‘তেরে নাম’ সিনেমার নাম বললেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে সালমান খানের লম্বা চুলের সেই বিখ্যাত লুক। মাঝখানে ভাগ করা চুল, চোখেমুখে প্রেম আর যন্ত্রণার ছাপ, সিনেমার পর্দা ছাড়িয়ে এই লুক ছড়িয়ে পড়েছিল যুবসমাজের স্টাইল স্টেটমেন্টে।
অথচ সেই স্টাইলের মূল অনুপ্রেরণা কে ছিলেন, তা এতদিন ছিল এক রহস্য। অবশেষে সেই রহস্যের জট খুললেন স্বয়ং সালমান খান।
‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান কপিল শো’ সিজন ৩-এর প্রথম পর্বে উপস্থিত হয়ে সালমান জানান, ‘তেরে নাম’ সিনেমার তার সেই আইকনিক হেয়ার স্টাইলের পেছনে অনুপ্রেরণা ছিলেন ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ড. এ পি জে আবদুল কালাম।
সালমান বলেন, ‘তেরে নাম-এ আমার হেয়ার স্টাইলের মূল অনুপ্রেরণা ছিলেন ড. এ পি জে আবদুল কালাম স্যার। আমি তখন ভাবতাম, ছোট শহরের হিরোদের সাধারণত লম্বা চুল হয়। পুরোনো দিনের নায়করাও তো লম্বা চুল রাখতেন। সেই ভাবনাই আমার চুলের স্টাইল বদলে দিয়েছিল।’
সালমান আরও বলেন, ‘তখন রাহুল রায়েরও একই ধরনের হেয়ার স্টাইল ছিল, সেটাও আমার লুকে প্রভাব ফেলেছিল।’ ‘ভাইজানের’ মুখে এমন কথা শুনে উপস্থিত সবাই বেশ অবাক হয়ে যান।
২০০৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘তেরে নাম’ ছিল সালমান খানের ক্যারিয়ারের এক মোড় ঘোরানো সিনেমা। তখন তার একের পর এক সিনেমা বক্স অফিসে সংগ্রাম করছিল। ঠিক সেই সময়ে ‘তেরে নাম’-এর প্রেম, ব্যথা আর সংবেদনশীল গল্প তাকে আবার দর্শকের হৃদয়ে ফিরিয়ে দেয়।
এই সিনেমার সবচেয়ে বড় আলোচনার জায়গা ছিল সালমানের সেই হেয়ার স্টাইল। সিনেমা রিলিজের পর ভারতের তরুণ সমাজে যেন ‘তেরে নাম’ স্টাইলের ঝড় বয়ে যায়। কেউ ক্লাসে, কেউ রাস্তায়, কেউ বা খেলার মাঠে-সবাই হয়ে উঠেছিল ‘তেরে নাম’ এর ছোট ছোট ‘রাধে’।
এমনকি এই চুলের স্টাইল অনুকরণ করতে গিয়ে অনেক তরুণের চুল নষ্টও হয়েছিল। সেলুনে গিয়ে ‘তেরে নাম কাট’ বলতেই নাপিতেরা ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। কেউ পারতেন, কেউ পারতেন না। কিন্তু প্রেমে ব্যথিত চরিত্র ‘রাধে’র মতো হতে চাওয়ার স্বপ্ন ছেলেরা সহজে ছাড়েনি।
অবাক করা ব্যাপার হলো, সেই হেয়ার স্টাইলের পেছনে যে ছিলেন বিজ্ঞানী, ‘মিসাইল ম্যান’ খ্যাত ড. এ পি জে আবদুল কালাম- এটা হয়তো সেই সময় কেউ কল্পনাও করেনি। সাধারণ, সাদামাটা পোশাকে চলা কালামের ব্যক্তিত্বের মধ্যেই সালমান খুঁজে পেয়েছিলেন ছোট শহরের এক ‘হিরো’র স্টাইল।
রাহুল রায়ের হেয়ার স্টাইলও ছিল তার ভাবনায়, কিন্তু সালমানের মতে, ‘কালাম স্যারের লুকই আমাকে মূলভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল।’
‘তেরে নাম’ সিনেমা শুধু সালমানের ক্যারিয়ারেই নয়, বলিউড ইতিহাসেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে আছে। এই সিনেমার পর সালমানের হেয়ার স্টাইল, গান, সংলাপ-সবই দর্শকের মনে গেঁথে যায়।
আর আজ এত বছর পর যখন জানা গেল সেই বিখ্যাত লুকের পেছনে ড. কালাম, তখন যেন সময় ফিরে গেল পুরোনো দিনে। মনে হলো, স্টাইল কখনো শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্য নয়, সেটি কখনো কখনো নীরব শ্রদ্ধার বহিঃপ্রকাশও হতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :