সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে হঠাৎ করেই সান্ডা টিকটিকি বা কাঁটাযুক্ত লেজওয়ালা ভারতীয় টিকটিকি নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেছে।
যা আগে সাধারণ মানুষের কাছে খুব একটা পরিচিত ছিল না, সেটি এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। এই আকস্মিক আগ্রহের পেছনে রয়েছে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। চলুন জেনে নেই কেন সান্ডা হঠাৎ বাঙ্গালীদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে?
বন্যপ্রাণী পাচার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান
২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে ঝিনাইদহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ এক অভিযানে ১৭টি সান্ডা টিকটিকি উদ্ধার করে। এই টিকটিকিগুলো পাচারকারী রাজ্জাক ওরফে রাজু ভারতীয় সীমান্ত এলাকা থেকে সংগ্রহ করে দেশের অভ্যন্তরে মাগুরা ও ফরিদপুরের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করছিলেন।
প্রতিটি টিকটিকির বাজারমূল্য ছিল প্রায় ৭৫ হাজার টাকা, যার মোট মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ১২ লক্ষ টাকা।
এই ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশের পর সান্ডা টিকটিকির প্রতি সাধারণ মানুষের কৌতূহল দ্রুত বেড়ে যায়।
সামাজিক মাধ্যমে মিম ও হাস্যরস
সান্ডা টিকটিকি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন মিম, রম্য ভিডিও ও রসাত্মক পোস্ট ভাইরাল হতে শুরু করে। এগুলোতে কখনো এর চেহারা, কখনো এর কথিত গুণাগুণ বা ব্যবহার নিয়ে কৌতুক করা হয়।
এর ফলে যেসব মানুষ আগে কখনো সান্ডার নামও শোনেনি, তারাও বিষয়টি নিয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠে।
ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসায় ব্যবহারের গুজব
ভারত ও পাকিস্তানে সান্ডা টিকটিকির চর্বি থেকে তৈরি তেল বহু বছর ধরে ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি বিশেষভাবে গোপন দুর্বলতা, গাঁটের ব্যথা, পেশির যন্ত্রণা প্রভৃতি সমস্যার চিকিৎসায় ব্যবহৃত বলে প্রচলিত রয়েছে।
এমনকি এটি উত্তেজনার ওষুধ হিসেবেও প্রচারিত। এই ধারণা বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়ায় এর প্রতি আগ্রহ ও চাহিদা বেড়েছে এবং অবৈধভাবে আমদানি ও বিক্রির চেষ্টা চলছে।
বিরলতা ও উচ্চমূল্যের কারণে কৌতূহল
সান্ডা টিকটিকি সাধারণত মরুভূমি অঞ্চলের প্রাণী। বাংলাদেশে এটি স্থানীয় নয়, ফলে এর উপস্থিতিই মানুষকে চমকে দিয়েছে। সেই সঙ্গে এর বিপুল বাজারমূল্য ও চোরাচালানের পরিমাণ বিষয়টিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।
এতে একদিকে যেমন জনসচেতনতা বেড়েছে, অন্যদিকে কিছু মানুষ অর্থের লোভে এই প্রাণী পাচারে জড়িয়ে পড়ছে।
পরিবেশগত গুরুত্ব ও বিলুপ্তির আশঙ্কা
সান্ডা টিকটিকি একটি প্রাকৃতিক খাদ্যচক্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী প্রজাতি। এটি শিকারি পাখি, সাপ ও মরুভূমির অন্যান্য প্রাণীর জন্য খাদ্য হিসেবে কাজ করে।
তবে অতিরিক্ত শিকার ও অবৈধ বাণিজ্যের কারণে এই প্রজাতিটি বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে।
এই বিষয়টি পরিবেশবাদীদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে এবং তারা জনসচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন।
সান্ডা টিকটিকি নিয়ে বাংলাদেশের হঠাৎ আগ্রহের পেছনে রয়েছে চোরাচালান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার, ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসার দাবি, উচ্চমূল্য ও পরিবেশগত দৃষ্টিকোণ। এই কৌতূহল একদিকে যেমন জনসচেতনতার সুযোগ সৃষ্টি করেছে, অন্যদিকে বিপন্ন একটি প্রজাতির অস্তিত্বকেও হুমকির মুখে ফেলেছে।
এখন প্রয়োজন যথাযথ আইন প্রয়োগ, সচেতনতা বৃদ্ধি ও এই প্রাণীটিকে সংরক্ষণের জন্য কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ।

মরুভূমির বিস্ময়কর প্রাণী সান্ডা
সাম্প্রতিক সময়ে সান্ডা টিকটিকি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। এর অদ্ভুত চেহারা, কথিত ঔষধি গুণ ও মাংস খাওয়া নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে।
এই টিকটিকির বৈজ্ঞানিক নাম ‘সারা হার্ডউইকিই’। এটি মূলত ভারতের থার মরু, কচ্ছ ও পাকিস্তানের সিন্ধু অঞ্চলের প্রাণী। শক্ত মাটিতে বাস করে, মাটি খুঁড়ে দুই মিটার পর্যন্ত গর্ত বানিয়ে দলবদ্ধভাবে বসবাস করে।
সান্ডা মূলত উদ্ভিদভোজী, তবে মানুষের মধ্যে এটি খাদ্য ও ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর মাংসকে মুরগির মতো বলা হয় এবং বিশেষত এর লেজের চর্বি অত্যন্ত মূল্যবান।