সিঙ্গাপুরে স্কুবা ডাইভিং করতে গিয়ে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ‘ইয়া আলী’ গানের শিল্পী জুবিন গর্গ। সমুদ্র থেকে গায়ককে উদ্ধার করেছে দেশটির পুলিশ। নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। সেখানেই তাকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় দুপুর দেড়টা নাগাদ ঘটেছে দুর্ঘটনা। মৃত্যুকালে জুবিন গর্গের বয়স হয়েছিল ৫২।
এনডিটিভি জানিয়েছে, সিঙ্গাপুরে ‘নর্থইস্ট ফেস্টিভ্যাল’-এ যোগ দিতে গিয়েছিলেন বিখ্যাত গায়ক। শুক্রবারই পারফর্ম করার কথা ছিল তার। তার আগে প্যারাগ্লাইডিং করতে যান তিনি। ঠিক সেসময়েই বিপত্তি ঘটে! জানা গেছে, প্যারাগ্লাইডিং করার সময়ে আচমকাই সমুদ্রের মধ্যে পড়ে যান জুবিন। অনেকটা সময় অচেতন অবস্থাতেই সমুদ্রে ভেসেছিলেন।
খবর পেয়েই সিঙ্গাপুর পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সমুদ্র থেকে গায়ককে উদ্ধার করে তড়িঘড়ি এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে। তাকে রাখা হয়েছিল আইসিইউতে। সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন জুবিন গর্গ। গায়কের আকস্মিক মৃত্যুর খবরে শোকস্তব্ধ বিনোদন দুনিয়া। দুঃখপ্রকাশ করেছেন সঙ্গীত পরিচালক জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, অভিনেতা রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, স্কুবা ডাইভিং করার সময় শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা শুরু হয় গায়কের। আইসিইউ-তে ভর্তি করা হলে দুপুর আড়াইটা নাগাদ মৃত বলে ঘোষণা করা হয় শিল্পীকে। শোকপ্রকাশ করে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেছেন, ‘আসামের বড় ক্ষতি। ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না জ়ুবিন আমাদের কাছে কী ছিল। যে শূন্যস্থান রেখে গেল তা পূরণ করা অসম্ভব।’
গত মে মাসে গুরুতর অসুস্থ হয়েছিলেন। তখন তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। সেই সময় তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাজু বরুয়া বলেন, “জ়ুবিন বেশ কয়েক দিন ধরে জ্বর ও সর্দিতে ভুগছিলেন। অসুস্থতা নিয়েই বুধবার রাতে তিনি নতুন অসমিয়া ছবি ‘ভাইমন দা’-এর প্রিমিয়ারে ছিলেন। সেখানে থাকাকালীন তিনি আচমকাই পেটে ব্যথা অনুভব করেন । তড়িঘড়ি তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।”
প্রসঙ্গত, জন্মসূত্রে আসামের হলেও বলিউডে বেশ পরিচিত নাম জুবিন। গান গেয়েছেন ‘ফিজা’, ‘গ্যাংস্টার’, ‘রাজ’, ‘থ্রিডি’, ‘কৃষ থ্রি’র মতো সিনেমায়। বাংলা চলচ্চিত্রেও একাধিক গান গেয়েছেন তিনি। রংবাজ, খিলাড়ি, খোকা ৪২০-এর মতো সিনেমায় দিয়েছেন কণ্ঠ। অসমিয়া ছবিতে গানের পাশাপাশি অভিনয়ও করেছেন তিনি।
তবে বছরখানেক ধরেই শরীর ভালো যাচ্ছিল না জুবিনের। গায়কের ঘনিষ্ঠমহলও একাধিকবার তার বিরুদ্ধে অত্যাধিক মদ্যপানের অভিযোগ তুলেছে। যার জেরে তার একাধিক শো-ও বাতিল সাম্প্রতিক অতীতে। একসময়ে যে গায়কের কণ্ঠে ‘ইয়া আলি…’ শুনে গোটা দেশে ঝড় উঠেছিল, সেই গায়কের এহেন অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন অনুরাগীদের অনেকেই মেনে নিতে পারেননি।
জুবিনের বাড়ি আসামের জোড়হাটে। অহমিয়া, হিন্দি-বাংলা মিলিয়ে প্রায় ৩৮ হাজার গান রেকর্ড করেছেন তিনি। তিন দশকের কেরিয়ারে ৪০টি ভিন্ন ভাষায় গান গাওয়ার রেকর্ডও রয়েছে তার। একাধিকবার নানা কর্মকাণ্ডের জেরে বিতর্কেও জড়িয়েছিলেন জুবিন গর্গ। তবুও গায়ক হিসেবে শ্রোতামহলে তার জনপ্রিয়তায় বিন্দুমাত্র ভাঁটা পড়েনি। শুক্রবার তার মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসতেই শোকস্তব্ধ সঙ্গীতজগৎ।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন