বার্ধক্য রোধ না করলেও নারীদের বয়স বাড়ার প্রক্রিয়াকে স্বাস্থ্যকর রাখতে সাহায্য করতে পারে কফি—সম্প্রতি এমন তথ্য উঠে এসেছে দীর্ঘমেয়াদি এক গবেষণায়।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের নেতৃত্বে পরিচালিত ওই গবেষণায় দেখা গেছে, মাঝ বয়সে নিয়মিত ক্যাফেইনসমৃদ্ধ কফি পান করা নারীদের বার্ধক্যে মানসিক ও শারীরিকভাবে তুলনামূলক বেশি সুস্থ থাকার সম্ভাবনা বাড়ায়।
৩২ বছর ধরে ৪৭ হাজার ৫১৩ জন নারীর ওপর চালানো গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দিনে গড়ে প্রায় তিন কাপ কফি পান করতেন, তাদের বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক সক্ষমতা, মানসিক স্থিতি এবং দীর্ঘমেয়াদি রোগ প্রতিরোধে সক্ষমতা ছিল তুলনামূলকভাবে বেশি।
তবে চা, ডিক্যাফ কফি বা ক্যাফেইনমুক্ত পানীয় থেকে এমন উপকারের প্রমাণ মেলেনি। উল্টো, ক্যাফেইনসমৃদ্ধ সফট ড্রিংক (যেমন কোলা) গ্রহণকারীদের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর বার্ধক্যের সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে।
গবেষণার পদ্ধতি ও ফলাফল
গবেষণায় অংশগ্রহণকারী নারীরা ‘নার্সেস হেলথ স্টাডি’র আওতায় ছিলেন। ১৯৮৪ সাল থেকে প্রতি চার বছর পরপর তাদের খাদ্যাভ্যাস, স্বাস্থ্য এবং জীবনযাপন সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। কফি, চা, কোলা ও ডিক্যাফ কফির মাধ্যমে তাদের ক্যাফেইন গ্রহণের পরিমাণ পরিমাপ করেন গবেষকরা।
স্বাস্থ্যকর বার্ধক্য বলতে গবেষকরা বুঝিয়েছেন—৭০ বছর বা তার বেশি বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকা, মানসিক স্থিতি বজায় রাখা, কোনো স্মৃতিভ্রষ্টতা না থাকা, শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা এবং বড় ধরনের দীর্ঘমেয়াদি রোগ যেমন—ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, কিডনি বা হৃদরোগে আক্রান্ত না হওয়া।
২০১৬ সাল নাগাদ গবেষণায় অংশ নেওয়া নারীদের মধ্যে ৩ হাজার ৭০৬ জন এই শর্তগুলো পূরণ করেন। এদের বেশিরভাগই দিনে গড়ে প্রায় ৩১৫ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন গ্রহণ করতেন, যা প্রায় তিন কাপ সাধারণ কফির সমান।
কফির উপকারিতা ও সীমাবদ্ধতা
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন এক কাপ অতিরিক্ত কফি পান করলে বার্ধক্যে সুস্থ থাকার সম্ভাবনা ২ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ে। এই উপকারিতা দিনে সর্বোচ্চ পাঁচ কাপ কফি পর্যন্ত পাওয়া যায়।
অন্যদিকে, প্রতিদিন একটি অতিরিক্ত ফিজি ড্রিংক বা সফট ড্রিংকস গ্রহণ করলে এই সম্ভাবনা ২০ থেকে ২৬ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।
গবেষক দলের সদস্য ড. সারা মাহদাভি বলেন, ‘এটাই প্রথম গবেষণা যেখানে দীর্ঘমেয়াদে নারীদের বয়স বৃদ্ধির বিভিন্ন দিক একসঙ্গে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। পূর্ববর্তী গবেষণায় কফির স্বাস্থ্য উপকারিতা আলাদাভাবে উঠে এলেও, এই গবেষণায় সামগ্রিক প্রভাব দেখা গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গবেষণার এই ফলাফল প্রাথমিক হলেও এতে প্রমাণ মিলেছে যে ছোট ছোট অভ্যাস—যেমন নিয়মিত কফি পান—দীর্ঘমেয়াদে ইতিবাচক স্বাস্থ্যপ্রভাব ফেলতে পারে।’
সতর্কতা ও পরামর্শ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দিনে দুই কাপ পর্যন্ত কফি পান বেশিরভাগ মানুষের জন্য নিরাপদ। তবে কারও জন্য অতিরিক্ত কফি পান নেতিবাচক প্রভাব ফেলতেও পারে। এনএইচএস (NHS) বলছে, অধিকাংশ বয়স্ক মানুষের জন্য দিনে প্রায় ৪০০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন—অর্থাৎ চার কাপ পর্যন্ত কফি—নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত।
গবেষকরা ভবিষ্যতে কফির নির্দিষ্ট যৌগ কীভাবে নারীদের জিনগত ও শারীরিক চিহ্নে প্রভাব ফেলে তা নিয়ে আরও বিশদ গবেষণার পরিকল্পনা করছেন।