হাসিমুখে ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল দেখতে গিয়ে অনেকেই স্তব্ধ। কেউ পাস করে খুশি, কেউ জিপিএ-৫ পেয়ে গর্বিত আর কেউ ভালো লিখেও নম্বর দেখে অবাক! দেশের হাজারো শিক্ষার্থীর মুখে একই প্রশ্ন, ‘আমি কি সত্যিই এত কম নম্বর পাওয়ার মতো খারাপ লিখেছি?’
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই শুরু হয়েছে ফলাফল চ্যালেঞ্জের হিড়িক। বিশেষ করে, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী ফলাফল চ্যালেঞ্জের আবেদন করেছে। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে এবারে সর্বোচ্চ আবেদন জমা পড়েছে এই দুটি বিষয়ে, যা থেকেই বোঝা যায় যে শিক্ষার্থীদের মাঝে এই দুটি বিষয়ে অসন্তোষের হার ছিল বেশি।
কেন ফল চ্যালেঞ্জ করা হয়?
ফলাফল প্রকাশের পর যদি কোনো শিক্ষার্থী মনে করে যে তার উত্তরপত্র যথাযথভাবে মূল্যায়ন হয়নি বা প্রাপ্ত নম্বর তার প্রত্যাশার তুলনায় অস্বাভাবিক কম, তখন সে পুনঃনিরীক্ষণের জন্য আবেদন করতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় উত্তরপত্র পুনরায় পরীক্ষা করা হয়। যদিও এখানে নতুন করে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা হয় না, বরং যে বিষয়গুলো চেক করা হয় তা হলো:
- সব প্রশ্নের উত্তর মূল্যায়িত হয়েছে কি না।
- প্রাপ্ত নম্বরগুলো সঠিকভাবে যোগ করা হয়েছে কি না।
- মার্কশিটে সঠিকভাবে নম্বর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে কি না।
ফল চ্যালেঞ্জ করবেন যেভাবে
১. আবেদনের সময়সীমা
প্রকাশিত ফলাফলের পরপরই বোর্ড নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আবেদন গ্রহণ করে। ২০২৫ সালের ফলাফল প্রকাশ হয় ১০ জুলাই , এবং চ্যালেঞ্জের আবেদন নেওয়া হয়েছে ১১ থেকে ১৭জুলাই পর্যন্ত।
২. কোন মাধ্যমে আবেদন করতে হয়?
আবেদন করতে হয় টেলিটক মোবাইল থেকে নির্ধারিত ফরম্যাটে এসএমএস পাঠিয়ে। এছাড়া ‘টেলিটক রিচার্জ’ করতে হয় নির্ধারিত ফি পরিশোধ করার জন্য।
আবেদন প্রক্রিয়া (SMS-এর মাধ্যমে):
RSCBoardRollSubject Code
পাঠাতে হবে 16222 নম্বরে।
উত্তরে ফিরতি এসএমএসে একটি PIN এবং ফি পরিশোধের নির্দেশনা পাওয়া যাবে।
RSCYESPINContact Number
আবার পাঠাতে হবে 16222 নম্বরে।
প্রতি বিষয়ের জন্য ফি: 150 টাকা
যদি কোনো বিষয়ে দুই পত্র থাকে (যেমন: ইংরেজি ১ম ও ২য় পত্র), তাহলে আবেদন করতে হবে দুটি কোডে এবং মোট ফি হবে ৩০০ টাকা।
কেন ইংরেজি ও গণিতে বেশি চ্যালেঞ্জ?
এই দুটি বিষয় অনেক শিক্ষার্থীর কাছে তুলনামূলক দুর্বলতা এবং ভয়ের জায়গা। তবে পাশাপাশি এই বিষয়দুটি অনেক বেশি ব্যাখ্যা-নির্ভর ও বিস্তৃত প্রশ্নোত্তরের বিষয় হওয়ায় নম্বর বিভ্রাট হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি থাকে।
গণিতে সংখ্যাগত ভুল বা ভুলে নম্বর যোগ না হওয়া সাধারণ ব্যাপার। আর ইংরেজিতে উত্তর যাচাইয়ের সময় ব্যাখ্যা-বিভ্রাট বা ভুল ব্যাখ্যার সম্ভাবনা থেকে যায়।
ফল চ্যালেঞ্জ নিয়ে অভিভাবকের দৃষ্টিভঙ্গি
বেশিরভাগ অভিভাবকই সন্তানদের ফলাফল নিয়ে সচেতন। বিশেষ করে যেসব শিক্ষার্থীর প্রস্তুতি ভালো ছিল অথচ ফল প্রত্যাশিত হয়নি, সেখানে অনেকেই আবেদন করেন। একজন অভিভাবক বলেন, ‘আমার মেয়ের গণিতে সব প্রশ্নই ছিল সঠিক, পরীক্ষার পরে মিলিয়ে দেখি। কিন্তু ফল এলো মাত্র ৬৫। তখনই আমরা চ্যালেঞ্জ করার সিদ্ধান্ত নিই।’
কখনো কখনো ফল অপরিবর্তিত থাকে। তবে তা নিশ্চিত হওয়াটা মানসিক প্রশান্তির জন্য জরুরি।
যদি ফল পরিবর্তন হয় তাহলে করণীয় কী?
- সংশ্লিষ্ট বোর্ড থেকে সংশোধিত নম্বরসহ নতুন মার্কশিট সংগ্রহ করতে হবে।
- কলেজে ভর্তির সময় নতুন মার্কশিট অনুযায়ী নম্বর বিবেচনা করা হবে।
- অনলাইনে আবেদন ফর্মের ক্ষেত্রে, বোর্ড সংশোধিত নম্বর দিয়েই হালনাগাদ করে।
অনলাইন ভর্তির জন্য প্রভাব
ফল চ্যালেঞ্জের ফল প্রকাশের পরে যারা উচ্চতর শ্রেণিতে ভর্তি হতে চান, তাদের জন্য নতুন ফল অ্যাডমিশন সিস্টেমে আপডেট হয়ে যায়। সাধারণত ‘XI Class Admission’ সিস্টেমে বোর্ড নিজেই তা আপডেট করে দেয়।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় ফল চ্যালেঞ্জের ভূমিকা
যেসব শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা বা উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ভালো ফলের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, তাদের জন্য এসএসসি ফল খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতের একাডেমিক স্কোর গঠনে এসএসসি ফল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই কোনো সন্দেহ থাকলে ফল চ্যালেঞ্জ করাটাই উত্তম।
সতর্কতা: ভুলভাবে আবেদন করলে কী হবে?
- ভুল সাবজেক্ট কোড দিলে আবেদন বাতিল হয়ে যাবে।
- ফি কেটে নেওয়া হলেও ভুল ইনফরমেশনে আবেদন প্রক্রিয়াকরণ হবে না।
- তাই সাবধানে বোর্ডের ওয়েবসাইট বা এসএমএস নির্দেশনা দেখে সঠিকভাবে আবেদন করতে হবে।
ফল চ্যালেঞ্জের আবেদন হচ্ছে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি সুযোগ, যেটি তাদের প্রকৃত মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে সহায়তা করে। শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের উচিত সময়মতো এই সুযোগ কাজে লাগানো, তবে ফলাফল নিয়ে অতিরিক্ত হতাশ না হয়ে ভবিষ্যতের দিকে মনোযোগী হওয়াও জরুরি। কারণ এসএসসি একটি ধাপ মাত্র। আপনার জীবনে আরও অনেক বড় সুযোগ অপেক্ষা করছে।
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছে ৬৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থী, যা গত ১৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।
এ বছর ১১টি শিক্ষা বোর্ডে ১৯ লাখ ৪ হাজার ৮৬ জন শিক্ষার্থী মাধ্যমিক ও সমমানের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেয়, তাদের মধ্যে ১৩ লাখ ৩ হাজার ৪২৬ জন পাস করেছে।
এর মধ্যে নয়টি সাধারণ বোর্ডে ৬৮ দশমিক ০৪ শতাংশ, মাদ্রাসা বোর্ডে ৬৮ দশমিক ০৯ শতাংশ এবং কারিগরি বোর্ডে ৭৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। এবারও পাসের হার এবং জিপিএ-৫ পাওয়ার সংখ্যা দুদিক দিয়েই এগিয়ে আছে মেয়েরা। ছাত্রদের পাসের হার যেখানে ৬৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ সেখানে ছাত্রীদের মধ্যে ৭১ দশমিক ০৩ শতাংশ পাস করেছে।
মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় এবার ৯ লাখ ৫১ হাজার ৬৯৭ জন ছাত্র পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। তাদের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন ৬ লাখ ২৬ হাজার ৯৮১ জন।
আর ৯ লাখ ৫২ হাজার ৩৮৯ জন ছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল, তাদের মধ্যে পাস করেছেন ৬ লাখ ৭৬ হাজার ৪৪৫ জন। আর পূর্ণাঙ্গ জিপিএ, অর্থাৎ পাঁচে পাঁচ পাওয়া ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩২ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৭৩ হাজার ৬১৬ জন ছাত্রী এবং ৬৫ হাজার ৪১৬ জন ছাত্র।
আপনার মতামত লিখুন :