ঢাকা রবিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৫

উত্তরায় শুটিং বন্ধের নোটিশ, নির্মাতা-শিল্পীদের প্রতিবাদ

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: জুলাই ২৪, ২০২৫, ০৭:৫৭ পিএম
শুটিংয়ের দৃশ্য। ছবি- সংগৃহীত

রাজধানী উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরের লাবনী শুটিং বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে নাটক ও সিনেমার শুটিং হয়ে আসছে। হঠাৎ করে ওই বাড়িতে শুটিং বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের আবাসিক এলাকা কল্যাণ সমিতি।

গেল ২০ জুলাই ইস্যুকৃত নোটিশে বলা হয়েছে, শুটিং ঘিরে আবাসিক এলাকায় জনসমাগম বৃদ্ধি ও রাস্তায় যানবাহান চলাচলে বিঘ্ন হচ্ছে। ফলে ৪ নম্বর সেক্টরে শুটিং বন্ধ রাখার জন্য বাড়ির মালিককে অনুরোধ করা হয়েছে।

কল্যাণ সমিতির নোটিশে বলা হয়েছে, আপনার সদয় অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, উপরোক্ত (বাড়ি নম্বর-৪২, রোড-১২, সেক্টর-৪) বাড়িতে বিগত বহুদিন ধরে শুটিং হাউজ হিসেবে ব্যবহার করে অত্র আবাসিক এলাকায় নিয়মিত শুটিং কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, এ ধরনের শুটিং কার্যক্রমের কারণে রাস্তায় জনসমাগম সৃষ্টি হচ্ছে, যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে এবং সেক্টরের স্থায়ী বাসিন্দারা তাদের স্বাভাবিক ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বসবাসে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।

এলাকার স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে জানিয়ে নোটিশে বলা হয়, আপনার জ্ঞাতার্থে জানানো যাচ্ছে যে, আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে শুটিং হাউজ পরিচালনা করা সম্পূর্ণ আবাসিক নীতিমালার পরিপন্থী। এর ফলে এলাকার স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে এবং সেক্টরবাসীর ন্যায্য অধিকার ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।

সবশেষ শুটিং বন্ধের বিষয়ে নোটিশে বলা হয়, সেক্টরবাসীর ক্রমবর্ধমান অভিযোগ ও সবার নিরাপত্তা এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশের কথা বিবেচনা করে আপনাকে অনুরোধ করা যাচ্ছে যে, অনতিবিলম্বে এই শুটিং কার্যক্রম বন্ধ রাখবেন এবং শুটিং হাউজ হিসেবে ভাড়া প্রদান থেকে বিরত থাকবেন। সেক্টরের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ পুনরুদ্ধারে আপনার দায়িত্বশীল ভূমিকা অত্যন্ত জরুরি। আমরা সবাই জানি, উত্তরা ৪ নং সেক্টর একটি আদর্শ, পরিবেশ বান্ধব ও শান্তিপূর্ণ আবাসিক এলাকা হিসেবে পুরো উত্তরার ভেতর পরিচিতি লাভ করেছে। অতএব এই সুনাম অক্ষুন্ন রাখার জন্য আপনার আন্তরিক সহযোগিতা একান্তকাম্য।

বিষয়টির প্রতিবাদ জানিয়েছে টেলিভিশন নাটকের শিল্পীদের সংগঠন ‘অভিনয় শিল্পী সংঘ’।

এর সাধারণ সম্পাদক-অভিনেতা রাশেদ মামুন অপু বলেন, ‘লাবনী শুটিং হাউজটি নিয়ে অনেকদিন ধরেই একটি মহল কাজ করছিল। তাদের প্রধান লক্ষ্য এটি উচ্ছেদ করা। এটি বাংলাদেশের অন্যতম পুরনো শুটিং হাউজ। এর আগেও বহুবার এলাকার কিছু চক্র শুটিং হাউজটি উচ্ছেদ করতে চেয়েছে এবং প্রতিবারই আমাদের প্রতিবাদের মুখে তারা সরে এসেছে। এবার তারা আবারও একই কাজ করছেন। তারা যে কারণটা দেখিয়েছেন সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।’

এই নোটিশের প্রতিবাদ জানিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছেন অভিনেতা-নির্মাতা রওনক হাসান। তিনি লেখেন, ‘উত্তরা সেক্টর ৪ কল্যাণ সমিতি থেকে শুটিং বন্ধের নোটিশ এসেছে। আবাসিক এলাকায় নানান রকম অফিস হয়, শতশত স্কুল চলে, মাল্টিপারপাস ব্যবসা চলে; শুধু শুটিংই সমস্যা!’

তিনি আরও লেখেন, ‘আগেও এমন চেষ্টা হয়েছিল। তখন সংশ্লিষ্ট সংগঠন, স্থানীয় এমপি, সিটি করপোরেশন ও প্রশাসন মিলে নীতিমালার মাধ্যমে সমাধান করেছিলেন। এবারও তেমনটাই প্রত্যাশা করছি। সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’

অভিনেতা ও নির্মাতা সহীদ উন নবী প্রতিবাদ জানিয়ে লিখেন, ‘পিঠ তো দেয়ালে ঠেকে গেলো। এত এত আওয়াজ ওয়ালা লোকজন কই আমাদের, মিডিয়াকে যারা বিক্রি করে সো অফ করেন। এখনো কি বসে থাকবেন? আসেন নামি? নিজেদের ভাতের জন্য হলেও আসেন এই কল্যাণ সমিতির অকল্যাণ কাজকে প্রতিহত করি।’

প্রশ্ন রেখে তিনি আরও লেখেন, ‘উত্তরায় যখন কিশোর গ্যাং বাইক নিয়া শোডাউন করে, মা-বোনদের যখন ইভটিজিং করে, চুরি ছিনতাই হয়, ডাকাতি হয় তখন কোথায় থাকে এই কল্যাণ সমিতি? ২৪ বছর কিছু হইল না এখন এই কল্যাণ সমিতি কি এমন হয়ে গেছে যে শুটিং বন্ধ করতে চায়।’

নির্মাতা তপু খান বলেন, ‘শুটিং বন্ধ করা কোন সমাধান নয়। সরাসরি নিষেধাজ্ঞা আরও গ্রহণযোগ্য নয়। এটা শিল্প সংস্কৃতি বিকাশে বাধার সামিল। আমাদের অনেকের স্মৃতি বিজরিত শুটিং হাউজ উত্তরার লাবনী ৪। এই হাউজের আসলাম ভাই। আমার দেখা অন্যতম ভালো এবং নিরীহ মানুষ। সেখানে শুটিং না করার জন্য অনুরোধ করেছেন উত্তরা সেক্টর কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্ট সংগঠনদের অনুরোধ করছি, জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য। যদি কোনো ত্রুটি বা ভুল বোঝাবুঝি হয়ে থাকে তাহলে আলোচনা মাধ্যমে সমাধান করা যাবে। তাই বলে সরাসরি নিষেধাজ্ঞাকে ভালো চোখে দেখছি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘এলাকায় নানা রকম কার্যক্রম ঘটে, সেখানে নানা রকম ইস্যু হয়। সেগুলো নিয়ে কেউ কিছু বলে না। দুর্নীতি-অনিয়ম-মব নিয়ে কিছু বলে না। দেশের মূল জায়গায় সংস্কার বাদ দিয়ে, সংস্কারের শুরুই হয় শুধু শিল্প-সংস্কৃতির মানুষদের উপর দিয়ে। কেন? সংস্কৃতির বিকাশেই শুধু অনিয়ম আর সারাদেশ চলছে দুর্দান্ত নিয়ম এবং শৃঙ্খলার সাথে। কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’