দীর্ঘদিন ধরে সরকারি বেসরকারী কর্মকর্তাসহ সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায় করছেন বলে একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
পূবাইল এলাকায় কর্মরত একাধিক সাংবাদিক জানান, শাকিল একজন অপেশাদার ও বিতর্কিত ব্যক্তি। পেশাদার সাংবাদিকদের পরিচয় ও মর্যাদাকে ব্যবহার করে সে গড়ে তুলেছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র।
অভিযোগ রয়েছে, তার নেতৃত্বে থাকা ৫-৬ জনের একটি দল বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে গিয়ে কখনো দুদক কর্মকর্তা, কখনো সাংবাদিক কিংবা পুলিশের পরিচয়ে ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করে।
গত ২৭/০৪/২০২৫ পূবাইল থানাধীন খিলগাঁও গ্রামের বাসিন্দা সোলাইমান নামের এক ব্যবসায়ীর পূবাইল থানায় দায়ের করা এক লিখিত অভিযোগে থেকে জানা যায়, শাকিল তার নিকট ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। টাকা না দিলে সোলাইমান ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে ভূমিদস্যুতাসহ নানা মিথ্যা অভিযোগ তুলে সংবাদ প্রচারের হুমকি দেন।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, গত ২৭ এপ্রিল বিকেল আড়াইটার দিকে শাকিল সোলাইমানের সামনে গিয়ে মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করতে থাকেন।
ভিডিওর কারণ জানতে চাইলে শাকিল বলেন, ‘কারণ জানতে হবে না, বাঁচতে চাইলে ১০ লাখ টাকা নিয়ে আমার বাসায় আসেন, না হলে খবর প্রচার হবে।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, শাকিল এর আগে ও এক নারী সংবাদকর্মীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে একাধিক মাদক মামলা রয়েছে। তার বিরুদ্ধে ২০২৩ সালে পূবাইলে চাঁদাবাজির সময় গণপিটুনির শিকার হওয়ার ঘটনাও রয়েছে।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীরা অবিলম্বে শাকিল ও তার সিন্ডিকেটকে গ্রেপ্তার করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন