এমন অনেকেই আছেন যারা ঝাল মরিচ খেতে পছন্দ করেন। আবার অনেকে বলেন, বেশি ঝাল স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাহলে সত্যি কি ঝাল মরিচ খাওয়া বিপজ্জনক? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছে বিবিসি, যেখানে বিশেষজ্ঞরা মরিচে থাকা ক্যাপসাইসিন নামক একটি উপাদানের নানা দিক ব্যাখ্যা করেছেন।
ক্যাপসাইসিন কী এবং কেন এটি ঝাল?
মরিচের ঝাল আসলে আসে ‘ক্যাপসাইসিন’ নামের এক প্রাকৃতিক উপাদান থেকে। এটি মরিচের ভেতরে থাকা এমন এক রসায়নিক, যা জিভে বা চোখে লাগলে জ্বালাপোড়া করে। মরিচে প্রায় ২৩ ধরনের ক্যাপসাইসিন জাতীয় উপাদান পাওয়া যায়, যার মধ্যে সবচেয়ে তীব্র হলো ক্যাপসাইসিন নিজেই।
কিছু দেশ যেমন যুক্তরাজ্য, খাবারে খাঁটি ক্যাপসাইসিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে, কারণ এটি নিরাপদ নয় বলে মনে করা হয়। তবে মরিচের প্রাকৃতিক ঝাল ঠিক কতটা পরিমাণে গ্রহণযোগ্য, সে বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম নেই।
বেশি ক্যাপসাইসিন খেলে কী হতে পারে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিরিক্ত ঝাল খাবার খেলে কিছু অস্বস্তিকর লক্ষণ দেখা দিতে পারে যেমন:
পেট বা বুক জ্বালাপোড়া, বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া, তীব্র মাথাব্যথা, ব্লাড প্রেশার ওঠানামা এবং ঠান্ডা ঘাম।
এই উপসর্গগুলো বেশি ক্যাপসাইসিন খাওয়ার ফলে হতে পারে, তবে সবার শরীরে প্রতিক্রিয়া এক রকম হয় না। কারো ক্ষেত্রে ঝাল খাওয়ার পর শরীর এসব উপসর্গ সামলে নিতে পারে, আবার কারও ক্ষেত্রে তা গুরুতর অবস্থায় পৌঁছাতে পারে।
ঝাল মরিচ কি শরীরের জন্য খারাপ? জানুন বিশেষজ্ঞদের মতামত
জার্মানির বার্লিনে এক ব্যক্তি ঝাল মরিচ খাওয়ার প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। তিনি কয়েকটি ‘ভুট জোলোকিয়া’ বা ‘নাগা মরিচ’ খেয়েছিলেন, যা পৃথিবীর অন্যতম ঝাল মরিচ। এর কয়েক ঘণ্টা পর তার পেটে তীব্র ব্যথা ও ফোলাভাব শুরু হয় এবং হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। তবে চিকিৎসকরা অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা পাননি, শুধু ব্যথার কারণে ওষুধ দেন। ১২ ঘণ্টার মধ্যে তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন।
শিশু ও দুর্বল স্বাস্থ্যের মানুষের জন্য সতর্কতা
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ছোট বাচ্চা বা দুর্বল স্বাস্থ্যের মানুষের জন্য অতিরিক্ত ক্যাপসাইসিন বিপজ্জনক হতে পারে। যদিও ঠিক কতটুকু ক্যাপসাইসিন খেলে প্রাণঘাতী হতে পারে তা জানা যায়নি, ধারণা করা হয় প্রতি কেজি শরীরের ওজনের জন্য ৫০০ থেকে ৫০০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত ক্যাপসাইসিন বিপজ্জনক হতে পারে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যদি কারও ওজন ৭০ কেজি হয়, তাহলে তাকে প্রায় ৩৫,০০০ মিলিগ্রাম ক্যাপসাইসিন খেতে হবে প্রাণঘাতী পর্যায়ে পৌঁছাতে। এক্ষেত্রে সাধারণ মরিচ দিয়ে সেই মাত্রা ছোঁয়া খুব কঠিন।
গবেষণা যা বলছে
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যাপসাইসিন ইঁদুরের শরীরে ক্যান্সার তৈরি করতে পারে এবং মানুষের পাকস্থলিতে অল্প মাত্রার রক্তপাতের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার কিছু গবেষণায় এসবের কোনো প্রমাণ মেলেনি।
২০২২ সালের একটি বিশ্লেষণ বলছে, মশলাদার খাবার বা কাঁচামরিচ স্বাস্থ্যের উপকার বা অপকার—দুটোরই পরিষ্কার কোনো প্রমাণ নেই। তবে এখন পর্যন্ত পাওয়া গবেষণাগুলোর মান খুব উচ্চমানের নয় বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
মরিচ কি সত্যিই প্রাণঘাতী?
নিউ মেক্সিকো স্টেট ইউনিভার্সিটির মরিচ গবেষক অধ্যাপক পল বোসল্যান্ড বলেন, ‘মরিচ খেয়ে কি মারা যাওয়া সম্ভব? এর কোনো সহজ উত্তর নেই। তত্ত্বগতভাবে সম্ভব হলেও, বাস্তবে তার আগে শরীর সাড়া দিয়ে ঝাল খাবার থেকে নিজেকে রক্ষা করে ফেলে।’
অনেক সময় অতিরিক্ত ঝাল খেয়ে মানুষ বমি করে, ঘাম ঝরে, মাথা ঘুরে যায় বা দুর্বল হয়ে পড়ে। তবে এটি বেশির ভাগ সময়ই সাময়িক এবং কিছুক্ষণ পর ভালো হয়ে যায়।
ঝাল মরিচ খাওয়া মানেই বিপদ—এমনটা ভাবার দরকার নেই। তবে অতিরিক্ত খাওয়া বা প্রতিযোগিতার মতো অনিয়ন্ত্রিত উপায়ে খাওয়া ঠিক নয়, বিশেষ করে যদি আপনার শরীর ঝাল সহ্য না করতে পারে। আর যদি ঝাল খাওয়ার পর অস্বাভাবিক কোনো উপসর্গ দেখা দেয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই ভালো।
মনে রাখবেন, ঝাল মরিচ আমাদের শরীরের জন্য তেমন ক্ষতিকর নয়, তবে অতিরিক্ত ক্যাপসাইসিন খেলে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। শরীরের সামর্থ্য অনুযায়ী ঝাল খাওয়া নিরাপদ—বাট সবকিছুরই একটা পরিমাণ থাকা জরুরি।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন