সৌরজগতে আরও একটি বামন গ্রহের খোঁজ পাওয়া গেল! ‘২০১৭ ওএফ২০১’ নামের এই মহাজাগতিক বস্তুটি আকারে ছোট হলেও বৈশিষ্ট্যে প্রায় প্লুটোর মতোই। এটি সূর্যের চারপাশে একবার পরিক্রমা করতে সময় নেয় প্রায় ২৪ হাজার বছর! এর অবস্থান এতটাই দূরে যে, নেপচুনের চেয়েও প্রায় ২৩০ কোটি কিলোমিটার বেশি দূরে এটি সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে।
নতুন এই বামন গ্রহ আবিষ্কারের নেপথ্যে রয়েছেন আমেরিকার প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিদ অধ্যাপক সিহাও চেং এবং তাঁর দুই ছাত্র জিয়াক্সুয়ান লি ও এরিটাস ইয়াং। তাঁরা প্রায় সাত বছর ধরে চিলি ও হাওয়াইয়ের মানমন্দির থেকে এই গবেষণা চালিয়ে আসছিলেন। যদিও এখনো পর্যন্ত গবেষণাটি কোনো পিয়ার-রিভিউড জার্নালে প্রকাশিত হয়নি, তবু নিউইয়র্ক টাইমস-এর এক প্রতিবেদনে আবিষ্কারের কথা উঠে এসেছে।
‘২০১৭ ওএফ২০১’-এর ব্যাস মাত্র ৪০৩ মাইল (প্রায় ৬৯২ কিলোমিটার)। আকারে প্লুটোর তুলনায় ছোট হলেও এটি মাধ্যাকর্ষণ বলের কারণে নিজের ভরকে গোলাকার করে রাখতে সক্ষম— যা বামন গ্রহ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার মূল শর্তগুলোর একটি। ধারণা করা হচ্ছে, এটি ১৯৩০ সালে শেষবার সূর্যের কাছাকাছি এসেছিল— যে বছর প্লুটোরও আবিষ্কার ঘটে! এর পর আবার এটি সূর্যের নিকটবর্তী হবে ২৬১৮ সালে।
বামন গ্রহ কীভাবে নির্ধারিত হয়?
আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান ইউনিয়নের সংজ্ঞা অনুযায়ী, বামন গ্রহ এমন একটি মহাজাগতিক বস্তু যা—
১. একটি নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘোরে,
২. নিজের মাধ্যাকর্ষণ শক্তিতে গোলাকার আকৃতি ধারণ করে,
৩. তবে তার কক্ষপথের আশপাশ পরিষ্কার করে দিতে পারে না।
এই তিন শর্ত পূরণ না করতে পারায় ২০০৬ সালে প্লুটোর ‘পূর্ণাঙ্গ গ্রহ’ মর্যাদা বাতিল করে ‘বামন গ্রহ’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়।
বর্তমানে স্বীকৃত বামন গ্রহ রয়েছে ৫টি— প্লুটো, এরিস, সেরেস, হুমিয়া ও মেকমেক। নতুন গ্রহ ‘২০১৭ ওএফ২০১’ এই তালিকায় যুক্ত হতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন। তবে আরও বিস্তারিত গবেষণা এবং স্বীকৃতি না পাওয়া পর্যন্ত এটি ‘ট্রান্স-নেপচুনিয়ান অবজেক্ট’ হিসেবেই বিবেচিত হবে।
‘নবম গ্রহ’-এর অস্তিত্ব নিয়ে সংশয়
নতুন গ্রহটির অবস্থান ও কক্ষপথের তথ্য বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি তথাকথিত ‘নবম গ্রহ’ বা ‘প্ল্যানেট নাইন’-এর অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে। নিউটন-কেপলারের সূত্র অনুযায়ী, যদি নবম গ্রহ থেকে থাকে, তবে ‘২০১৭ ওএফ২০১’-এর অবস্থান সেই সূত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
২০২৪ সালে ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির জ্যোতির্বিদ মাইক ব্রাউনের একটি বক্তৃতা শুনেই চেং এই গবেষণায় উদ্বুদ্ধ হন। ব্রাউনই ২০০৫ সালে প্লুটোর চেয়েও বড় একটি বস্তুর সন্ধান দিয়েছিলেন, যার নাম ছিল ‘এরিস’। তখন থেকেই সৌরজগতের অতি দূরবর্তী অঞ্চলে অজানা বস্তু খুঁজে বের করার তাগিদ বিজ্ঞানীদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।
‘২০১৭ ওএফ২০১’-এর এই আবিষ্কার যদি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পায়, তবে সৌরজগৎ সম্পর্কে আমাদের বইপত্রে আবার নতুন করে সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে। শুধু নতুন গ্রহ নয়, গ্রহতত্ত্বের অনেক ধারণাই হয়তো পাল্টে যাবে।
আপনার মতামত লিখুন :