সিরিয়ার জনগণ এক দশকেরও বেশি সময় আগে যখন বাশার আল-আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করেছিল, তখন তাদের অন্যতম প্রধান দাবি ছিল অবাধ নির্বাচনের অধিকার। প্রায় ১৪ বছরের বিধ্বংসী যুদ্ধ শেষে আসাদের বিদায়ের মধ্য দিয়ে দেশটি এখন প্রবেশ করেছে ভঙ্গুর পরিবর্তনের এক নতুন অধ্যায়ে।
যদিও দেশব্যাপী সরাসরি অবাধ নির্বাচন আয়োজনের মতো প্রস্তুতি এখনও নেই। সিরিয়ানরা প্রথমবারের মতো পরোক্ষ ও সীমিত আকারে হলেও নির্বাচনি প্রক্রিয়ার অভিজ্ঞতা নিতে যাচ্ছে। দেশটিতে ১৫ থেকে ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সাংবিধানিক ঘোষণার আওতায় পাঁচ বছরের জন্য একটি নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সংসদ গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সরাসরি নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত এই সংসদই আইনসভা পরিচালনা করবে। সংসদের মোট ২১০ আসনের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ সদস্য সরাসরি প্রেসিডেন্ট দ্বারা নিযুক্ত হবেন। বাকি দুই-তৃতীয়াংশ আসন পূরণ হবে নির্বাচন কমিটির তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত পরোক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে।
এ লক্ষ্যে নির্বাচন কমিটি দেশজুড়ে ৬০টি নির্বাচনি অঞ্চল গঠন করেছে। প্রতিটি অঞ্চল থেকে তিনজন করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন। জনসংখ্যা ছয় লাখের বেশি হলে প্রতি অতিরিক্ত আড়াই লাখ বাসিন্দার জন্য আরও তিনজন সংসদ সদস্য নির্বাচনের সুযোগ থাকবে। উদাহরণস্বরূপ, দামেস্ক থেকে মোট ৯ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন।
প্রতিটি নির্বাচনি অঞ্চলে একটি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি প্রতিনিধি প্রার্থীদের আবেদন সংগ্রহ করছে এবং প্রাথমিক বাছাইয়ের দায়িত্ব পালন করছে। সাধারণভাবে, প্রতিটি অঞ্চলে প্রায় ১৫০ জন প্রতিনিধি থাকবেন, তবে দামেস্কের মতো বড় অঞ্চলে এ সংখ্যা ৪৫০ জন পর্যন্ত। এই প্রতিনিধিরা নির্দিষ্ট মানদণ্ডে নির্বাচিত হচ্ছেন।
মানদণ্ড অনুযায়ী ২০ শতাংশ প্রতিনিধি নারী এবং ৩ শতাংশ প্রতিবন্ধী হতে হবে। পাশাপাশি, ৭০ শতাংশ প্রতিনিধি পেশাজীবী শ্রেণি (যেমন শিক্ষক, প্রকৌশলী ও গবেষক) থেকে আসবেন। বাকি ৩০ শতাংশ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, উপজাতি নেতা কিংবা এনজিও প্রতিনিধিদের মধ্য থেকে মনোনীত হবেন।
বর্তমানে প্রাথমিক প্রতিনিধি নির্বাচনের ধাপ শেষ হয়েছে। সিরিয়ান নাগরিকদের জন্য তিন দিনের মধ্যে অভিযোগ বা আপত্তি জানানোর সুযোগ রাখা হয়েছে। আপত্তি নিষ্পত্তির পর প্রতিটি অঞ্চল থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা নিজেদের মধ্য থেকে সংসদীয় প্রার্থী মনোনয়ন করবেন। এরপর সীমিত প্রচারণা শেষে প্রতিনিধিদের ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচন সম্পন্ন হবে।
তবে এই প্রক্রিয়া এখনও অনেক সীমাবদ্ধতায় ঘেরা। দেশজুড়ে রাজনৈতিক ও সামরিক অস্থিরতার কারণে হাসাকেহ, রাক্কা ও সুইদার বাসিন্দারা এই নির্বাচনি প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়েছেন। ফলে পুরো জাতি এতে অংশ নিতে পারছে না।
তবুও বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি আসাদ-পরবর্তী যুগে সিরিয়ার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের পর রাজনৈতিক পুনর্গঠনের যে প্রয়াস শুরু হয়েছে, তা নিখুঁত না হলেও দেশের জনগণের জন্য প্রথমবারের মতো আংশিক নির্বাচনি অংশগ্রহণের বাস্তব অভিজ্ঞতা এনে দিচ্ছে।