অবশেষে ২৮ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে এসেছে রাজধানীর মিরপুর রূপনগরের শিয়ালবাড়ি এলাকার ভয়াবহ কেমিক্যাল গোডাউনের আগুন। দ্বিতীয় দফায় বুধবার সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আবারও আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেন এবং দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে।
তবে উদ্ধার ও অনুসন্ধান অভিযান শেষ করতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে ঘটনাস্থলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ভবনটির বেশিরভাগ অংশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ভেতরে প্রবেশ করে সার্চ অপারেশন চালানো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাই ধাপে ধাপে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কাজ করা হচ্ছে। এই অভিযান সম্পূর্ণ করতে আরও ৩৬ থেকে ৭২ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমাদের রাজউক বা সংশ্লিষ্ট ভবনবিশারদরা এই ভবনটির ক্ষতির পরিমাণ সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে পারবেন। আপাতদৃষ্টিতে বলা যায়, এটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। এমন অবস্থায় সার্চ অপারেশন চালানো মানে জীবন নিয়ে ঝুঁকি নেওয়া।’
মঙ্গলবার সকাল ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে মিরপুরের শিয়ালবাড়ি এলাকায় অবস্থিত ‘আলম ট্রেডারস’ নামের কেমিক্যাল গোডাউনে আগুনের সূত্রপাত হয়। ভবনটির নিচতলায় রাসায়নিক দ্রব্যের গুদাম এবং ওপরের তলায় একটি পোশাক কারখানা ছিল।
মুহূর্তের মধ্যেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো ভবনে, ফলে ভেতরে থাকা বহু শ্রমিক আটকা পড়েন। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দীর্ঘ সময় ধরে উদ্ধার অভিযান চালান এবং এ সময় ভবনের ভেতর থেকে একাধিক পোড়া লাশ উদ্ধার করতে দেখা যায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ভবনটির নিচতলায় থাকা কেমিক্যাল গোডাউনটি ছিল অবৈধ এবং অননুমোদিত। এর কোনো সুরক্ষা ব্যবস্থা ছিল না, এমনকি দাহ্য পদার্থ রাখারও অনুমতি ছিল না। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এই গোডাউনেই আগুন দ্রুত ভয়াবহ আকার ধারণ করে, যার ফলে নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খেতে হয় দমকল বাহিনীকে।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক তাজুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে অন্তত ছয়-সাত ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য ছিল, যার সঠিক প্রকৃতি ও ঝুঁকি আমরা এখনো নির্ধারণ করতে পারিনি। ধীরে ধীরে এগুলো ড্রেন আউট করা হচ্ছে, পানি দিয়ে ফায়ারফ্লোর সমান করে প্রতিটি স্তরে কাজ চলছে। এটি সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া, আমরা সিস্টেমেটিকভাবে আগাচ্ছি।’
তিনি আরও জানান, ‘আলম ট্রেডারসের মূল ফটকটি তালাবদ্ধ অবস্থায় ছিল। তাই ভিতরে কেউ আছে কি না তা জানতে বিশেষ অভিযান চালাতে হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ধারণা করা হচ্ছে, ভিতরে আর কেউ জীবিত বা মৃত অবস্থায় নেই।’
অবৈধ গোডাউন হিসেবে আগে থেকেই আলম ট্রেডারসকে চিহ্নিত করা হয়েছিল বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘আমাদের অবৈধ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় এই গুদামটির নাম ছিল। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে জানানো হয়েছিল এবং তিন দফা নোটিশও দেওয়া হয়েছিল। এমনকি অভিযান পরিচালনার প্রক্রিয়ায়ও ছিল এটি।’
এদিকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুরো এলাকা এখনো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন। ভবনের ভেতরে বিপুল পরিমাণ কেমিক্যাল থাকায় দুর্গন্ধ ও বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশে। নিহতদের স্বজনরা দগ্ধ লাশ শনাক্তে রূপনগর এলাকায় ভিড় করেছেন।
অগ্নিকাণ্ডে ঠিক কতজন হতাহত হয়েছেন তা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে জানা যায়নি। তবে স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, আগুন লাগার সময় ভবনের ভেতরে অন্তত কয়েক ডজন শ্রমিক কাজ করছিলেন। উদ্ধার অভিযান চলমান থাকায় নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।