রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের আওয়ামীপন্থি সহযোগী অধ্যাপক মীর তামান্না সিদ্দিকার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা ব্যাপক অভিযোগ তুলেছেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি শিক্ষার্থীদের পক্ষপাতমূলক মার্কিং, প্রশাসনিক দায়িত্বে অবহেলা এবং জুলাই আন্দোলনের সময় আহত শিক্ষার্থীদের হয়রানি করেছেন।
এছাড়া, তিনি নিজ বিভাগের অন্যান্য শিক্ষকদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং মেয়েদের হলে ছাত্রলীগের অনুপ্রবেশে সহায়তার অভিযোগেও অভিযুক্ত হয়েছেন।
এছাড়াও, একাধিকবার বিনা অনুমতিতে কর্মস্থল ত্যাগ ও বিভাগের কার্যক্রম প্রতিনিধি দিয়ে চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
জানা যায়, জেন্ডার এন্ড ডেভলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের বেশ কয়েকটি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মার্ক টেম্পারিং, অসদাচরণসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগ এনে ছাত্র পরামর্শ দপ্তরের পরিচালক বরাবর অভিযোগ করেন।
পরবর্তীতে এই শিক্ষিকা কৌশলে সেখান থেকে অভিযোগকারীদের নাম বের করে তাদের নানাভাবে হয়রানি ও হেনস্তা করেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। তাদের শিক্ষা জীবন ধ্বংস করার হুমকি দেয়া হয় বলে তারা অভিযোগক করেন।
এ বিষয়ে কোন প্রতিকার না পেয়ে, ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা গত ১০ মে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর এই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট পাঁচটি অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগ দায়েরের এতদিন পরেও এই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করে প্রশাসন। উল্টো নিয়ম ভেঙ্গে বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটিতে জায়গা করে দেয়া হয় মীর তামান্না সিদ্দিকাকে।
জানা যায়, জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মীর তামান্না সিদ্দিকা পরপর দু’মেয়াদে হল প্রভোস্টের দায়িত্ব পালন করলেও বেশির ভাগ সময় তিনি ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত ছিলেন।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সময় তিনি মেয়েদের হলের প্রভোস্টের দায়িত্বে থাকলেও হলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হন। বহিরাগত ও ছাত্রলীগের অনুপ্রবেশ ঠেকানোর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় হলে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় এতে শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
এছাড়াও শিক্ষার্থীদের নম্বর ইচ্ছামতো কমিয়ে দেওয়া এবং পরীক্ষার খাতা নিয়ে ঢাকায় গিয়ে ফলাফল নির্ধারণের মতো গুরুতর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বিভাগের কোনো শিক্ষার্থী তার বিরুদ্ধে কথা বললে বা কোনো বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুললে তাকে পরীক্ষায় কম নম্বর দেওয়া এবং বিভাগীয় ট্যুর বা টুর্নামেন্ট নিয়ে কোনো মন্তব্য করলে তাকে চিহ্নিত করে ভবিষ্যতে নানা হয়রানির শিকার হতে হতো বলে অভিযোগ রয়েছে।
একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা উনার বিষয়গুলো ভিসি স্যারকে জানাই। কিন্তু আমরা কোনো সাড়া পাইনি। উল্টো হয়রানির শিকার হচ্ছি।
নাম প্রকাশ্যে না করা শর্তে এক শিক্ষার্থী জানান, একদল শিক্ষার্থী প্রেজেন্টেশন দেওয়ার সময় শিক্ষিকার নাম ভুল উচ্চারণ করায় পুরো গ্রুপকে শূন্য নম্বর দেওয়া হয়। এরপর ওই শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায়ও খারাপ নম্বর দেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের নির্দিষ্ট সময় কর্মস্থলে উপস্থিত থাকতে হয়। তবে অভিযুক্ত শিক্ষিকা নিয়মিত অনুপস্থিত ছিলেন। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি ১১-১৩ তারিখ ছুটি নিলেও ৮-১৭ তারিখ পর্যন্ত ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া, দুর্গাপূজা, ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম এবং লক্ষীপূজার ছুটি ১১ থেকে ১৬ অক্টোবর শুরুর আগেই তিনি কর্মস্থল ত্যাগ করেন এবং ৩ নভেম্বর ফিরে আসেন। ৯ থেকে ১০ অক্টোবর বাড়তি ছুটি নিলেও লিখিত অনুমোদন না নিয়ে চলে যান এবং দায়িত্বও কাউকে বুঝিয়ে যাননি।
এছাড়া, ৯ থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছুটিতে থাকলেও তিনি ৭ ডিসেম্বরেই কর্মস্থল ত্যাগ করেন এবং ফিরে আসেন ৫ জানুয়ারি ২০২৫।
অথচ, প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকার কারণে ১৮-১৯ ডিসেম্বর, ৩০-৩১ ডিসেম্বর এবং ২০২৫ সালের ১-৪ জানুয়ারি তার কর্মস্থলে থাকা বাধ্যতামূলক ছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র বলছে, তিনি ছুটি নেওয়ার আগে-পরে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেননি এবং প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনে চরম উদাসীনতা দেখিয়েছেন। এমনকি, বিভাগীয় প্রধান হয়েও দিনের পর দিন অনুপস্থিত ছিলেন, অথচ অফিসের অন্যান্য কর্মচারীরা ছুটির আবেদন করলে তিনি তা অনুমোদন করতেন না।
তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মীর তামান্না সিদ্দিকা বলন, আমি ছুটি ছাড়া কোনোদিন অনুপস্থিত ছিলাম না। আমি ছুটি নিয়েছি সব কাগজপত্র আমার কাছে আছে।
দায়িত্ব অবহেলার বিষয়ে তিনি বলেন, আবু সাঈদ মারা যাওয়ার সময়টায় আমি ছুটিতে ছিলাম। তখন হলে এবং বিভাগে দায়িত্বে অন্য শিক্ষক ছিল।
নম্বর কম দেওয়ার অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি সকল মিডের খাতা দেখাই কার কোথায় ভুল সেটা তাদের দেখাতে বলি৷ এখানে নম্বর কম দেওয়ার তো সুযোগ নেই। যারা অভিযোগ দিয়েছে তাদেরও আমি মিডের খাতা দেখাইছি।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন