ঢাকা বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

‘স্থগিতের চেষ্টা হলেও সরকার নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন নিশ্চিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ’

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৫, ০৭:৪০ পিএম
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্যদের প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। ছবি- সংগৃহীত

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও উৎসবমুখর নির্বাচন আয়োজনের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, কিছু শক্তি এখনও নির্বাচন স্থগিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তবুও অন্তর্বর্তী সরকার নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী নির্বাচন নিশ্চিত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় মৌনির সাতুরির নেতৃত্বাধীন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যদের (MEPs) একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে এই মন্তব্য করেন প্রধান উপদেষ্টা। এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।

ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা করেছি। রমজানের ঠিক আগে ফেব্রুয়ারির শুরুতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমাদের লক্ষ্য একটি স্বচ্ছ ও উৎসবমুখর নির্বাচন নিশ্চিত করা।’

তিনি আরও বলেন, ‘তিন দশকেরও বেশি সময় পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংগঠনের নির্বাচন শুরু হওয়ায় জনসাধারণের মধ্যে, বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে উৎসাহ ক্রমবর্ধমান। ১৫ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে প্রথমবারের মতো অনেক তরুণ ভোট দেবেন। এটি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য একটি নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে।’

ড. ইউনূস আশা প্রকাশ করেন, ‘ফেব্রুয়ারির নির্বাচন দেশের জন্য একটি নতুন সূচনার দিক নির্দেশ করবে। এটি আমাদের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় চিহ্নিত করবে, যা জাতির জন্য একটি নতুন যাত্রার সূচনা হিসেবে বিবেচিত হবে।’

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ও ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধি দল সরকারের সংস্কার উদ্যোগ, বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন, গণতান্ত্রিক উত্তরণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অব্যাহত সমর্থন এবং চলমান রোহিঙ্গা মানবিক সংকট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।

একজন আইনপ্রণেতা বলেন, ‘গত ১৪ মাসে প্রধান উপদেষ্টা ও তার দলের প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়। আসন্ন নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হতে পারে।’

একজন ডাচ এমইপি মন্তব্য করেন, ‘বাংলাদেশ এমন কয়েকটি দেশের মধ্যে থাকতে পারে যেখানে সবকিছু সঠিক পথে এগোচ্ছে। এটি সত্যিই প্রশংসনীয়।’

ড. ইউনূস ইউর’র অবিচল সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশে বসবাসরত ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য আর্থিক ও মানবিক সহায়তা বাড়ানো দরকার। বিশেষ করে ক্যাম্পগুলোতে স্কুলগুলো পুনরায় চালু করতে সহায়তা করা জরুরি, যা সম্প্রতি ত্রাণের ঘাটতির কারণে বন্ধ হয়েছে।’

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী অন্তর্বর্তী সরকারের বাস্তবায়নাধীন শ্রম সংস্কারের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, ‘এসব পদক্ষেপ বাংলাদেশ-ইইউ সম্পর্ক জোরদারে সহায়ক হবে এবং দেশের উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করবে।’

ড. ইউনূসের এই বক্তব্য স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত করছে যে, সরকারের লক্ষ্য শুধুমাত্র নির্বাচন করা নয়, বরং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বজায় রেখে দেশের নতুন প্রজন্মের জন্য একটি স্থিতিশীল ও উত্তেজনামুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করা।