বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) শিক্ষার্থীদের আবাসন ব্যবস্থায় এসেছে দৃষ্টান্তমূলক পরিবর্তন। গত বছরের ৫ গস্টের পর থেকে হলে সিট বরাদ্দের ক্ষেত্রে আগের মতো আর কোনো ভোগান্তির মুখোমুখি হতে হচ্ছে না শিক্ষার্থীদের। হল প্রশাসনের সক্রিয়তা, কড়াকড়ি নজরদারি ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত উদ্যোগের ফলে এখন স্বচ্ছ ও সুষ্ঠুভাবে আসন বরাদ্দ করা হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ঘুরে দেখা গেছে, সিট পাওয়ার জন্য আর রাজনৈতিক লবিং বা অনৈতিক লেনদেনের প্রয়োজন নেই। ভর্তি সম্পন্ন হওয়ার পরপরই প্রশাসনের সরাসরি হস্তক্ষেপে শিক্ষার্থীরা সিট পাচ্ছেন। এমনকি একাধিক হলে প্রভোস্টরা নিজেরাই শিক্ষার্থীদের রুমে রুমে গিয়ে সিট বরাদ্দ করছেন।
ঈশা খাঁ হল প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে প্রশাসনের তদারকিতে সিট বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। কিছু সিট সংকট থাকলেও, ছেলেদের নতুন হলটির সম্প্রসারণ কাজ শেষ হলে তা অনেকটাই লাঘব হবে।
আশরাফুল হক হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. আলম মিয়া বলেন, ‘হল প্রশাসন সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে যাতে প্রত্যেক শিক্ষার্থী সিট পায় এবং কোনো সংকট না থাকে। আগে যে কমনরুম ব্যবহার হতো, তা এবার প্রথম বর্ষের ৫২ শিক্ষার্থীর জন্য সিট বরাদ্দে ব্যবহার করা হয়েছে। রাজনৈতিক প্রভাব বা গেস্টরুম কালচার, র্যাগিং- এসব এখন অতীত। আমি এবং হাউজ টিউটররা নিয়মিত শিক্ষার্থীদের খোঁজ-খবর রাখছি।’
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের প্রথম বর্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী নিলয় বসাক বলেন, ‘প্রথমে কিছুটা অস্বস্তির কথা ভাবলেও, হল পরিবেশ অনেক ভালো পেয়েছি। প্রভোস্ট স্যারের মাধ্যমে সিট পেয়েছি, সিনিয়র ভাইয়ারাও সহযোগিতা করেছেন। রুমমেটদের সঙ্গেও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। বাইরে যেসব নেতিবাচক কথা শুনতাম, বাস্তবে তেমন কিছু দেখিনি।’
অন্যদিকে ছাত্রীদের জন্য বেগম খালেদা জিয়া হলের নির্মাণ কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। দশতলা বিশিষ্ট এই হলে প্রায় ১২০০ ছাত্রী আবাসনের সুযোগ পাবে। প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. আবদুল কাদের জানান, ‘হলের একটি ব্লকের ছয়তলা পর্যন্ত নির্মাণ শেষ হয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে প্রথম বর্ষের ৩০০-এর বেশি ছাত্রীকে সিট দেওয়া হবে। ২০২৬ সালের শুরুতে বাকি ব্লকগুলো নির্মাণ শেষ হলে আরও ৯০০ শিক্ষার্থী এখানে থাকতে পারবে।’
ছেলেদের জন্য শহীদ জামাল হোসেন হলের সম্প্রসারণ কাজও চলমান। প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহান মঞ্জিল বলেন, ‘নতুন করে নির্মিত হলে ১০ তলা বিশিষ্ট ভবনে ১২০০ শিক্ষার্থীর আবাসনের সুযোগ হবে। ২০২৬-২৭ সালের মধ্যে নির্মাণ শেষ হলে এটি বাকৃবির সবচেয়ে বড় হলগুলোর একটি হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল হক বলেন, ‘বর্তমানে কোনো সিট বরাদ্দেই রাজনৈতিক প্রভাবের সুযোগ নেই। মেয়েদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ায় সেখানে কিছুটা চাপ রয়েছে। তবে বেগম খালেদা জিয়া হলের নির্মাণকাজ শেষ হলে এই সংকটও দূর হবে। ছেলেদের হলে এখন তেমন সংকট নেই, শহীদ জামাল হোসেন হলের কাজ শেষ হলে তা পুরোপুরি কেটে যাবে।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন