রবিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রহিম শেখ

প্রকাশিত: আগস্ট ২৩, ২০২৫, ১০:৫২ পিএম

পলিসির কোটি টাকা নিয়ে উধাও ‘ইফান ইন্স্যুরেন্স’ 

রহিম শেখ

প্রকাশিত: আগস্ট ২৩, ২০২৫, ১০:৫২ পিএম

পলিসির কোটি টাকা নিয়ে উধাও ‘ইফান ইন্স্যুরেন্স’ 

দেশে বেশ কয়েকটি কোম্পানি সময়মতো বিমা দাবি পরিশোধ করতে পারছে না। এ অবস্থায় বিমা খাতের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা বেড়েছে। এ কারণে পিছিয়ে পড়ছে বিমা খাত। অন্যদিকে বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থার দুর্বলতায় গ্রাহকের টাকা-পয়সা নিয়ে অনেকে পালিয়ে গেছেন। দীর্ঘদিন ঘুরেও বিমার টাকা ফেরত পাচ্ছেন না গ্রাহক।

এর মধ্যেই ‘ইফান ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড’ নামের একটি ভুয়া বিমা প্রতিষ্ঠান গাড়ির ইন্স্যুরেন্স করিয়ে দেওয়ার কথা বলে বহু গ্রাহকের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। অথচ এমন কোনো প্রতিষ্ঠান বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ অনুমোদন দেয়নি।

নামমাত্র প্রিমিয়াম দিয়ে গাড়ির বাজারমূল্যের সর্বোচ্চ কাভারেজ এমন প্রলোভন দিয়ে গ্রাহক আকৃষ্ট করেছে প্রতারক কোম্পানিটি। রাজধানীর গুলশানে যে ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে, সেখানেও কোম্পানির কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। শুধু একটি মোবাইল ফোন নম্বর দিয়েই অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারকচক্র।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাংলাদেশে বিমা-সেবা জনপ্রিয় হলেও আইনি ফাঁকফোকর এবং ভোক্তা অজ্ঞতার কারণে প্রতারকচক্র এই সুযোগ নিচ্ছে। ভোক্তাদেরও সতর্ক থাকা জরুরি। একই সঙ্গে বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওয়েবসাইট থেকে বৈধ কোম্পানির তালিকা দেখা উচিত।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ‘ইফান ইন্স্যুরেন্স’ মূলত ফেসবুক বিজ্ঞাপন ও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ব্যবহার করে গ্রাহক খুঁজে নেয়। অনলাইনে আকর্ষণীয় অফার, ‘শতভাগ ক্লেইম নিশ্চয়তা’ এবং দ্রুত ডেলিভারির প্রতিশ্রুতি দিয়ে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে। পরে গ্রাহকের কাছ থেকে নগদ অর্থ বা ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে টাকা নিয়ে একটি ভুয়া পলিসি সার্টিফিকেট সরবরাহ করে।

বিমা খাতের এক বিশেষজ্ঞ বলেন, এরা সাধারণত নতুন গাড়ির মালিক বা অল্প খরচে বিমা করতে আগ্রহীদের টার্গেট করে। প্রিমিয়ামের অর্ধেক দাম অফার দিয়ে মানুষকে প্রলুব্ধ করছে। ফেসবুক পেইজে বলা হয়েছে, ইফান গ্রুপের একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ‘ইফান ইন্স্যুরেন্স’। অথচ দেশে ইফান গ্রুপের নামে কোনো প্রতিষ্ঠানেরও অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। রাজধানীর গুলশানে দেওয়া ঠিকানায় ‘ইফান ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড’ নামে কোনো কোম্পানির খোঁজ মেলেনি।

পলিসি গ্রাহকদের যে সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে, সেখানে সড়ক নম্বর ১০৪, গুলশান-২ লেখা। বাড়ি নম্বর কত- এ ধরনের কোনো তথ্য নেই। এ ছাড়া একটি মোবাইল নম্বর ০১৩২২-৪১০২৮৩ দেওয়া আছে। গ্রাহক সেজে এই নম্বরে ফোন দেওয়া হলে নিজেকে ‘ইফান ইন্স্যুরেন্স’ কোম্পানির মালিক মেজর ফারজানা পরিচয় দেন। বলেন, ‘হোয়াটসঅ্যাপে গাড়ির কাগজ এবং বিকাশে পলিসির টাকা পাঠালে বিমা কাভারেজ সক্রিয় হবে। অফিসে আসতে চাইল জানানো হয়, প্রধান কার্যালয় স্থানান্তরিত হচ্ছে। এই মুহূর্তে অফিসে আসা যাবে না। মোবাইল ফোনেই অফিসের কাজ সম্পন্ন হচ্ছে।’

