ঢাকা সোমবার, ৩০ জুন, ২০২৫

আজ সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ৩০, ২০২৫, ০৪:০১ পিএম
ছবি- সংগৃহীত

৩০ জুন ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের এক গুরুত্বপূর্ণ দিন, যা সাঁওতাল হুল দিবস বা সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস নামে পরিচিত। ১৮৫৫ সালে সিধু মুরমু, কানু মুরমু এবং দুই ভাই চান্দ ও ভাইরো তাদের গ্রাম ভগনাডিহতে সাঁওতাল জনগণকে একত্রিত করে ব্রিটিশ শোষণ ও দাদন ব্যবসায়ীদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে মুক্তির লক্ষ্যে বিশাল সমাবেশের ডাক দেন।

সাঁওতালরা মহাজন ও দাদনের ঋণ জঞ্জালে নিপীড়িত হয়ে পরিবার-সম্পত্তি হারাচ্ছিলো। ব্রিটিশ পুলিশ-দারোগাদের সহযোগিতায় তাদের জমি-গবাদিপশু কেড়ে নেওয়া হতো এবং প্রতিবাদ করলে গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের শিকার হতো।

বিদ্রোহের প্রেক্ষাপট ও ইতিহাস

সাঁওতাল বিদ্রোহের সূচনা ছিল ১৮৫৫ সালে হলেও এর প্রেক্ষাপট আরও পুরনো। ১৭৮০ সালে তিলকা মুরমু (তিলকা মাঞ্জহী) শোষকদের বিরুদ্ধে সাঁওতাল গণসংগ্রাম শুরু করেন। পাঁচ বছর লড়াইয়ের পর ১৭৮৪ সালে তিনি নিহত হন। এরপর ১৮১১, ১৮২০ ও ১৮৩১ সালে পরপর তিনবার সাঁওতাল গণআন্দোলন গড়ে ওঠে।

১৮৫৫ সালের সাঁওতাল বিদ্রোহ

১৮৫৫ সালের ৩০ জুন সিধু-কানু নেতৃত্বে ৩০ হাজারেরও বেশি সাঁওতাল কলকাতা অভিমুখে গণযাত্রা শুরু করেন, যা উপমহাদেশের রাজনৈতিক সংগ্রামের ইতিহাসে প্রথম গণযাত্রা হিসেবে বিবেচিত। এতে বাধা দিতে মহাজন কেনারাম ভগত ও দারোগা মহেশাল দত্ত কয়েক সাঁওতাল নেতাকে গ্রেপ্তার করেন। উত্তেজিত সাঁওতাল বিপ্লবীরা ৭ জুলাই পাঁচকাঠিয়া স্থানে ১৯ জন শোষককে হত্যা করে বিদ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে দেন।

এই বিদ্রোহ আট মাস ধরে চলে। ইংরেজ বাহিনী বিপ্লবীদের মোকাবিলায় হেরে যাওয়া, ন্যায্যমূল্যে বাজার ধ্বংস এবং আত্মসমর্পণের ঘোষণাপত্র প্রত্যাখ্যান ইত্যাদি ঘটনাগুলো ঘটেছিল এই সময়ে। ব্রিটিশরা সামরিক আইন জারি করলেও শেষ পর্যন্ত ১৮৫৬ সালের জানুয়ারিতে তা প্রত্যাহার করে।

সাঁওতাল নারীদের ভূমিকা ও বীরত্ব

সিধু-কানুদের সঙ্গে সাঁওতাল নারীরা, বিশেষ করে দুই বোন ফুলো মুরমু ও ঝানো মুরমু, বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ফুলো মুরমুকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় এবং তিনি প্রথম বীরাঙ্গনা হিসেবে সাঁওতাল জাতি আজও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে।

১৮৫৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিধু নিহত হন এবং কানুকে ফাঁসি দেওয়া হয়। যদিও সাঁওতাল বিদ্রোহ পরাজিত হয়, তারা শোষকদের কাছে আত্মসমর্পণ করেনি।

বিদ্রোহের পরবর্তী প্রভাব

সাঁওতাল হুলের সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় তেভাগা আন্দোলন এবং ভারতের স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাসে সাঁওতালদের অবদান অম্লান। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে সাঁওতাল জাতি এখনো নিপীড়িত এবং তাদের সাংবিধানিক অধিকার, মাতৃভাষার স্বীকৃতি ও জমির অধিকার নিয়ে আজও লড়াই চলছে।

জাতীয় সংসদে সাঁওতাল জাতিসত্তাকে একমাত্র আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও বাস্তবে তা সম্পূর্ণ মিলেনি। শিক্ষা নীতি অনুযায়ী মাতৃভাষায় শিক্ষার ব্যবস্থা শুরু হলেও বর্ণমালা নির্ধারণে জটিলতা রয়েছে। জমি বেদখল হলে তা পুনরুদ্ধারে বিপদ ঝুঁকি নিতে হয়। অনেক সময় তাদের কষ্ট ও দাবি অদৃশ্য হয়ে যায়।

তবুও, ৩০ জুন সাঁওতাল হুলের ১৫৮তম বছরে সাঁওতাল জাতি ও স্বাধীনতাকামী মানুষেরা বীর সিধু-কানুদের স্মরণ ও শ্রদ্ধা করে থাকে।