ঢাকা সোমবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৫

কার্গো ভিলেজে আগুনে ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে: ইএবি

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: অক্টোবর ২০, ২০২৫, ০৩:৪৭ পিএম
শাহজালালের আগুনে ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ছবি- সংগৃহীত

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রায় এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার, অর্থাৎ প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছে এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি)।

সোমবার (২০ অক্টোবর) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংগঠনটির সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম আলী।

ইএবি সভাপতি অভিযোগ করে বলেন, ‘কার্গো ভিলেজের মতো একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় কার্যকর অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ও ফায়ার ডিটেকশন সিস্টেম ছিল না, যা এই ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির প্রধান কারণ। তিনি বলেন, “কার্গো ভিলেজে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার পণ্য আমদানি ও রপ্তানি হয়। অথচ সেখানে আগুনের মতো একটি মৌলিক ঝুঁকি মোকাবেলার কোনো কার্যকর ব্যবস্থাই ছিল না।’

হাতেম আলীর মতে, এই গাফিলতির দায় কোনোভাবেই এড়ানো যায় না। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় সুরক্ষা ব্যবস্থার ঘাটতি প্রমাণ করে কতটা অব্যবস্থাপনা ও দায়িত্বহীনতা ছিল। এর দায় অবশ্যই নির্দিষ্ট করতে হবে।

কার্গো ভিলেজ মূলত তৈরি পোশাক, ফার্মাসিউটিক্যালস, কৃষিপণ্য, হিমায়িত খাদ্য, ইলেকট্রনিকস, যন্ত্রাংশ, অ্যাক্সেসরিজ ও আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিসের আদান-প্রদানে ব্যবহৃত হয়। এ কারণে এই একটিমাত্র ঘটনার অভিঘাত পড়েছে অসংখ্য খাতে।

ইএবি সভাপতি বলেন, ‘ই আগুনে শুধু কার্গোই পুড়েনি, পুড়েছে দেশের রপ্তানি সম্ভাবনা, বাজারের বিশ্বাস এবং উদ্যোক্তাদের আত্মবিশ্বাস। পচনশীল ও সময়-সংবেদনশীল পণ্য সময়মতো গন্তব্যে না পৌঁছালে পুরো চালান নষ্ট হয়ে যায়। এতে রপ্তানিকারকরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হন, তেমনি দেশের ভাবমূর্তিও প্রশ্নবিদ্ধ হয়।’

সংবাদ সম্মেলনে ইএবি আশঙ্কা প্রকাশ করে জানায়, এই ধরনের দুর্ঘটনার খবর শুনে বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য ও সরবরাহ চেইনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে পারেন। এতে অদূর ভবিষ্যতে অর্ডার বাতিল, বাজার হারানো এবং আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

হাতেম আলী বলেন, ‘ক্রেতারা সবসময় নির্ভরযোগ্য সরবরাহ চান। এই ঘটনায় প্রমাণ হলো, আমরা এখনও নিরাপদ সরবরাহের নিশ্চয়তা দিতে পারছি না। এর খেসারত ভবিষ্যতে আরও বড় ক্ষতির মাধ্যমে দিতে হতে পারে।’

ইতোমধ্যে ইএবি তাদের সদস্যদের কাছে জরুরি বার্তা পাঠিয়ে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক ক্ষতির তালিকা সংগ্রহ শুরু করেছে। তবে ক্ষতির প্রকৃত চিত্র পেতে আরও সময় লাগবে বলে জানানো হয়।

সংগঠনের প্রাথমিক ধারণা অনুযায়ী, সরাসরি পুড়ে যাওয়া পণ্যের পাশাপাশি এই পণ্য থেকে উৎপাদিত সম্ভাব্য রপ্তানি আয়ের ক্ষতিও হিসাবের অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এ ছাড়া আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় আগাম বিপণন পরিকল্পনা, আন্তর্জাতিক চুক্তি এবং সময়সীমা সংক্রান্ত জটিলতা তৈরি হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।

ইএবি জানায়, শুধু কার্গো ভিলেজ নয়, গত কয়েক দিনের ব্যবধানে আশুলিয়া, মিরপুর, চট্টগ্রাম ইপিজেড এবং ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসেও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এই ধারাবাহিক ঘটনা উদ্যোক্তাদের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে চরম উদ্বেগ ও শঙ্কা তৈরি করেছে।

হাতেম আলী প্রশ্ন রাখেন, ‘এই ঘটনাগুলো কি নিছক দুর্ঘটনা, নাকি এর পেছনে কোনো দুরভিসন্ধি রয়েছে? তদন্তেই সেটি বেরিয়ে আসবে।’

সংবাদ সম্মেলনে ইএবি সরকারের কাছে দ্রুত, স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ তদন্ত শুরুর দাবি জানিয়েছে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে সব আমদানি-রপ্তানি স্থাপনায় আধুনিক অগ্নি সতর্কতা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার আহ্বান জানায়।

সংবাদ সম্মেলনে ইএবির শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি রপ্তানিকারক ও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর বহু প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। তারা সবাই এই ক্ষয়ক্ষতির ঘটনায় তীব্র উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।