পরে সাংবাদিক পরিচয়ে ফোন দেওয়ার পরই লাইন কেটে দেয় প্রতারকচক্র। হোয়াটসঅ্যাপে ফোন দিলেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। ইন্স্যুরেন্সের সার্টিফিকেটে দেওয়া ই-মেইলে যোগাযোগ করা হলে তিন দিনেও কোনো উত্তর আসেনি। 
  
ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম তার ব্যক্তিগত প্রাইভেট কারের জন্য একটি কম খরচের ইন্স্যুরেন্স খুঁজছিলেন। হঠাৎই একদিন একটি অচেনা নম্বর থেকে ফোন আসে, যেখানে নিজেকে ‘ইফান ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড’-এর প্রতিনিধি পরিচয়ে এক ব্যক্তি জানান, ‘মাত্র ৩৫ হাজার ৫৩ টাকায় এক বছরের ফুল কাভারেজ গাড়ির ইনস্যুরেন্স করে দিচ্ছি।’

এক বছরের মধ্যে গাড়ির বাজারমূল্যের সর্বোচ্চ কাভারেজ ৩৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা পাওয়া যাবে। পেমেন্ট করার জন্য পাঠানো হয় একটি বিকাশ নম্বর এবং নিশ্চিত করে বলা হয়, পলিসি কাগজ স্ক্যান করে পাঠিয়ে দেওয়া হবে এক ঘণ্টার মধ্যে।

কিন্তু টাকা পাঠানোর পর যোগাযোগ বন্ধ, নম্বর বন্ধ, পলিসি আসে না এবং কোনো অফিসের খোঁজও পাওয়া যায় না। শফিকুল একা নন। অনলাইন ফোরাম, ফেসবুক গ্রুপ এবং ভুক্তভোগীদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, এমন প্রতারণার শিকার হয়েছেন আরও শতাধিক ব্যক্তি, যাদের প্রত্যেকে ৩৫ হাজার ৭৫ টাকা দিয়েছেন।

রাজধানীর উত্তরার বাসিন্দা রুবেল আহমেদ জানান, ‘আমাকে বলা হয় গাড়ির সমমূল্যের কাভারেজ পাওয়া যাবে। সেই আশায় বিমার প্রিমিয়াম দিই। কিন্তু পরে বুঝি, প্রতারণা ছিল। ফোনও বন্ধ, পেমেন্টের রসিদই একমাত্র প্রমাণ। তিনি বলেন, অফিস খুঁজে পাইনি। যেখান থেকে ফোন করেছে, সেটা ট্রেস করলে আরও অনেক প্রতারণার ঘটনা সামনে আসবে বলে তিনি জানান। 

রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা মোহাম্মদ শাহীন পেশায় গাড়িচালক মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে গাড়ির বিমা পলিসি নেন। আকর্ষণীয় অফারের কথা বলে মাত্র অর্ধেক প্রিমিয়ামে এক বছরের বিমা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় ‘ইফান ইন্স্যুরেন্স’। তিনি রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ওরা বলেছিল, দেশের শীর্ষ বিমা কোম্পানির মতোই সার্ভিস দেবে। আমি ভরসা করে ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে পলিসি নিই। কিন্তু দুর্ঘটনার পর ক্ষতিপূরণ চাইতে গেলে বলে, কাগজপত্র প্রক্রিয়াধীন। এক মাস দৌড়াদৌড়ি করার পর জানতে পারি, বাংলাদেশে ‘ইফান ইন্স্যুরেন্স’ নামে কোনো কোম্পানি নেই।’

জানতে চাইলে চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম জিয়াউল হক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, বাংলাদেশে বিমা সেবা জনপ্রিয় হলেও আইনি ফাঁকফোকর এবং ভোক্তা অজ্ঞতার কারণে প্রতারক চক্র এই সুযোগ নিচ্ছে। গ্রাহকেরও সতর্ক থাকা জরুরি। একই সঙ্গে বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওয়েবসাইট থেকে বৈধ কোম্পানির তালিকা দেখা উচিত।

বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন পরামর্শক সাইফুন্নাহার সুমি রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘ইফান ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড’ নামে কোনো নিবন্ধিত কোম্পানি দেশে নেই। যারা এই নামে পলিসি বিক্রি করছে, তারা স্পষ্টভাবে প্রতারণা করছে। তিনি আরও জানান, নিবন্ধন ছাড়া কোনো কোম্পানি বিমা ব্যবসা করতে পারে না। এ ধরনের প্রতারণা চক্র বিমা খাতের প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট করছে।

Link copied!