ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১৩ জুন রাত থেকে ইসরায়েলের ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ইরানে ৪৩০ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন প্রায় ৩ হাজার ৫০০ জন।
তবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ‘হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস নিউজ এজেন্সি’ এই সংখ্যা আরও বেশি বলে জানিয়েছে। তাদের দাবি, ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা কমপক্ষে ৬৩৯।
উল্টো দিকে ইসরায়েল বলছে, ইরানের পাল্টা হামলায় এখন পর্যন্ত তাদের দেশে নিহত হয়েছেন ২৫ জন, যাদের মধ্যে একজন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। আহত হয়েছেন ২ হাজার ৫১৭ জনের বেশি।
শুক্রবার রাতে ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস-৩’ নামে ইরান পাল্টা হামলা শুরু করে। ইরানি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে, যার মধ্যে রয়েছে সামরিক ঘাঁটি, তেলভিত্তিক স্থাপনা ও ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের আবাসিক এলাকা।
প্রথম দফায় হামলার সময় ইসরায়েল ইরানের রাজধানী তেহরান, নতাঞ্জ, ইসফাহানসহ একাধিক সামরিক ও পরমাণু গবেষণা কেন্দ্রে বোমা ও ড্রোন হামলা চালায়। এতে ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি, ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) প্রধান কমান্ডার হোসেইন সালামি এবং বিপ্লবী রক্ষীবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা মেজর জেনারেল গোলাম আলি রশিদসহ ছয়জন পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে ইরান।
উভয় পক্ষের এভাবে ক্রমাগত হামলা পাল্টা হামলায় আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ বাড়ছে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন ও রাশিয়া শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে।
তবে যুদ্ধ থামানোর কোনো লক্ষণ নেই। বরং যুক্তরাষ্ট্র গোপনে গুয়ামে বি-২ স্টেলথ বোম্বার মোতায়েন করেছে, যা নতুন করে ইরানকে লক্ষ্য করে সামরিক প্রস্তুতির ইঙ্গিত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
এই মুহূর্তে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে একাধিক আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাস করছেন হাজারো ইসরায়েলি নাগরিক।
তেহরানেও জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। দুই দেশের অর্থনীতি, জনজীবন এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক তীব্র সংকটের মুখে পড়েছে।
এই যুদ্ধের ফলে আন্তর্জাতিক তেলবাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। দক্ষিণ এশিয়ায় জ্বালানি আমদানিনির্ভর দেশগুলোর ওপর বাড়ছে চাপ। রাজনৈতিক অঙ্গনে শঙ্কা দেখা দিয়েছে আরও বড় ধরনের যুদ্ধ বা অঞ্চলজুড়ে সামরিক জোট-সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার।
তেহরান ও তেলআবিব- দুই রাজধানীতেই এখন টানা যুদ্ধাবস্থার প্রস্তুতি। সংলাপের দরজা খুলছে না বরং প্রতিশোধের হুমকি আরও ঘনীভূত হচ্ছে।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, রয়টার্স, আল জাজিরা, ইসরায়েল টাইমস, প্রেস টিভি, এইচআরএনএ, ইউএন নিউজ
আপনার মতামত লিখুন :