ডিম সহজলভ্য ও অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার। সকালের নাস্তায় একটি সেদ্ধ ডিম অনেকের দিনের শুরুর সঙ্গী। কেউ খান ভাজি করে, কেউ খালি ডিমের সাদা অংশ। তবে অনেকের মনেই প্রশ্ন রয়েছে দিনে কয়টি ডিম খাওয়া উচিত?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিম হচ্ছে প্রোটিন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন বি১২, ডি ও খনিজ পদার্থের দুর্দান্ত উৎস। একটি মাঝারি আকারের ডিমে প্রায় ৬ গ্রামের মতো প্রোটিন এবং ৭০–৭৫ ক্যালোরি শক্তি থাকে। এতে হৃদপিণ্ড, মস্তিষ্ক, চোখ ও চুলের জন্য উপকারী উপাদান থাকে।
ডিমের পুষ্টি উপাদান
একটি মাঝারি আকারের ডিমে প্রোটিন থাকে ৬-৭ গ্রাম, কোলেস্টেরল ১৮৬ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি১২, ডি, এ ও কোলিন থাকে। আবার চোখের যত্নে কার্যকর লুটিন ও জিয়্যাক্সানথিন, মস্তিষ্ক ও হৃদয়ের জন্য উপকারী ওমেগা-৩ (বিশেষ করে ডিএইচএ) উপাদান থাকে।
সাধারণভাবে সুস্থ মানুষের জন্য
পুষ্টিবিদদের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন ১–২টি সম্পূর্ণ ডিম খাওয়া নিরাপদ এবং উপকারী। যারা কেবল ডিমের সাদা অংশ খান, তারা দিনে ৩–৪টি ডিমের সাদা অংশ অনায়াসে খেতে পারেন। এতে কোলেস্টেরলের ঝুঁকি নেই, কিন্তু প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হয়।
যাদের সাবধানে খাওয়া উচিত
যাদের হৃদরোগ, উচ্চ কোলেস্টেরল বা ডায়াবেটিস রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে ডিম খাওয়ার ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ ডিমের কুসুমে কোলেস্টেরলের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি (প্রায় ১৮৬ মি.গ্রা. প্রতি কুসুম)।
যদিও সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, ডিমের কোলেস্টেরল রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল বাড়ায় না প্রত্যেকের ক্ষেত্রে, তবুও ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের সতর্ক থাকা জরুরি।
শিশুদের জন্য কী পরিমাণ?
শিশুদের জন্যও ডিম অত্যন্ত উপকারী। ৬ মাস বয়স থেকে শিশুদের ডিম খাওয়ানো শুরু করা যায় (প্রথমে কুসুম দিয়ে)। ১–৫ বছর বয়সি শিশুরা দিনে আধা থেকে একটি সম্পূর্ণ ডিম খেতে পারে।
ওজন কমাতে ডিম?
ডিম দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে। তাই ওজন কমাতে আগ্রহীদের জন্য এটি উপকারী। সকালে ১–২টি সেদ্ধ ডিম রাখলে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে।
দিনে বেশি ডিম খাওয়া কি ক্ষতিকর
কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ার সম্ভাবনা: একটি ডিমে ১৮৬ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল থাকে। দিনে তিনটি ডিম খাওয়া হলে হার্ট অ্যাটাক বা ব্লকেজের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। বিশেষ করে যাদের কোলেস্টেরল আগে হাই ছিল, তাদের এই ঝুঁকি থাকে।
কিডনির ওপর চাপ পড়ার সম্ভাবনা: অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণ দীর্ঘমেয়াদে কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। বিশেষ করে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা না হয়।
বদহজম ও গ্যাস: অনেকেরই ডিম খাওয়ার পর পেট ফাঁপা, ঢেকুর ও গ্যাসের সমস্যা দেখা যায়। এ জন্য ডিম খাওয়ার আগে তাদের সতর্কতার কথা বলা হয়।
ডিম খাওয়ার উপায়
সেদ্ধ ডিম: সবচেয়ে ভালো হয় সেদ্ধ ডিম খাওয়া হলে। এতে ক্যালোরি ও কোলেস্টেরল কম থাকে।
অল্প তেলে পোচ বা স্ক্র্যাম্বলড: ভাজা ডিমে ট্রান্সফ্যাট ও কোলেস্টেরল বেশি হয়ে থাকে। তবে চাইলে অল্প তেলে ডিম পোচ করে খেতে পারেন। আর সবচেয়ে ভালো হয় সকালের নাশতায় সেদ্ধ ডিম খাওয়া হলে।
ডিমের বিকল্প
ডিম ছাড়া প্রোটিনের জন্য মুরগির মাংস, টুনা মাছ, ডাল ও ছোলা, দুধ ও দই এবং বাদাম ও বীজ খেতে পারেন।
আপনার মতামত লিখুন :