বুধবার, ২৩ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ২২, ২০২৫, ০২:৩৩ পিএম

বিমান দুর্ঘটনায় পুড়ে যাওয়া রোগীর যত্ন নেবেন যেভাবে

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ২২, ২০২৫, ০২:৩৩ পিএম

বিমান দুর্ঘটনায় পুড়ে যাওয়া রোগীর যত্ন নেবেন যেভাবে। ছবি - সংগৃহীত

বিমান দুর্ঘটনায় পুড়ে যাওয়া রোগীর যত্ন নেবেন যেভাবে। ছবি - সংগৃহীত

বিমান দুর্ঘটনা সবসময়ই ভয়াবহ ও মর্মান্তিক হয়। এসব দুর্ঘটনায় যাত্রীরা শুধু আহতই হন না, অনেকেই দগ্ধ হয়ে ভয়ানক শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির শিকার হন। বিশেষ করে যখন আগুন লাগে বা কোনো বিস্ফোরণ ঘটে, তখন শরীরের বিভিন্ন অংশে তীব্রভাবে পুড়ে যায়। পুড়ে যাওয়া এমন একটি আঘাত, যার ফলে মানুষ শুধু বাহ্যিক কষ্টই ভোগে না, বরং দীর্ঘস্থায়ী জটিলতায়ও ভোগে। তাই এই প্রবন্ধে আলোচনা করা হলো বিমান দুর্ঘটনায় পুড়ে যাওয়া রোগীর প্রাথমিক যত্ন, চিকিৎসা, মানসিক সহায়তা এবং সুরক্ষা সংক্রান্ত করণীয়।

দুর্ঘটনার পরপরই যা করতে হবে

প্রথম ও প্রধান করণীয় হলো রোগীকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া। অনেক সময় বিমানের দুর্ঘটনায় আশপাশে আগুন, গরম ধাতব পদার্থ বা বিস্ফোরক উপাদান থেকে ঝুঁকি থেকেই যায়। তাই ধোঁয়া, গ্যাস ও উত্তপ্ত পরিবেশ থেকে তাকে দ্রুত সরিয়ে ফেলতে হবে। এরপর তার চেতনা, নিঃশ্বাস ও রক্তচলাচল স্বাভাবিক রয়েছে কিনা তা যাচাই করতে হবে।

শ্বাসকষ্ট হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা

পুড়ে যাওয়া অনেক রোগীর শ্বাসনালি ধোঁয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে তারা শ্বাস নিতে না পেরে বেহুঁশ হয়ে যেতে পারে। তাই প্রথম ধাপে অক্সিজেন সাপোর্ট, মুখে-মুখে শ্বাস (CPR) প্রয়োজনে দিতে হতে পারে। শ্বাসের কষ্ট বেশি হলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে পাঠানোই সবচেয়ে জরুরি।

পোড়া অংশের প্রাথমিক যত্ন

  • হালকা পোড়ার ক্ষেত্রে: ঠান্ডা পানি দিয়ে ১০-১৫ মিনিট জায়গাটি ধোয়া যেতে পারে।
  • গভীর পোড়ার ক্ষেত্রে: কোনো অবস্থাতেই সরাসরি পানি ঢালবেন না।
  • বরফ ব্যবহার নিষেধ, এটি ত্বককে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করে।
  • পোড়া অংশে তেল, ঘি, মাখন, মলম দেওয়া একদম নিষেধ। এতে ইনফেকশনের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
  • পোড়া স্থানে যদি কাপড় লেগে যায়, টেনে ছেঁড়ার চেষ্টা করা যাবে না। সম্ভব হলে আস্তে করে কেটে ফেলা ভালো।

বেদনানাশক ও তরল সরবরাহ

পোড়া রোগীর ব্যথা খুব বেশি হয়। তাই ব্যথানাশক ওষুধ দিতে হতে পারে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নয়। পাশাপাশি পোড়ার কারণে শরীরে তরলের ঘাটতি হয়। তাই সালাইন বা তরল পানীয় দিয়ে শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি।

ইনফেকশন রোধে সাবধানতা

পোড়া জায়গায় খুব সহজেই ইনফেকশন হয়। তাই রোগীকে রাখতে হবে পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত পরিবেশে। ব্যবহৃত কাপড়, গজ, ড্রেসিং সবকিছুই জীবাণুমুক্ত হওয়া দরকার। পোড়া অংশে হাত দেওয়ার আগে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। চাইলে হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার করা যায়।

বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর কেন জরুরি

যদি শরীরের অনেকাংশ পুড়ে যায়, তাহলে রোগীকে সাধারণ হাসপাতালে রাখলে চলবে না। তাকে বিশেষায়িত বার্ন ইউনিটে পাঠাতে হবে। বাংলাদেশে ঢাকা মেডিকেল কলেজে উন্নত বার্ন ইউনিট রয়েছে। সেখানে রোগীর:

  • ফ্লুইড ব্যালেন্স
  • ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণ
  • নিউট্রিশন ম্যানেজমেন্ট
  • স্কিন গ্রাফটিং প্রক্রিয়া
  • সাইকোলজিকাল সাপোর্ট
  • সবই আধুনিক উপায়ে পরিচালিত হয়।

মানসিক ট্রমা ও সাইকোলজিকাল সাপোর্ট

বিমান দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া অনেকেই পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারে (PTSD) ভোগেন। তারা আতঙ্কে থাকেন, ঘুমাতে পারেন না, স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে ব্যর্থ হন। তাই:

  • পরিবারের সহানুভূতি অত্যন্ত প্রয়োজন
  • নিয়মিত কাউন্সেলিং
  • প্রয়োজনে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
  • এসব পদক্ষেপ রোগীকে মানসিকভাবে স্বাভাবিক করতে সহায়তা করে।

খাদ্য ও পুষ্টির গুরুত্ব

পোড়া রোগীর শরীরে দ্রুত প্রোটিন, ভিটামিন, জিঙ্ক ইত্যাদি দরকার হয়। কারণ পোড়ার ফলে শরীর প্রচুর শক্তি হারায় এবং কোষ নষ্ট হয়। তাই রোগীকে সুষম খাদ্য দিতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসক সাপ্লিমেন্ট বা টিউব ফিডিং দিতে পারেন।

স্কিন গ্রাফট ও প্লাস্টিক সার্জারি

গভীর পোড়ার ফলে ত্বকের বিশাল অংশ নষ্ট হয়ে গেলে স্কিন গ্রাফটিং দরকার হতে পারে। এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া যেখানে শরীরের অন্য অংশের ত্বক নিয়ে পোড়া স্থানে বসানো হয়। পরে প্লাস্টিক সার্জারি করে সেই স্থানটি যতটা সম্ভব স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হয়।

পুনর্বাসন ও জীবনে ফিরে আসা

দীর্ঘদিন হাসপাতালে থেকে পোড়া রোগী শারীরিকভাবে কিছুটা স্বাভাবিক হলেও মানসিকভাবে এবং সামাজিকভাবে অনেক পিছিয়ে পড়েন। তাই তাদের জন্য প্রয়োজন:

  • পুনর্বাসন প্রোগ্রাম
  • হালকা কাজ শেখানো
  • আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনা
  • সরকার বা এনজিও’র সহায়তা

এসব পদক্ষেপ গ্রহণ করলে তারা আবারও জীবনের পথে ফিরতে পারেন।

পরিবারের ভূমিকা : পোড়া রোগীর পাশে পরিবারের সদস্যদের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তারা যেন রোগীকে বোঝায়, সহানুভূতি দেয় এবং তাকে নতুন করে বাঁচার সাহস জোগায়। কারণ পরিবারের স্নেহ ও উৎসাহই রোগীর সবচেয়ে বড় ওষুধ।

জনসচেতনতা ও প্রস্তুতি : বিমান দুর্ঘটনার পর সাধারণ মানুষ কীভাবে দগ্ধ রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেবেন, সেটি জানা সবার উচিত। এজন্য:

  • জনসচেতনতা বাড়ানো
  • স্কুল, কলেজে সচেতনতামূলক ক্লাস
  • ফায়ার সার্ভিস ও রেডক্রিসেন্ট প্রশিক্ষণ কর্মসূচি
  • মোবাইল অ্যাপ ও ই-গাইডলাইনের ব্যবস্থা
  • এসব উদ্যোগ দুর্ঘটনার পর অনেক জীবন রক্ষা করতে পারে।


বিমান দুর্ঘটনায় পুড়ে যাওয়া রোগীদের যত্ন শুধু একজন রোগীর প্রতি সহানুভূতির প্রকাশ নয়, এটি একটি মানবিক কর্তব্য। তাদের দ্রুত চিকিৎসা, সংক্রমণ রোধ, মানসিক সহায়তা, পরিবার ও সমাজের সমর্থন—সব কিছু মিলেই একজন রোগীকে জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারে। আমাদের সবার উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো, কারণ একদিন হয়তো আমাদেরও এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হতে পারে।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!