ঢাকা বুধবার, ০৪ জুন, ২০২৫

গরুর দুধের যত গুণ

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ২, ২০২৫, ১১:৫৭ এএম
গরুর দুধ। ছবি: সংগৃহীত

দুধ ছাড়া সুষম খাদ্য তালিকা অসম্পূর্ণ। শিশুদের মতো অনেক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরও দুধ অপছন্দ। কেউ কেউ কেবল ভাতের সঙ্গে দুধ-কলা খেতে পছন্দ করেন। তবে খালি এক গ্লাস দুধ পানের ক্ষেত্রে তারা একেবারেই নারাজ। কিন্তু এই দুধকে বলা হয় সুপার ফুড বা সর্বগুণ সম্পন্ন খাবার।

গরুর দুধের পুষ্টিগুণ

প্রোটিন: গরুর দুধে উচ্চমানের প্রোটিন থাকে, যা দেহের কোষ গঠন, পেশি বৃদ্ধি এবং ক্ষত সারাতে সহায়তা করে। প্রতি ১০০ গ্রাম গরুর দুধে প্রায় ৩.২ গ্রাম প্রোটিন থাকে।

ক্যালসিয়াম: হাড় ও দাঁতের গঠনে ক্যালসিয়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গরুর দুধ ক্যালসিয়ামের অন্যতম উৎকৃষ্ট উৎস। প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ হাড় ক্ষয় (অস্টিওপোরোসিস) প্রতিরোধে সহায়তা করে।

ভিটামিন: গরুর দুধে রয়েছে ভিটামিন এ, ডি, বি২ (রাইবোফ্ল্যাভিন), ও বি১২।
 
মিনারেল: দুধে রয়েছে পটাসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, হৃদ্যন্ত্রের কাজ, ও কোষের কার্যকারিতা ঠিক রাখতে সাহায্য করে।

চর্বি: গরুর দুধে প্রাকৃতিক স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, যা শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে। তবে যাদের কোলেস্টেরলের সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য লো-ফ্যাট দুধ উপযোগী।

ল্যাকটোজ: এটি একটি প্রাকৃতিক দুধ শর্করা, যা শরীরকে দ্রুত শক্তি দেয়। তবে যারা ল্যাকটোজ ইনটলারেন্ট, তাদের জন্য গরুর দুধ হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

কখন দুধ খাওয়ার উপযুক্ত সময়? 

দুধ পানের সবচেয়ে উপযুক্ত সময় বিকেল। ভালো হজমের জন্য লাঞ্চ করার দুই ঘণ্টা পর দুধ পান করলে সবচেয়ে ভালো হয়। দুধ যেহেতু ভারী খাবার এটি রাতে না খাওয়াই ভালো। রাতে দুধ খেলে হজমের জন্য সময় পায় না।

গরুর দুধের উপকারিতা বহু ও বহুমাত্রিক। এটি একটি প্রাকৃতিক এবং সহজলভ্য পুষ্টিকর পানীয়, যা শিশুর বেড়ে ওঠা থেকে শুরু করে বয়স্কদের হাড় মজবুত রাখার মতো বিভিন্ন শারীরিক উপকারে আসে।

গরুর দুধের উপকারিতা

হাড় ও দাঁত মজবুত করে: গরুর দুধে রয়েছে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং ভিটামিন D, যা হাড় ও দাঁত গঠনে সাহায্য করে এবং অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করে।

পেশি গঠনে সহায়ক: দুধে উচ্চমানের প্রোটিন থাকে, যা পেশির গঠন ও মেরামতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে— বিশেষ করে শিশু, কিশোর ও খেলোয়াড়দের জন্য।

মানসিক চাপ ও ঘুমে সহায়ক: গরুর দুধে ট্রিপটোফ্যান নামক একটি অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে, যা মস্তিষ্কে সেরোটোনিন উৎপাদনে সহায়তা করে এবং ঘুম ভালো হতে সাহায্য করে।

হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে: দুধে থাকা পটাসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে ভূমিকা রাখে।

ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী: ভিটামিন এ, বি এবং দুধে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ত্বককে উজ্জ্বল রাখতে ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।

রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: দুধে থাকা ভিটামিন বি১২ ও জিংক রোগপ্রতিরোধে সহায়তা করে। নিয়মিত দুধ খেলে সর্দি-কাশি ও সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে ওঠে।

পাচনতন্ত্রের উন্নতি ঘটায়: পাস্তুরাইজড গরুর দুধে প্রাকৃতিকভাবে থাকা কিছু উপকারী ব্যাকটেরিয়া হজমে সহায়ক।

বাচ্চাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সহায়ক: বাচ্চাদের বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নয়নে দুধে থাকা ভিটামিন B গ্রুপ, বিশেষ করে বি১২, গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

গর্ভবতী নারীদের জন্য উপকারী: গর্ভাবস্থায় দুধ খাওয়া ভ্রূণের হাড়ের গঠন, মস্তিষ্কের বিকাশ এবং মায়ের জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টি নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।

গরুর দুধ যতটা উপকারী, কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি অপকারিতাও ডেকে আনতে পারে। বিশেষত যাদের শরীর বিশেষভাবে সংবেদনশীল বা নির্দিষ্ট কিছু রোগ-সমস্যা রয়েছে।

গরুর দুধের অপকারিতা

ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স: অনেক মানুষ দুধে থাকা প্রাকৃতিক চিনি ‘ল্যাকটোজ’ হজম করতে পারেন না। এতে গ্যাস, পেট ফাঁপা, ডায়রিয়া ও পেটব্যথার মতো সমস্যা হয়। লক্ষণ: দুধ খাওয়ার পর পেটের অস্বস্তি, বমি বা গ্যাস।

অ্যালার্জি: বাচ্চাদের মধ্যে গরুর দুধের প্রোটিনে অ্যালার্জি দেখা যেতে পারে। এতে ত্বকে র‍্যাশ, সর্দি, হাঁচি বা শ্বাসকষ্ট হতে পারে। অনেক শিশু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই অ্যালার্জি কাটিয়ে ওঠে।

চর্বি ও কোলেস্টেরল বৃদ্ধি: গরুর দুধে স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা সম্পৃক্ত চর্বি বেশি থাকে, যা অতিরিক্ত খেলে কোলেস্টেরল বাড়াতে পারে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। উচ্চ রক্তচাপ বা হার্টের রোগীদের জন্য ফুল-ফ্যাট দুধ বর্জনীয়।

অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম কিডনিতে জমা হতে পারে: অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণে কিডনিতে ক্যালসিয়াম জমে পাথর তৈরি হতে পারে। যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য নির্দিষ্ট মাত্রার বেশি দুধ খাওয়া উচিত নয়।

হরমোন ও অ্যান্টিবায়োটিকের প্রভাব: বর্তমানে কিছু দুগ্ধ খামারে গরুকে বেশি দুধ দেওয়ার জন্য হরমোন বা অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হয়। এইসব উপাদান মানুষের শরীরে হরমোন ভারসাম্যহীনতা তৈরি করতে পারে।

পাচন সমস্যা: কিছু মানুষের হজমশক্তি দুর্বল থাকলে দুধ তাদের জন্য হজমে সমস্যা তৈরি করে, বিশেষ করে কাঁচা বা অপর্যাপ্তভাবে ফোটানো দুধ।

ওজন বৃদ্ধি: প্রতিদিন বেশি পরিমাণ ফুল-ক্রিম দুধ খেলে শরীরে ক্যালরি ও ফ্যাট জমে ওজন বেড়ে যেতে পারে।