ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৫ মে, ২০২৫

কাদের হাতে আকাশপথ

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ১৫, ২০২৫, ০২:৩৬ পিএম
শক্তিচর্চায় এখন আকাশপথও রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ছবি: সংগৃহীত

একবিংশ শতাব্দীকে বলা হয় প্রযুক্তির যুগ। এই শতাব্দীতে যেভাবে প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটেছে, তা ইতিহাসে বিরল। এই উন্নয়নের এক বড় দিক হলো আকাশপথের নিয়ন্ত্রণ।

বর্তমানে আকাশপথে কারা কর্তৃত্ব করছে, তা বোঝা গেলে আগামী ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা পাওয়া যাবে। চলুন দেখে নেই কোন কোন দেশ বর্তমানে আকাশপথে সবচেয়ে শক্তিশালী।

যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্র বহু বছর ধরেই আকাশপথে প্রভাব বিস্তার করে আসছে। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ হলো তাদের সামরিক ও বেসামরিক উভয় ধরনের বিমানের আধিপত্য। তারা সবচেয়ে বেশি যুদ্ধবিমান তৈরি করে এবং সবচেয়ে বেশি উপগ্রহ পরিচালনা করে। 

List of military aircraft of the United States | Military Wiki ...
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কিছু বিমান। 

যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থা নাসা এককভাবে পৃথিবীর অনেক দেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে। তারা চাঁদে প্রথম মানুষ পাঠিয়েছিল এবং এখন মঙ্গল গ্রহে রোবট পাঠাচ্ছে।

চীন

চীন দ্রুতগতিতে আকাশপথে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করছে। তারা নিজস্ব উপগ্রহ ব্যবস্থা তৈরি করেছে এবং সামরিক প্রযুক্তিতে বিশাল অগ্রগতি লাভ করেছে। ২০১৯ সালে চীন চাঁদের অদৃশ্য পাশে একটি যান অবতরণ করেছিল, যা বিশ্বের প্রথম ঘটনা। 

চীনা যুদ্ধবিমান। 

এ ছাড়া চীন বাণিজ্যিক বিমানের বাজারেও প্রবেশ করেছে এবং নিজস্ব বিমান তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

রাশিয়া

রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরেই আকাশপথে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। তারা প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের সময় থেকেই মহাকাশ গবেষণায় জড়িত। রাশিয়ার মহাকাশ সংস্থা ‘রসকসমস’ এখনো পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো ও অভিজ্ঞ সংস্থাগুলোর একটি। 

Tupolev Tu-160 Variable-swept wings. : r/WeirdWings
রাশিয়ার টিইউ ১৬০। 

আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে রাশিয়ার অংশগ্রহণ এখনো গুরুত্বপূর্ণ। 

ভারত

ভারত ধীরে ধীরে আকাশপথে নিজেদের অবস্থান শক্ত করছে। ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো ইতিমধ্যেই চাঁদ ও মঙ্গল গ্রহে অভিযান চালিয়েছে। ২০২৩ সালে তারা চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফলভাবে যান অবতরণ করায় বিশ্বের নজর কেড়েছে। 

IAF to show off ‍‍`Made in India‍‍` Tejas fighter jets at Singapore Air Show  2022 - India Today
ভারতের তেজস যোদ্ধা বিমান। 

কম খরচে উচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভারত প্রমাণ করেছে যে, প্রযুক্তি নির্ভরতা ছাড়াও সাফল্য অর্জন করা সম্ভব।

বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উত্থান

আগে আকাশপথ মানেই ছিল রাষ্ট্রভিত্তিক প্রচেষ্টা। কিন্তু এখন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও বড় ভূমিকা রাখছে। যদিও এখানে বড় নামগুলো বিদেশি, যেমন - স্পেসএক্স, ব্লু অরিজিন- তবে, অনেক দেশেই ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে, যারা মহাকাশ প্রযুক্তিতে কাজ করছে। 

এদের মধ্যে কেউ কেউ কৃত্রিম উপগ্রহ তৈরি করছে, আবার কেউ মহাকাশ পর্যটনের দিকে নজর দিচ্ছে।

একবিংশ শতাব্দীতে আকাশপথের কর্তৃত্ব একক কারো হাতে নেই। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, ভারতসহ বেশ কিছু দেশ এবং কিছু বেসরকারি সংস্থা এই কর্তৃত্ব ভাগ করে নিচ্ছে। তবে ভবিষ্যতে কারা এগিয়ে থাকবে, তা নির্ভর করবে তাদের প্রযুক্তির উন্নয়ন, অর্থনৈতিক সামর্থ্য এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার উপর। একথা বলা যায়, যারা প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করবে, তারাই আকাশপথে নেতৃত্ব দেবে।

এই শতাব্দীতে আকাশপথ শুধু যুদ্ধের মাঠ নয়, বরং বাণিজ্য, গবেষণা এবং আবিষ্কারের নতুন দিগন্ত। তাই এই প্রতিযোগিতা যেমন তীব্র, তেমনি রোমাঞ্চকরও।