দীপাবলির আলোর উৎসবে এ বছরও ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে উদ্যাপন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আজ সোমবার (২০ অক্টোবর) তিনি গোয়া ও কর্ণাটকের করওয়ার উপকূলে ভারতীয় নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ আইএনএস বিক্রান্ত-এ নৌসেনাদের সঙ্গে দীপাবলি পালন করেন। ঢেউয়ের ধাক্কা, আরব সাগরের ঝলকানি এবং বিক্রান্তের বিশাল লৌহময় কাঠামো ঘিরে আলোর উৎসবে প্রধানমন্ত্রী দেশপ্রেম, গর্ব ও সামরিক শক্তির প্রতীকী এক দৃশ্য তৈরি করেন।
এই উপলক্ষে নৌবাহিনীর শত শত সদস্যের উদ্দেশে মোদী বলেন, ‘আইএনএস বিক্রান্ত পাকিস্তানের রাতের ঘুম হারাম করে দিয়েছে। বিক্রান্ত নামটাই শত্রুর মনে ভয় ধরিয়ে দেয়। যদি এর নামই পাকিস্তানের সাহস কাঁপিয়ে দেয়, তাহলে ভাবুন, এই জাহাজের শক্তি কতটা!’
মোদী বলেন, ‘আইএনএস বিক্রান্ত কেবল একটি যুদ্ধজাহাজ নয়, এটি আধুনিক ভারতের উদ্ভাবন, শ্রম এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতার প্রতীক। এছাড়াও এটি ভারতের এক বিশাল আত্মনির্ভরের প্রতীক। এই রণতরী ভারতের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা, আমাদের বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের মেধা, এবং জাতীয় সংকল্পের মূর্ত প্রতিফলন।’
তিনি আরও বলেন, ‘একবিংশ শতাব্দীর কঠোর পরিশ্রমের ফল পেয়েছে ভারত, উদ্ভাবন এবং দৃঢ় সংকল্পের উপর দাঁড়িয়ে এখন আমরা। কেননা বিক্রান্ত তার জীবন্ত প্রমাণ। বিক্রান্ত বিশাল, বিক্রান্ত অনন্য, বিক্রান্তই বিশেষ।’
মোদী বলেনন, ‘কয়েক মাস আগেই ভারতীয় নৌবাহিনীর পরিচালনায় বিক্রান্ত পাকিস্তানের উপকূলীয় কার্যকলাপকে ব্যাহত করে এবং ‘পুরো পাকিস্তানের ঘুম হারাম করে দেয়।’
মোদী স্মরণ করান সাম্প্রতিক ‘অপারেশন সিঁদুর’, যা শুরু হয়েছিল ৭ মে, কাশ্মীরের পাহেলগামে ২২ এপ্রিলের সন্ত্রাসী হামলার জবাবে। তিনি বলেন, ‘ভারতীয় নৌবাহিনীর ভয় ধরানো শক্তি, বিমানবাহিনীর অসাধারণ দক্ষতা এবং স্থলবাহিনীর বীরত্ব- এই তিন বাহিনীর সমন্বয়েই পাকিস্তানকে কয়েক দিনের মধ্যেই হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য করা হয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের প্রতিরক্ষা সরঞ্জামগুলো এখন বিশ্বের নজর কাড়ছে। কারণ ‘অপারেশন সিঁদুরে’ ব্রহ্মস ও আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণ করেছে। বিশ্বের বহু দেশ এখন এগুলো কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছে।’
দীপাবলির আলোয় জাহাজের ডেকে দাঁড়িয়ে মোদী বলেন, ‘আজ এক অনন্য দিন। একদিকে অসীম সমুদ্র, অন্যদিকে ভারতের সাহসী সন্তানরা। এই দৃশ্য অবিস্মরণীয়। সমুদ্রের জলে সূর্যের আলোয় যে ঝলকানি, তা যেন তোমাদের প্রজ্বলিত দীপাবলির প্রদীপের মতো।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই জাহাজগুলো লোহার তৈরি হতে পারে, কিন্তু যখন তোমরা এগুলোতে আরোহণ করো, তখন এগুলো জীবন্ত, শ্বাসপ্রশ্বাসে ভরপুর এক সশস্ত্র বাহিনীতে পরিণত হয়। তোমাদের শক্তিই ভারতের আসল শক্তি।’
রাতভর আইএনএস বিক্রান্তে অবস্থান করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিক্রান্তে কাটানো রাতটি ছিল এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা। তোমাদের দেশপ্রেম, উৎসাহ এবং আত্মত্যাগের চেতনা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। আমি বুঝেছি, যুদ্ধক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে একজন সৈনিকের অনুভূতি কোনো শব্দেই ধরা যায় না।’
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় ১৯৭১ সালের যুদ্ধের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘১৯৭১ সালে তখনো বিক্রান্ত নামটাই পাকিস্তানের মনে ভয় সৃষ্টি করেছিল। ভারতীয় নৌবাহিনীর কৌশল, বিমানবাহিনীর দক্ষতা এবং সেনাবাহিনীর সাহসিকতা মিলিয়ে তিন বাহিনীর ঐক্যই পাকিস্তানকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করেছিল।’
মোদী আরও বলেন, ‘ভারতের প্রতিরক্ষা খাতে স্বনির্ভরতা এখন জাতীয় অগ্রাধিকারের বিষয়। দেশীয় প্রযুক্তিতে নির্মিত বিক্রান্ত সেই আত্মনির্ভর যাত্রার অন্যতম শ্রেষ্ঠ উদাহরণ।’
প্রধানমন্ত্রী মোদী ২০১৪ সাল থেকে প্রতি বছর দীপাবলির দিন দেশের সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে উৎসব উদ্যাপন করে আসছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মানুষ যেমন পরিবারের সঙ্গে দীপাবলি পালন করে, আমিও তেমনই ভালোবাসি। আমার পরিবার হলো আমাদের সৈনিকেরা- যারা ভারতের সীমান্ত ও সমুদ্র রক্ষা করে।’
উল্লেখ, গত বছর প্রধানমন্ত্রী দীপাবলি পালন করেছিলেন গুজরাটের কচ্ছ অঞ্চলে, ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের কাছে বিএসএফ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে।