চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শনিবার রাত থেকে রোববার দুপুর পর্যন্ত শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয়দের হামলায় আহত হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য, প্রক্টর, সাংবাদিক এবং প্রায় ১৮০ শিক্ষার্থী। আহতদের মধ্যে রয়েছেন চবি রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের সাইফুল ইসলাম।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রক্টর স্যার আক্রান্ত হয়েছেন শুনে আমরা উদ্ধার করতে যাই। তখন গ্রামবাসী প্রক্টরসহ ১০-১৫ জনকে মারধর শুরু করে। আমরা নিজেদের বাঁচাতে দৌড়ে কয়েকটি বাড়ির দিকে গেলে চারদিক থেকে আমাদের ঘিরে ধরে। দেড় ঘণ্টা ধরে মারধর চলছিল। এর মধ্যে দুবার অজ্ঞান হয়ে যাই। প্রথমবার অজ্ঞান হওয়ার পর মৃত ভেবে ফেলে রেখে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফেরার পর আবার মারধর করা হয়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হচ্ছিল। আমরা ক্ষেতের মধ্যে পালাতে চাইলে সেখানে থেকেও আঘাত করা হয়।’
রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (চমেক) ক্যাজুয়ালিটি বিভাগে মেঝেতে শোয়া অবস্থায় তিনি হামলার বর্ণনা দেন। তিনি জানান, মারধরের একপর্যায় স্থানীয়রা তার মোবাইল ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। পরে পায়ে ধরে মোবাইল উদ্ধার করা যায়।
ভাষা বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আটকে থাকা শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করতে গেলে স্থানীয়রা ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। তার আঘাতে আমার মাথা ফেটে যায়। কয়েকটা সেলাই করতে হয়েছে।’
সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে শনিবার রাত সোয়া ১২টার দিকে, যখন ভাড়া বাসার দারোয়ানের সঙ্গে কথাকাটাকাটির জেরে এক ছাত্রীকে মারধর করা হয়। এরপর চবি ২ নম্বর গেট এলাকায় স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এতে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন, প্রক্টর অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ, সাংবাদিক এবং অন্তত ১৮০ শিক্ষার্থী আহত হন।
এদিকে, বিকেল ৪টার দিকে যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়ে ক্যাম্পাসের আশপাশে অন্তত ১০টি গাড়ি প্রবেশ করায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো উপস্থিতি দেখা যায়নি।
এই ঘটনায় চবি ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা শিথিল থাকায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি এখনো সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসেনি।