ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান ক্ষেপণাস্ত্র যুদ্ধের মধ্যে ইসরায়েল ছেড়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় ট্রান্সজেন্ডার অ্যাকটিভিস্ট ও অলিম্পিক পদকজয়ী ক্যাটলিন জেনার। তেলআবিবের প্রাইড প্যারেডে অতিথি হিসেবে যোগ দিতে এসে হঠাৎ এই যুদ্ধের মুখোমুখি হন তিনি।
যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রোববার স্থলপথে জর্ডান সীমান্ত পাড়ি দেন তিনি। সেখান থেকেই ফিরবেন লস অ্যাঞ্জেলেসে।
২০২৫ সালের ১৩ জুনের প্রাইড প্যারেডে অংশ নিতে ১২ জুন ইসরায়েলে পৌঁছান ক্যাটলিন। কিন্তু প্যারেড বাতিল হয়, কারণ ওই সময় ইসরায়েলে ইরানের দফায় দফায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চলছিল।
ওই রাতেই তেলআবিবের এক বোমা আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন জেনার, যেখানে তার সঙ্গে ছিলেন ইসরায়েলি ইনফ্লুয়েন্সার রেগেভ গুর।
ইনস্টাগ্রামে ওই আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ‘ওয়াইন হাতে ছবি’ পোস্ট করে রেগেভ লেখেন, ‘সতর্কতা সংকেতের সময় আপনি কী করছিলেন? আমি তো ক্যাটলিনের সঙ্গে ওয়াইন খাচ্ছি।’
১৯৭৬ সালে অলিম্পিকে ডেকাথলনে স্বর্ণজয়ী জেনার পরে নিজের জেন্ডার ট্রানজিশনের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে পরিচিত হন। রিয়েলিটি শো ‘কিপিং আপ উইথ দ্য কার্ডাশিয়ানস’-এর অংশ হিসেবে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।
পরবর্তীতে রিপাবলিকান ঘরানার হয়ে তিনি রাজনীতিতে যুক্ত হন এবং নানা সময়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থন জানান।
এই সফরে ইসরায়েলের দক্ষিণে হামাসের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখেন ক্যাটলিন। কিবুতস বেয়েরি, টেকুমা এবং নভা রেভ পার্টির স্পটে যান, কথা বলেন বেঁচে ফেরা অনেকের সঙ্গে।
সবচেয়ে আবেগাপ্লুত হন যখন তিনি কিবুতস বেয়েরিতে ইউভাল হারানের সঙ্গে দেখা করেন, যার পরিবার হামলায় নিহত ও অপহৃত হয়েছিল।
টুইটারে তিনি লেখেন, ‘ইসরায়েলে, তেলআবিবে আপনাদের সঙ্গে শাবাত উদযাপন করলাম। আমরা জিতব, এবং ইরানের বন্দি নিরীহ মানুষদের মুক্ত করব সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাত থেকে।’
এরপর আরেকটি পোস্টে তিনি তেলআবিবের আকাশে ক্ষেপণাস্ত্র ও ইন্টারসেপ্টরের ছবি দিয়ে লেখেন, ‘তেলআবিবে এক ‘নিরব’ রাত। আমাদের জন্য প্রার্থনা করুন। আমি আজকের মতো কখনও আগে এতটা দৃঢ়ভাবে ইসরায়েলের পাশে ছিলাম না।’
রোববার জর্ডানের আকাশপথ খোলার পর সেখান থেকেই ফিরতি ফ্লাইটে উঠেন জেনার। মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলে আসার সিদ্ধান্তে আমার এক বিন্দু অনুশোচনা নেই। খ্রিষ্টান, ইহুদি ও মুসলিম-সবার সঙ্গে একই আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করে আমি মানবতার সবচেয়ে উজ্জ্বল রূপ দেখেছি। একসঙ্গে বেঁচে থাকার এই অভিজ্ঞতা হৃদয় ছুঁয়ে গেছে।’
এ সময় তিনি জো বাইডেন প্রশাসনের সমালোচনা করে বলেন, ‘বর্তমান সরকার ইসরায়েল-বিরোধী ও ইরান-পন্থী।’ অপরদিকে ইসরায়েলের মিত্রদের প্রশংসা করে ট্রাম্পের নেতৃত্বের কথা উল্লেখ করেন।
বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের আকাশজুড়ে সতর্কতা অব্যাহত রয়েছে। শুক্রবার ইসরায়েলের হামলায় ইরানের বেশ কিছু ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র ও সামরিক স্থাপনা ধ্বংস হয় বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ জানায়।
পাল্টা হামলায় ইরানও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছে তেলআবিবসহ বিভিন্ন শহরে। নাগরিকরা দিনরাত কাটাচ্ছেন আতঙ্কে ও আশ্রয়কেন্দ্রে।
তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইসরায়েল, টিএমজেড, গেটি ইমেজেস, মিডল ইস্ট আই, এপি, রয়টার্স।
আপনার মতামত লিখুন :