কোরবানির পশুর চামড়া ইসলামে একটি দানযোগ্য সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয়। এই চামড়া গরিব, মাদ্রাসা বা ইসলামী প্রতিষ্ঠানে দান করা যায়, তবে সংরক্ষণ না জানলে তা দ্রুত নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এ জন্য কোরবানির সময় চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণে সঠিক নিয়ম জানা অত্যন্ত জরুরি।
জবাইয়ের পরপরই চামড়া ছাড়ানো
চামড়া সংগ্রহের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হচ্ছে- পশু জবাইয়ের কিছুক্ষণের মধ্যেই। বেশি দেরি করলে চামড়ার নিচে রক্ত জমে যায়, এতে গন্ধ ও পচন ধরার আশঙ্কা থাকে। চামড়া ছাড়াতে গিয়ে যেন ছেঁড়া বা কাটা না পড়ে- না হলে তা বাজারে কমদামে বিক্রি হবে কিংবা কেউ নিতে চাইবে না।
রক্ত ও মাংস পরিষ্কার করা
চামড়া ছাড়ানোর পর ভালোভাবে রক্ত, চর্বি ও মাংসের টুকরো পরিষ্কার করে নিতে হবে। এতে ব্যাকটেরিয়া কমবে এবং চামড়া ভালো থাকবে। চাইলে পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে পারেন, তবে এরপর রোদে হালকা শুকিয়ে নিতে হবে, যেন ভেজা না থাকে।
লবণ দিয়ে সংরক্ষণ
লবণ দেওয়া চামড়া সংরক্ষণের সবচেয়ে কার্যকর ও সহজ উপায়। চামড়ার পশম ছাড়া অংশে প্রতি বর্গফুটে ৫০–১০০ গ্রাম লবণ ছিটিয়ে দিন। ভালোভাবে চেপে দিয়ে মুড়িয়ে রাখুন।
২৪–৪৮ ঘণ্টা পর আবার চেক করে প্রয়োজনে আরও লবণ দিন। এই পদ্ধতিতে চামড়া ৭–১০ দিন পর্যন্ত ভালো রাখা সম্ভব, বিশেষ করে গরম আবহাওয়ায়।
শুষ্ক ও ছায়াযুক্ত স্থানে রাখা
চামড়া এমন স্থানে রাখুন, যেখানে সূর্যের আলো সরাসরি পড়ে না, আবার বাতাস চলাচল থাকে। ভেজা ও ঘামযুক্ত জায়গা বা এমন স্থানে রাখবেন না, যেখানে গবাদি পশু বা পোকামাকড়ের সংক্রমণ হতে পারে।
চামড়া সংরক্ষণের সময় সতর্কতা
পলিথিন বা প্লাস্টিকে মুড়িয়ে রাখবেন না, এতে চামড়া পচে যেতে পারে। চামড়া সংরক্ষণে ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহার করবেন না। শুধু লবণ যথেষ্ট। অনেক চামড়া একসাথে স্তূপ করে রাখলে পঁচে যেতে পারে, তাই চামড়ার মাঝখানে বাতাস চলাচলের জায়গা রাখতে হবে।
কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণের সঠিক নিয়ম জানা যেমন পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য জরুরি, তেমনি এটি ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এই চামড়া সদকা হিসেবে গরিবদের হক এবং নষ্ট হয়ে গেলে এই হক আদায় হয় না।
তাই যত্নসহকারে, লবণ দিয়ে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চামড়া সংরক্ষণ করা প্রতিটি সচেতন মুসলমানের দায়িত্ব।